আয়না২৪ সংবাদদাতা
ডায়াবেটিসকে বলা হয় নীরব ঘাতক। বিশ্বের বহু মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। দেহযন্ত্র অগ্ন্যাশয় যদি যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে না পারে অথবা শরীর যদি উৎপন্ন ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হয়, তাহলে যে রোগ হয় তা হলো ‘ডায়াবেটিস’ বা ‘বহুমূত্র রোগ’। মানুষের মাঝে এ রোগ নিয়ে বহু ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। আসুন জেনে নেই বহুমূত্র রোগ সম্পর্কে কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা এবং আসল তথ্য।
১। ডায়াবেটিকদের মিষ্টি খাওয়া সম্পূর্ণ বারণ
কখনই নয়। নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে মিষ্টি সকলেই খেতে পারেন। তবে ডায়াবেটিস না থাকলেও বেশি মিষ্টি খাওয়া উচিত নয়।
২। তিতা স্বাদযুক্ত খাবার রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ হ্রাস করে
তিতা স্বাদযুক্ত খাবার রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ হ্রাস করে বলে মনে করেন সবাই। এ করণে করলা বা নিম বা অন্যান্য তিতা খাবার খান। এটা ভুল একটি ধারণা। আসল তথ্যটি হলো, রক্তের গ্লুকোজ বৃদ্ধি পায় কার্বোহাইড্রেটপূর্ণ খাবার থেকে। এমনকি সেগুলো মিষ্টি না হলেও গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
৩। ডায়াবেটিস রোগীরা ফল খেতে পারেন না
এটাও একটা ভুল ধারণা। আসল তথ্য হলো, ডায়াবেটিস রোগীরা ফল খেতে পারবেন। কারণ এতে ফাইবার রয়েছে। তাই ফ্রুকটোজ খুব ধীরে রক্তে মেশে। আর ইনসুলিন ছাড়াই আমাদের দেহ ফ্রুকটোজকে কাজে লাগাতে পারে। তবে ফলের জুস খাওয়া উচিত নয়। কারণ জুসে ফাইবার থাকে না। এ কারণে কলা, আম, আঙ্গুর, আখ এবং পিষে ফেলা আপেল খাওয়া ঠিক নয়।
৪। ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা কখনই রক্তদান করতে পারেন না
শুধুমাত্র যারা ইনসুলিন ইঞ্জেকশন নেন তারা রক্তদান করতে পারেন না। বাকিদের ক্ষেত্রে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকলে অবশ্যই রক্তদান করতে পারেন।
৫। ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা কখনই রক্তদান করতে পারেন না
শুধুমাত্র যারা ইনসুলিন ইঞ্জেকশন নেন তারা রক্তদান করতে পারেন না। বাকিদের ক্ষেত্রে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকলে অবশ্যই রক্তদান করতে পারেন।
৬। ডায়াবেটিকদের সব সময় নিয়ন্ত্রিত খাওয়া উচিত ও কম পরিশ্রম করা উচিত
নিয়ম মেনে চললে ও রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকলে ডায়াবেটিকরাও অন্যদের মতোই পরিশ্রম করতে পারেন।
৭। ডায়াবেটিস রোগীরা বাইরে খাওয়া থেকে বিরত থাকেন
ভুল ধারণা থেকেই এ কাজটি করেন তারা। ডায়াবেটিস রোগীরাও যেকোনো রেস্টুরেন্টে খেতে পারেন।
৮। ডায়াবেটিস ধরা পড়লে স্টার্চ জাতীয় খাবার একেবারেই বাদ দিতে হবে
ডায়েটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ স্টার্চ। তাই কখনই ডায়েট থেকে সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া উচিত নয়। কম পরিমাণে অবশ্যই খান।
৯। ডাক্তার ইনসুলিন নিতে বলেছেন মানে রোগী যথেষ্ট নিয়ম মেনে চলেন না
T2D রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা কমিয়ে দেয়। ফলে নিয়মিত ওষুধ খেলেও একটা সময়ের পর ইনসুলিন নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
১০। ইন্সুলিন শেষ চিকিৎসা
ব্যপারটা এমন নয় যে ইন্সুলিন দেয়া হচ্ছে মানে আপনার অবস্থা খুব জটিল। ইন্সুলিন একজন ডায়াবেটিস রোগীর জীবনে যে কোন সময়েই লাগতে পারে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায়, যেকোন বড় অস্ত্রপাচারের আগে-পরে, কোন গুরুতর রোগে হাসপাতালে থাকাকালীন বা মারাত্মক কোনো সংক্রমনের সময়, কিডনি বা যকৃতের ইত্যাদি জটিলতায় ইন্সুলিনই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ চিকিৎসা। এ ছাড়া কোনো কারণে রক্তে শর্করা অনেক বেড়ে গেলেও ইন্সুলিন দরকার হয়।