ট্রাম্প শিবিরে আবার বিরোধ!

ডিসেম্বর ১৭, ২০১৬
Spread the love

  আয়না২৪ প্রতিবেদন

নির্বাচনী প্রচারের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি তাঁর মুগ্ধতার কথা গোপন রাখেননি। পুতিন শক্তিশালী প্রেসিডেন্ট এবং বারাক ওবামার থেকে বেশি জনপ্রিয়, এমন দাবিও তিনি করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াই করবেন, এমন আভাস দিয়েছিলেন ট্রাম্প। দেখা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরও তাঁর সেই মুগ্ধতা কমেনি। আর এর জের ধরে প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেওয়ার আগেই আরও এক দফা দলের নেতৃত্বের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছেন ট্রাম্প।

নিজের দলের অন্দরে আপত্তি আছে, তা জেনেও ট্রাম্প তাঁর বিদেশ সচিব হিসাবে পুতিনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বহুজাতিক তেল কোম্পানি এক্সন মোবিলের শীর্ষকর্তা রেক্স টিলারসনকে বেছে নিয়েছেন। রিপাবলিকান দলের তিন সেনেটর জন ম্যাককেইন, লিন্ডসে গ্রাহাম ও মার্কো রুবিও জানিয়েছেন যে, টিলারসনের ব্যাপারে তাঁদের আপত্তি আছে। সিনেটের বিদেশ সম্পর্কবিষয়ক কমিটির একাধিক ডেমোক্র্যাটিক দলের সদস্যও তাঁদের আপত্তির কথা বলেছেন। মন্ত্রী হিসাবে টিলারসনের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে হলে সবার আগে এই কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন পেতে হবে।

এক্সন মোবিলের প্রধান হিসাবে টিলারসন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছেন। প্রতিবেশী ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দখল করায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত পশ্চিমী দুনিয়ার অর্থনৈতিক অবরোধের কঠোর সমালোচক এই টিলারসন। অনেকের ধারণা, দায়িত্ব পেলে টিলারসন অবরোধ তুলে নিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন। কারণ, এতে তাঁর কোম্পানি ও নিজের ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

রুশ গোয়েন্দারা মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্পের পক্ষ নিয়ে সাইবার হামলা করেছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সেই প্রশ্নেও রিপাবলিকান নেতৃত্বের সঙ্গে ট্রাম্পের বিবাদ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রাশিয়ার কথিত হস্তক্ষেপের ব্যাপারে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ সম্প্রতি যে বিবৃতি দিয়েছে, ট্রাম্প তা হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্পকে সব বৈদেশিক গোয়েন্দা তথ্যের ব্যাপারে এই সিআইএ-র উপরই নির্ভর করতে হবে। তিনি সেই প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া তথ্য কোনও যুক্তি-প্রমাণ ছাড়া এক কথায় বাতিল করে দেওয়ায় বিরক্ত দলের রক্ষণশীল অংশ। রিপাবলিকান দলের বৈদেশিক নীতি এতদিন পর্যন্ত রুশ, বিশেষত পুতিন-বিরোধিতার উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। তাকে পুরোপুরি বাতিল করার ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। দলের দুই সেনেটর ম্যাককেইন ও লিন্ডসে গ্রাহাম ইতিমধ্যে মার্কিন নির্বাচনে সত্যিই রাশিয়ার হাত ছিল কি না, সে প্রশ্নে তদন্ত চেয়েছেন। সেনেটের নতুন ডেমোক্র্যাটিক নেতা চাক শ্যুমারের সঙ্গে এক যৌথ পত্রে তাঁরা এই তদন্তের আহ্বান করেছেন।

নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়া ঠেকাতে তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দিতে ইলেক্টোরাল কলেজের প্রায় ৩০ জন সদস্য প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন হার্ভার্ডের আইনের অধ্যাপক লেরি লেসিগ। নিজের ‘বিবেচনা অনুযায়ী’ ভোট দেওয়ার অধিকার রক্ষায় ওই ইলেক্টরদের আইনি সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছেন তিনি। এদের সংখ্যাটা ৩৭ ছুঁলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য জরুরি ২৭০-এর লক্ষ্য থেকে ট্রাম্প ছিটকে পড়তেও পারেন। তবে এখনও পর্যন্ত একমাত্র রিপাবলিকান ইলেক্টর, টেক্সাসের ক্রিস সাপার্ন প্রকাশ্যে বলেছেন, তিনি ১৯ ডিসেম্বর ইলেক্টোরাল কলেজের বৈঠকে ট্রাম্পকে ভোট দেবেন না।

এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর একসময়ের কড়া সমালোচক টেক্সাসের প্রাক্তন গভর্নর রিক পেরিকে জ্বালানিমন্ত্রী হিসাবে মনোনীত করেছেন। এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, টেক্সাসের গভর্নর হিসাবে রিক পেরি একটি ব্যাবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করেছিলেন। আমেরিকার পরিবেশবাদী সংগঠনগুলি এই সিদ্ধান্তের নিন্দা করেছে। সংগঠনগুলির আশঙ্কা, বিশ্বে উষ্ণতা বৃদ্ধির বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন রিক পেরি। তিনি ক্ষমতায় এলে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি থেকে সরে গিয়ে ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানির পথেই এগবেন।