আয়না ২৪ ক্রীড়া
বড় কোন দলীয় সাফল্য না পেলেও ব্যক্তিগত সাফল্যে রীতিমতো আকাশে উড়ছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। দারুণ এক অর্জনের সামনে গত কিছুদিন ধরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন এ পতুর্গিজ উইঙ্গার। কিন্তু গত কয়েক ম্যাচ ধরেই হবে-হচ্ছে বলে ব্যাপারটা ঝুলে ছিল। তাই কিছুটা হতাশাতেও ভুগছিলেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা। তবে গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে সেটা হয়েই গেল। জাতীয় দল এবং ক্লাব ক্যারিয়ার মিলিয়ে ৫০০ গোলের অবিস্মরণীয় মাইলফলকে পৌঁছে গেলেন পর্তুগাল অধিনায়ক। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে রিয়াল ২-০ গোলে হারায় সুইডিশ ক্লাব মালমোকে। দু’টি গোলই সিআর সেভেনের। তাতেই এ রেকর্ড। একই সঙ্গে রিয়ালের হয়ে রাউল গনজালেসের সর্বাধিক ৩২৩ গোলের রেকর্ডেও ভাগ বসিয়েছেন রোনালদো। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৭৫৩ ম্যাচে রিয়াল তারকার গোলসংখ্যা দাঁড়াল ৫০১।
ম্যাচ শেষে উৎফুল্ল রোনালদো রিয়ালের রেকর্ড আর ব্যক্তিগত মাইলফলক নিয়ে বলছিলেন, ‘এমন অর্জনের সামনে দাঁড়িয়ে আমি ছিলাম। এখন তা করায় আমি খুব খুশি। এ সংখ্যাটায় পৌঁছতে সাহায্য করার জন্য সব সতীর্থর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আর বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্লাবে রেকর্ড ভাঙাটা সত্যিই সম্মানের।’ এদিন গোলের আরেকটি ক্লাব রেকর্ড গড়েছেন রোনালদো। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে স্পেনের সবচেয়ে সফল ক্লাবটির হয়ে সর্বাধিক ৬৭টি গোলের মালিক এখন তিনিই। এতদিন এ রেকর্ডটিও ছিল ৬৬ গোল করা রাউলের অধিকারে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সর্বকালের সেরা গোলদাতাও এখন রোনালদো। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও রিয়ালের হয়ে ক্লাব ফুটবলের সেরা আসরে ৮২টি গোল তার। দ্বিতীয় সর্বাধিক ৭৭ গোল সিআর সেভেনের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড লিওনেল মেসির। ৭১ গোল নিয়ে এর পরই আছেন রাউল। রোনালদোর এ অর্জনকে স্বাগত জানিয়েছেন সাবেক স্প্যানিশ তারকা রাউল।
ম্যাচ শেষে রিয়ালের সাবেক অধিনায়কের অভিনন্দন পাওয়ার বিষয়টি জানান রোনালদো। কিছুটা উচ্ছ্বসিত ভঙ্গিতে তিনি বলেন, ‘আমার আরও গোল করার আশা ব্যক্ত করে রাউল আমাকে বার্তা পাঠিয়েছে।’ স্পোর্টিং লিসবন, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও রিয়ালের হয়ে ক্লাব ফুটবলে রোনালদোর সর্বমোট গোল ৪৪৬টি। এর মধ্যে স্বদেশের স্পোর্টিং লিসবনের হয়ে ৩১ ম্যাচে করেন ৫ গোল। ২০০৩-০৪ থেকে ২০০৮-০৯ মওসুম পর্যন্ত ম্যানইউর হয়ে সব ধরনের প্রতিযোগিতায় ২৯২ ম্যাচে করেন ১১৮ গোল। বাকি ৩২৩ গোল রিয়ালের হয়ে। পাশাপাশি পর্তুগাল অধিনায়ক নিজ দেশের হয়ে ১২২ ম্যাচে করেছেন ৫৫ গোল।
ইতিহাস গড়া ম্যাচে মালমোর বিপক্ষে ২-০ গোলের জয়ের দিনে জোড়া গোল করে ছাড়িয়ে গেলেন ৫০০ গোলের সেই ম্যাজিক ফিগার। পাশে বসলেন তারই সাবেক ক্লাব সতীর্থ রাউলের। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে হ্যাট্রিক করেছিলেন গত ১৫ই সেপ্টেম্বর। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর সেই ম্যাচে শাখতার দোনেৎস্কের বিপক্ষে তার দল রিয়াল মাদ্রিদ জিতেছিল ৪-০ গোলের ব্যবধানে। সেদিনের হ্যাটট্রিকটি তাকে দাঁড় করেছিল দু’টি মাইলফলকের সামনে। ক্লাব ও দেশের হয়ে ৫০০ গোলের ম্যাজিক ফিগার থেকে ছিলেন মাত্র এক গোলের দূরত্বে। একই সাথে তার ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে রাউল গঞ্জালেসের করা সর্বোচ্চ ৩২৩ গোল থেকে ছিলেন মাত্র দুই গোল পিছনে। এর পর সপ্তাহ ঘুরেছে দুইবার।দলও খেলে ফেলেছে তিন তিনটি ম্যাচ
কিন্তু গোলের দেখা মেলেনি। তিনি যখন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো তখন উদযাপনের মঞ্চটাও একটু বড় না হলে কি হয়? বড়দের সেই আসরেই নিজেকে নিয়ে গেলেন আরও বড় উচ্চতায়। মালমোর বিপক্ষে ২-০ গোলের জয়ের দিনে জোড়া গোল করে ছাড়িয়ে গেলেন ৫০০ গোলের সেই ম্যাজিক ফিগার। পাশে বসলেন তারই সাবেক ক্লাব স্বতীর্থ রাউলের। লস ব্লাঙ্কোসদের হয়ে দু’জনেরই গোল সংখ্যা এখন ৩২৩। আর মাত্র একটি গোল করলে ছাড়িয়ে যাবেন তাকেও। রিয়াল গ্রেটের জন্য অ্যাটলেটিকোর মাঠে প্রস্তুত থাকছে রাউলকে ছাড়িয়ে অনন্য উচ্চতায় ওঠার মঞ্চ। ম্যাচের ২৯তম মিনিটে ইসকোর পাস থেকে করা প্রথম গোল সিআরসেভেনকে নিয়ে যায় ৫০০তম গোলের মাইলফলকে। আর ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে বদলি খেলোয়াড় লুকাস ভেজেকুয়েসের পাসে টোকা দিয়ে বসে যান রাউলের পাশে।
সাবেক স্প্যানিশ স্ট্রাইকার রাউল ১৯৯৪ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ৭৪১ ম্যাচ থেকে ৩২৩ টি গোল করেন। একই সংখ্যক গোল করতে পর্তুগিজ তারকাকে মাঠে নামতে হয়েছে মাত্র ৩০৮ বার। রিয়ালের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্সলিগে রাউলের করা ৬৬ গোলের রেকর্ড আগেই ছাড়িয়েছেন রোনালদো। আসরে তার প্রতিদ্বন্দি লিওনেল মেসির ৭৭ গোল ছাড়িয়ে রোনালদোর গোল ৮২টি। ক্লাব ও দেশের হয়ে মোট ৭৫৩ টি ম্যাচ থেকে রিয়াল গ্রেটের বর্তমান গোল সংখ্যা ৫০১। রিয়াল কোচ রাফায়েল বেনিতেজ মনে করছেন, ‘রোনালদো কখনই গোল করা থামাবে না’ এবং রিয়াল ‘তার কাছ থেকে অব্যাহতভাবে সুফল ভোগ করবে।’ পেশাগত ক্যারিয়ারে খেলেছেন স্পোর্টিং লিজবন ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডেও।
২০০৯ সালে রিয়ালে পাড়ি জমানোর পর ৩২৩ গোল করতে খেলতে হয়েছে মাত্র ৩০৮টি ম্যাচ। এমন অর্জনের দিনে তিনি বলেন, ‘আমি খুশী। প্রথমত এটা সম্ভব হয়েছে আমার দলের কারণে। কিন্তু আমি আপনাদের মিথ্যে বলবো না, আমি আসলেই চেয়েছিলাম রাউলের রেকর্ডটা ভাঙতে।’ রিয়াল তারকা আরও বলেন ক্লাব লিজেন্ট রাউলের কাছ থেকে অভিনন্দন বার্তাও পেয়েছেন তিনি। ২০০৬-০৭ মওসুমে ২৮ গোল করে প্রথম দৃশ্যপটে আসেন রোনালদো। সেবার তার দল ম্যানইউ জিতেছিল প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা। রেড ডেভিলদের হয়ে ১১৮ গোল করলেও আশ্চর্যজনকভাবে সেই গোলে তার সাবেক ক্লাব সতীর্থ ইংলিশ স্ট্রাইকার ওয়েন রুনির অবদান মাত্র ১০ বার।
তবে ৩১ বার তাকে গোলের সহায়তা করে সবার উপরে আছে বর্তমান ক্লাব সতীর্থ করিম বেমজামা। ইংল্যান্ডে থাকাকালীন প্রিমিয়ার লিগে মোট করেছেন ৮৪ গোল। এরপর স্বপ্ন পূরণের আশায় ২০০৯ সালে পাড়ি জমান রিয়ালের সান্টিয়াগো বার্নাব্যুতে। যেখানে তিনি হয়ে উঠেছেন একজন আদর্শ ফিনিশার হিসাবে।তার ৫০১ গোলের ২৩০ টা এসেছে লা লিগা থেকে। এখানে তার প্রিয় প্রতিপক্ষ সেভিয়ার বিপক্ষে ২১ গোল করেছেন। গেটাফের জালে বল পাঠিয়েছেন ১৮টি। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনা আর অ্যাটলোটিকো মাদ্রিদও গোলের স্বাদ পেয়েছে ১৫ বার করে।
মালাগার জালে ১৪টি, সেল্টা ভিগো, লেভান্তে, এসপানিওল গোল খেয়েছে ১২টি করে। গ্রানাডা এবং ভিয়ারিয়ালের ‘সৌভাগ্য’ হয়েছে সমান ১১ বার। রোনালদোর পা রায়ো ভলক্যানো, বিলবাও, ওসাসুনার জাল খুঁজে পেয়েছে ১০ বার করে। সোসিয়েদাদ, ভ্যালেন্সিয়া, দিপোর্তিভো আর অ্যাস্টন ভিলার ভাগ্যে জুটেছে ৯ গোল করে। তার কাছ থেকে সবচেয়ে কম গোল খেয়েছে টটেনহ্যাম, ৮টি। গোলের ফিরিস্তি বিস্তারিত জানতে চাইলে মনে রাখুন- ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ থেকে সিআর সেভেনের অর্জন ৮৪ গোল, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এক কম ৮৩টি, কোপা দেল রে’তে আছে ২১ গোল, এফএ কাপে ছিলো ১৩টি, ইংলিশ লিগ কাপে গোল সংখ্যা ৪, প্রিমেরা লিগা আর স্প্যানিশ সুপার কাপে সমান ৩টি করে, ইউরোপিয়ান সুপার কাপ আর দেশের পর্তুগিজ কাপে আছে জোড়া গোল করে।