রহমান রাকিব
মনীষী জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ_রুমি। আবার অনেকে তাঁকে জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ বালখী, মাওলানা রুমি, মৌলভি রুমি নামেও জানেন। তবে শুধুমাত্র রুমি নামে বেশি জনপ্রিয় তিনি। মনীষী রুমি ছিলেন ১৩ শতকের একজন ফার্সি, সুন্নি, মুসলিম কবি, আইনজ্ঞ, ইসলামি ব্যক্তিত্ব, ধর্মতাত্ত্বিক, অতীন্দ্রিয়বাদী, সুফিসাধক।
পশ্চিমা বিশ্বে মাওলানা জালালউদ্দিন রুমি কবিদের মধ্যে সর্বাধিক পরিচিত ও পঠিত। ফারসি ভাষাভাষীদের গবেষকেরা জালালউদ্দিন রুমিকে তাদের সবচেয়ে বড় কবি হিসেবে দেখেন। পশ্চিমা বিশ্বে তার জনপ্রিয়তার কারণ তিনি তাঁর কবিতায় মাধ্যমে যে সব বার্তা দিয়েছেন তা তার ভাষার সীমাবদ্ধতাকে ছাড়ি্যে দিয়েছে। তিনি তাঁর কাব্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দর্শন যেমন দিয়েছেন তা নিছক ফারসি ভাষা বা সংস্কৃতির বিষয় নয়, বরং মানবজাতির আত্মার রহস্যের গূঢ় বিষয়।
পদ্যের পাশাপাশি তিনি গদ্যও রচনা করেছেন অসংখ্য। তাঁর গদ্য সাহিত্যে রয়েছে সংলাপ, যার মানসম্পন্ন অনুবাদ করেছেন এ জে আরবেরি। মাওলানা রুমি যে বিশ্বের একজন সর্বশ্রেষ্ঠ সুফি তা বোঝার জন্য কাউকে মহাবিধ্যান হতে হয় তা নয়। সাহিত্যের সামগ্রিক বিচারে রুমির মাহাত্ম্য নিহিত এখানেই।তিনি ইসলাম ধর্মের একেবারে নির্যাসটুকু হাজির করতে পেরেছেন তাঁর সাহিত্যে। আর তাঁর এই সাহিত্য মানুষকে পবিত্রতা আর সৌন্দর্য দান করে।মানুষ সীমাহীন স্বাধীনতা ও অফুরন্ত স্বর্গীয় মহিমা নিয়ে পৃথিবীতে আসে। এ দুটি পাওয়া তার জন্মগত অধিকার। তবে এ মহামূল্যবান দুটি জিনিস অর্জনের জন্য অবশ্যই ভালোবাসার কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে।
এখন কেউ হয়তো বা প্রশ্ন করতে পারেন এর মধ্যে নতুন কী আছে? দুনিয়ার সব মহাপুরুষেরাই তো এমন বলে গেছেন। রুমির মাহাত্ম্য এখানেই যে, তিনি অত্যন্ত সরাসরি দৈনন্দিন জীবনাচরণ থেকে উদাহরণ টেনে মহাসত্যকে জীবন্তভাবে উপস্খাপন করেছেন। উন্মোচন করতে সচেষ্ট হয়েছেন মানবাত্মার রহস্য।
আরো পড়তে পারেন শামস তাবরিজির অজানা প্রেমের রসায়ন
জন্ম
মাওলানা জালালউদ্দিন রুমি ১২০৪ খ্রিষ্টাব্দে আফগানিস্তানের বালাখে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা বাহা ওয়ালাদ ছিলেন সর্বজনবিদিত পণ্ডিত ও সুফি। মোঙ্গলদের আক্রমণের সময় ইরানের পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় থাকাকে নিরাপদ মনে না করায় তিনি ১২২০ সালের দিকে পরিবারকে আনাতলিয়ায় যান।
বর্তমান তুরস্কের কনিয়ায় তিনি স্খায়ীভাবে বসতি গড়েন। সেখানেই তিনি তৎকালীন শ্রেষ্ঠ আলেম হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন। ১২৩১ সালে মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে জালালউদ্দিন বাবার স্থলাভিষিক্ত হন। তবে তার আগেই জালালউদ্দিন স্বনামধন্য অধ্যাপক ও ধর্মপ্রচারক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি আইন ও ধর্মতাত্ত্বিক বিজ্ঞানকে একসূত্রে গ্রোথিত করেছিলেন এবং সুফিবাদকে আরো বেশি আধ্যাত্মিক মাত্রা দিয়েছিলেন। তবে তখনো তিনি কবিতা লিখেননি অথবা সুফি বিজ্ঞানের প্রবক্তা হিসেবে স্বীকৃতি পাননি।
উৎকর্ষের শুরু
রুমির জীবনের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন শুরু হয় ১২৪৪ সালে, তাঁর বয়স যখন ৪০। ওই বছর তিনি কনিয়ায় একজন অতিন্দ্রীয় ব্যক্তিত্বের সংস্পর্শে আসেন। তাঁর নাম শামস আল-দীন তাবরিজ বা শামস-ই তাবরিজ। তাঁরা দুজন নিষ্কাম প্রেমের বাঁধনে আবদ্ধ হন। গুরু শামস রুমিকে আধ্যাত্মিক প্রেমের ব্যাপারে এমন ধারনা দিলেন যা তিনি আগে কল্পনাও করেননি। এ অবস্থায় রুমির কাছে শামস যেন সৌন্দর্য ও মহত্বের মূর্ত প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত হন। রুমী উপলব্ধি করতে থাকেন, তিনি যেন স্রষ্টার আশির্বাদের ছায়াতলে আশ্রিত হয়েছেন। এই অবস্থায় একদিন হঠাৎ গুরু শামস নিরুদ্দেশ হয়ে যান। শামস নিহত হয়েছেন বলে গুজব শোনা গেলেও রুমি নিজে তা বিশ্বাস করতেন বলে মনে হয় না। তবে এ থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার, শামসের নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ার পরই রুমির কলম দিয়ে ঝরনা ধারার মতো কবিতা বেরোতে থাকে। রুমি অবশ্য তাঁর অনেক লেখার মাধ্যমে এ কথা উল্লেখ করেছিলেন।
রচনা
মাওলানা রুমি তিন হাজার গজল (প্রেমের গান) রচনা করেছেন। আর এসব গজলের অনেকগুলোর সঙ্গেই শামসের নাম জড়িয়ে আছে। শামসের জন্য উৎসর্গীকৃত তাঁর দিওয়ান-ই শামস-ই তাবরিজ হচ্ছে গজল ও বিভিন্ন শ্লোকের সমাহার, যার মধ্যে রয়েছে ৪০ হাজার পংক্তি। ২৫ হাজার শ্লোক নিয়ে রচিত এই সংকলনের নাম ‘মসনবি’। ‘মসনবি’ হচ্ছে শিক্ষামূলক নীতিবাক্যের এক অনন্য সমাহার। মানুষকে নীতিবোধে উজ্জীবিত করাই এই গ্রন্থের এর একমাত্র লক্ষ্য।
অনুবাদ ও পশ্চিমাদের কাছে জনপ্রিয়তা
রুমির কবিতা বিশ্বে নানা ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। এর মধ্যে রুশ, জার্মান, উর্দু, তুর্কি, আরবি, বাংলা, ফরাসি, ইতালীয়, এবং স্প্যানিশ ভাষা উল্লেখযোগ্য। সোলেমান বার্খসের করা রুমির কবিতার ইংরেজি অনুবাদ সারা বিশ্বব্যাপী পাঁচ লাখের বেশি বিক্রি হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে পঠিত কবিদের মধ্যে রুমি অন্যতম। শাহরাম শিবার বই ‘রেন্ডিং দ্য ভেইল : লিটারাল অ্যান্ড পয়েটিক ট্রান্সলেশন অব রুমি’(১৯৯৫) বইটি বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন পুরুষ্কার পায়। রুমির কবিতার রেকর্ডিং যুক্তরাষ্ট্রের বিলবোর্ডের সেরা ২০ এর তালিকায় ম্থান পায়। মার্কিন লেখকদের বাছাই করা দীপক চোপড়ার সম্পাদনা করা ‘ফেরুদন কিয়া অব রুমি’ অনুবাদ করা প্রেমের কবিতাগুলো মঞ্চায়ন করেন হলিউড অভিনেত্রী-অভিনেতা ম্যাডোনা, গোল্ডি হওন, ফিলিপ গ্লাস ও ডেমি মুর।
‘মাওলানা রুমি রিভিউ’ (আইএসএসএন) বার্ষিকী প্রকাশিত হয় এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সি এবং ইরানি চর্চা কেন্দ্র থেকে সাইপ্রাসের নিকোশিয়ার রুমি ইনস্টিটিউট এবং ক্যামব্রিজের আর্কেটাইপ বুকস এর সহযোগিতায়। প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয় ২০১০ সালে এবং এরপর থেকে প্রতি বছর এটি প্রকাশ করা হয়। সাময়িকীটির প্রধান সম্পাদক লিউনার্দ লিওশিন এর মতে গুরুত্ব এবং ফলাফল এ দান্তে, শেকসপিয়র এবং মিল্টন এর যদিও কয়েকজন মুসলিম কবি সহজ প্রতিদ্ধন্ধী, পশ্চিমে তারা সাহিত্য খ্যাতি উপভোগ করে কারণ আরবি এবং ফার্সি দার্শনিক, লেখক এবং কবিদের নগণ্য, তুচ্ছ এবং রুচিহীন হিসাবে দেখে ওয়েস্টার্ন ক্যাননের মহা আখ্যানের কাছে। মাওলানা রুমি রিভিউ এর লক্ষ হচ্ছে বিশ্ব সাহিত্যে এসব তাচ্ছিল্যপূর্ণতার অবসান ঘটানো, যেটি পশ্চিমা সাহিত্যের ভুল কল্পনার চেয়েও আরও গভীর।”
Literary History of the Arabs গ্রন্থের বিখ্যাত লেখক R A Nicholson (1868-1945) মসনবির পুরোটাই ইংরেজিতে অনুবাদ করে ইংরেজি ভাষাভাষীদের কাছে রুমিকে একজন শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক ও অতিন্দ্রীয় সাধক হিসেবে তুলে ধরেছেন। লেখক নাদের খলিল তার ‘সুফি পাথ টু লাভ’ গ্রন্থে ৭৫টি গজল ও এক হাজার শ্লোক অনুবাদ করেছেন।
সম্প্রতি কয়েকজন কবি দিওয়ান থেকে কিছু গজল তাদের কাব্য সৌন্দর্য অক্ষুন্ন রেখে অনুবাদ করেছেন। আজ অনুভূত হচ্ছে রুমির মতো একজন উঁচুদরের কবি শুধু পারস্যের গণ্ডীর মধ্যে আটকে থাকতে পারেন না। তিনি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য।
তবে এখনো পর্যন্ত তাঁর লেখার যতগুলো ইংরেজি অনুবাদ বেরিয়েছে তারমধ্যে নাদের খলিলের অনুবাদই মানসম্পন্ন বলে মনে করা হয়। রুমি বিশ্বাস করেন, সৌন্দর্য মানব মনের চিরন্তন কাম্য। কেননা স্রষ্টা নিজেই সুন্দর এবং তিনি সব সৌন্দর্যের উৎস। আর মানবাত্মার প্রকৃত চাহিদা হচ্ছে খোদ আল্লাহ পাক।
রূমীর সাহিত্যের অনুবাদ হওয়ায় ইউরোপের শিক্ষার্থীরা এখন তাঁর সাহিত্য কর্মের রস আস্বাদন করতে পারছেন। রুমির সাহিত্যকর্মের রস নিংড়ে পরিতৃপ্তির সঙ্গে পান করছেন তা জোরালোভাবে প্রকাশ পাচ্ছে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রিসার্স স্কলার এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রিপ্রাপ্ত সামির আসাফ The Poet of the Poets– শীর্ষক এক নিবন্ধে লিখেছেন, গভীরতার মানদণ্ডে রুমির তুলনায় শেক্সপিয়রের মান হচ্ছে মাত্র ১০ ভাগের এক ভাগ। পশ্চিমা সাহিত্যিকদের মান প্রসরঙ্গ তিনি লিখেছেন, ‘পাশ্চাত্যের গ্যাটে, চসার ও ইমারসন পর্যন্ত রুমির প্রভাব প্রতিপত্তি উপলব্ধি করতে পেরেছেন। এ কথা বলতে দ্বিধা নেই, রুমির সমকক্ষ যেমন গাজ্জালি, গালিব, জামি, সাদি, এমনকি কাজমি, দেহলভি বা জাউকের সাহিত্যকর্মের তুলনায় পশ্চিমা সাহিত্য বলতে গেলে হাস্যকর পর্যায়ের অগভীর।
ভাষাবিদরা পশ্চিমা সাহিত্য, বিশেষ করে ইংরেজি সাহিত্যের এই অগভীরতার পেছনে অন্যতম তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন। এগুলো হচ্ছে উর্দু বা ফারসির তুলনায় এসব ভাষার প্রকাশভঙ্গির অন্তর্নিহিত সীমাবদ্ধতা, পাশ্চাত্যে মরমিবাদের সহজাত ঘাটতি এবং সামগ্রিকভাবে পশ্চিমা সমাজ ও সংস্কৃতি তুলনামূলকভাবে অস্থিতিশীল। পক্ষান্তরে রুমি এ জগতের মানুষ হয়েও সম্পূর্ণ ভিন্ন জগতের বাসিন্দা কিংবা আধ্যাত্মিক চেতনার ব্যক্তি ছিলেন।
এজন্য মাওলানা রুমির সাহিত্যকর্ম স্থান-কাল-পাত্রের সীমানা অতিক্রম করে এখন অমরতা পেয়েছে। আজ বিশ্বখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী ম্যাডোনা ও তার মতো আরো অনেকে রুমির কবিতাকে গানে রূপ দিয়ে গেয়ে বিশ্বের দরবারে তাকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন করার প্রয়াস পাচ্ছেন।
তাঁর দশটি বাণী
১.‘তুমি সাগরে এক বিন্দু পানি নও। তুমি এক বিন্দু পানিতে গোটা এক সাগর’।
‘শিক্ষাটা হলো- নিজের মূল্য বুঝতে হবে’।
২. আমাদের মধ্যে এক অদৃশ্য শক্তি লুকিয়ে আছে। এটা যখন দুটো বিপরীতমুখী বাসনার উপলব্ধি প্রকাশ করে, তখন তা শক্তিশালী হতে থাকে।
শিক্ষাটা হলো- নিজের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে থাকুন।
৩. গতকাল আমি চতুর ছিলাম। তাই আমি পৃথিবীটাকে বদলে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আজ আমি জ্ঞানী, তাই নিজেকে বদলে ফেলতে চাই।
শিক্ষাটাহলো- পরিবর্তনটা আপনি আনুন।
৪. শোক করো না। তুমি যাই হারাও না কেন তা অন্য কোনো রূপে ফিরে আসবে।
শিক্ষাটা হলো- ইতিবাচক থাকুন।
৫. প্রত্যেককে বানানো হয়েছে নির্দিষ্ট কাজের জন্য এবং প্রত্যেক হৃদয়ে সেই কাজটি করার আকাঙ্ক্ষাও দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষাটা হলো- নিজের আবেগ নিয়ে বেঁচে থাকুন।
৬. কেউ যখন কম্বলকে পেটাতে থাকে তখন সেটা কম্বলের বিরুদ্ধে নয়, ধুলোর বিরুদ্ধে।
শিক্ষাটা হলো- মনোযোগী থাকুন।
৭. আমাদের চারদিকে সৌন্দর্য ছড়িয়ে রয়েছে। সাধারণত একে বুঝতে একটি বাগানে হাঁটার প্রয়োজন অনুভব করি আমরা।
শিক্ষাটা হলো- নিজের পথ নিজেই সৃষ্টি করুন।
৮. যখন নিজের মূল্য নির্ধারণের দিনটি আসবে তখন আপনার পরিচয় ফুটিয়ে তোলাটাই বিজ্ঞানের নির্যাস।
শিক্ষাটা হলো- আপনি যেমন তেমনই থাকুন।
৯. শোক প্রকাশ হতে পারে সমবেদনার বাগান। যদি সবকিছুতে নিজের হৃদয়টাকে উদার রাখতে পারেন, বেদনা আপনার শ্রেষ্ঠ বন্ধু হতে পারে।
শিক্ষাটা হলো- ভালোবাসা ও জ্ঞানের জন্য নিজের যাত্রাটাকে নিরবচ্ছিন্ন রাখুন।
১০. আমার প্রথম প্রেমের গল্প শোনামাত্র তোমাকে খুঁজতে থাকি, কিন্তু জানি না ওটা কতটা অন্ধ ছিল। প্রেম আসলে কোথাও মিলিত হয় না। সারাজীবন এটা সবকিছুতে বিরাজ করে।
শিক্ষাটা হলো- সবকিছুতে ভালোবাসা খুঁজতে থাকুন।
জালালউদ্দিন রুমি’র একগুচ্ছ কবিতা
পাথর হয়ে মরি
আমি পাথর হয়ে মরি আবার গাছ হয়ে জন্মাই
গাছ হয়ে মরি আবার পশু হয়ে জাগি,
পশু হয়ে মরি আবার মানুষ হয়ে জন্মাই
তাহলে ভয় কীসের? কীবা হারাবার আছে মৃত্যুতে?
পাখির গান
আমার কামনার আগুনে
পাখির গান আনে শান্তি।
আমি তাদের মতোই আত্মহারা,
কিন্তু আমার বলার কিছুই নেই।
হে চিরন্তন আত্মা, আমার মধ্য দিয়ে
তুমি কিছু গান শিখে নাও।
দৃশ্যের পেছনে
এটি কি তোমার মুখমণ্ডল
যে বাগানকে সাজায়?
এটি কি তোমার সুঘ্রাণ
যে বাগানকে পাগল করে?
এটি কী তোমার প্রাণ
যে এই ছোট ঝরনাকে
করেছে নদী অথবা শরাব?
শত সহস্র জন তোমাকে খুঁজে বেড়ায়
আর মরে যায় এই বাগানে
অথচ তুমি লুকিয়ে আছ দৃশ্যের পেছনে।
কিন্তু এই ব্যথা তাদের নেই
যারা আসে আশিক হয়ে।
তখন তোমাকে পাওয়া যায় সহজে
তুমি থাকো এই বাতাসে
আর শরাবের নদীতে।
গোধুলি সন্ধ্যায়
গোধুলি সন্ধ্যায় চাঁদ ওঠে আকাশে,
একসময় পৃথিবীতে নামে আর আমার দিকে চায়।
চিল যেমন পাখির বাচ্চা শিকার করে দ্রুত উড়ে
তেমনি এই চাঁদ আমাকে চুরি করে আকাশে ধায়।
আমি আমার দিকে তাকাই, আমাকে আর খুজেঁ না পাই!
আমার শরীর এক মিহি প্রাণ হয়ে মিশে যায় চাঁদে।
নয়টি গোলক হারিয়ে যায় অই সোনালি চাঁদে
আমার আমি হারিয়ে যাই এই মায়াবী সমুদ্রে।
মুহূর্তের সুখ
মুহূর্তের সুখ
আমি আর তুমি বসে আছি বারান্দায়
দেখতে দুই, আসলে এক, তুমি আর আমি।
আমরা পান করি জীবনের জল এখানে
বাগানের সুন্দর নিয়ে বসে আছি দুজনে
তুমি আর আমি।
আর পাখিরা গাইছে
নক্ষত্রমণ্ডলী আমাদেরকে দেখছে
আজ আমরা তাদের দেখাব
এক পাতলা বাঁকা চাঁদ হতে কেমন লাগে!
তুমি আর আমি আমিশূণ্য, বসে আছি এক হয়ে
উদাসীন অলস বিচারের কাছে, আমি আর তুমি।
স্বর্গের টিয়া মিছরি কামর দিচ্ছে
যখন আমরা হেসে উঠছি, তুমি আর আমি।
যে আমাকে পৃথিবীতে পাঠালো
সারাদিন আমি এটি নিয়ে ভাবি, রাতে এটি ঠোঁটে আওরাই
আমি কোথা থেকে এসেছি আর আমাকে কী করতে হবে?
আমার কোনো ধারণাই নেই।
এ আমি নিশ্চিত- আমার আত্মা অন্য কোথাও থেকে
আর আমি ওখানেই শেষ হতে চাই।
এই পাগলামি শরু অন্য কোনো সরাইখানায়
আমি যখন ফিরে আসি এই জায়গায়
আমি তখন তুমুল প্রশান্ত। এর মধ্যেই
আমি যেন অন্য মহাদেশের কোনো পাখি
এই পাখির দেশে বসে আছি।
আসছে সে দিন যেদিন আমি উড়াল দেবো
কিন্তু আমার কানে এটি কে? এখন যে আমার কণ্ঠ শুনে!
কে সে যে কথা বলছে আমরাই মুখে?
কে আমার চোখ দিয়ে দেখছে? আত্মা কী?
আমি প্রশ্ন না করে থামতে পারি না।
যদি আমি এক ফোঁটা জবাব পরীক্ষা করে দেখতে পেতাম
তাহলে আমি এই কারাগার মুক্ত করে দিতাম পাগলদেরকে।
আমি নিজে নিজে এখানে আসিনি আর আমি সেভাবে বাঁচতেও পারবো না।
যে আমাকে এখানে এনেছে তাকে আমাকে নিয়ে যেতে হবে বাড়ি।
এই কবিতা। আমি কখনো জানিনা আমি কী বলতে চাই
আমি এটি পরিকল্পনাও করি না
আমি যখন এর বলার বাইরে থাকি
তখন খুব চুপ হয়ে পড়ি আর কোনো কথাও বলি না।
আসো, আসো তুমি যেই হউনা কেন
মুসাফির, নামাজি, সন্যাসী
কিছুই ব্যাপার না।
আমাদের এই ক্যারাভান নিরাশার নয়,
আসো যদিও তোমার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হয়েছে হাজারবার
আসো, আবারো, আসো আসো।