বাসস
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারত ও রাশিয়ার বীরযোদ্ধারা অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ একটি মহান ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে আবির্ভূত হবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
বীরযোদ্ধারা আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের ব্যাপক পরিবর্তনের প্রশংসা করেন এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি বিজয়ী ও মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে এ দেশ ও জনগণের সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৪৫ বছর আগে আপনাদের অবদানের কথা আমরা সব সময় স্মরণ করি। যে ত্যাগস্বীকার আপনারা করেছেন, আমাদের জনগণ তা সব সময় মনে রাখবে।’
অনুষ্ঠানে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জি এস সিহোতা, রুশ প্রতিনিধিদলের নেতা কজুরিন ভিক্টর, ভারতের বীরযোদ্ধা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ভানোত মদন মোহন, এয়ার কমোডর (অব.) চন্দ্র মোহন সিংলা এবং ভাইস অ্যাডমিরাল (অব.) রমন প্রেম সুথানও বক্তৃতা করেন।
সংবর্ধনায় বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, ভারতের চার সামরিক কর্মকর্তা, ভারত ও রুশ দূতাবাসের কর্মকর্তা এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কজুরিন ভিক্টর স্বাধীনতার পর চট্টগ্রাম বন্দরে একজন মেরিন অফিসার হিসেবে মাইন অপসারণে তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। মাইন অপসারণের অভিজ্ঞতা নিয়ে রুশ ভাষায় লেখা একটি বই তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেন। তিনি বইটি বাংলায় অনুবাদের এবং এর অর্থ বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে ব্যয়ের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশে যুদ্ধের দিনগুলো স্মরণ করে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের প্রধান জি এস সিহোতা বলেন, আজ যখন তাঁরা বাংলাদেশে পৌঁছান, তখন তাঁরা পরিবর্তিত দেশ দেখতে পেয়েছেন। বিজয় দিবস উদ্যাপনে যোগ দিতে তাঁদের আমন্ত্রণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে সিহোতা বলেন, তাঁরা ভারতের জনগণ এবং ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর শুভেচ্ছা নিয়ে এসেছেন।
পাকিস্তানি বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের পর স্বাধীনতাযুদ্ধকালে নিজের বন্দিদশার স্মৃতি স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, অবরুদ্ধ অবস্থায় তাঁরা ধানমন্ডির বাড়ির কক্ষ থেকে বের হওয়ার সুযোগ পেতেন না; সেখানে তিনি পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে বন্দিদশায় ছিলেন। তবে তিনি স্মরণ করেন, যখন বিমান হামলা হতো, তখন শব্দ শুনতে পেতেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদিও বাংলাদেশ ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হয়, তবে তাঁরা পরের দিন বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন। এ সময় পাকিস্তানি বাহিনী বাড়ি পাহারায় ছিল। তারা বলাবলি করছিল, ‘নিয়াজি সারেন্ডার করতে পারে, তবে আমরা সারেন্ডার করব না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ১৭ ডিসেম্বর সকালে মেজর অশোক তারার নেতৃত্বে ভারতীয় আর্মির একটি টিম এই বাড়িতে আসে এবং পাকিস্তানি ফোর্সকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করে। এরপর তাঁরা মুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতাযুদ্ধের পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে ভারত ও রাশিয়ার অবদানের কথা স্মরণ করেন।