আয়না২৪ আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের কুখ্যাত সন্ত্রাসী আবদুর রউফ মার্চেন্ট ওরফে দাউদ মার্চেন্টকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বলিউডের সংগীত পরিচালক গুলশান কুমার হত্যা মামলার আসামি আবদুর রউফ ওরফে দাউদ মার্চেন্টকে ৫৪ ধারার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর রোববার বিকালে ছেড়ে দেয় বাংলাদেশ কারা কর্তৃপক্ষ। এর পর তাকে ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে কারাসূত্র।
ভারতের প্রভাবশালী ইংরেজী দৈনিক ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকার অনলাইন সংস্করণের এক খবরে গতকাল বৃহস্পতিবার দাউদকে ভারতের কাছে হস্তান্তরের খবর দেয়।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির জানান, রোববার বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে দাউদ মার্চেন্টকে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। তাঁকে উলফা নেতা অনুপ চেটিয়ার মতো ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে সাংবাদিকেরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে জানতে চেয়েছিলেন। জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দাউদ মার্চেন্টের সাজাভোগের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এ জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ‘পুশব্যাক-পুশইনের’ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
‘মাফিয়া ডন’ দাউদ ইব্রাহিমের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত দাউদ মার্চেন্টকে গত ৩ নভেম্বর ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন ঢাকার হাকিম আদালত। সেই কাগজপত্র কারাগারে পৌঁছানোর পর তার মুক্তির ব্যবস্থা করে কারা কর্তৃপক্ষ। অবৈধভাবে বাংলাদেশে ঢুকে ধরা পড়ে পাঁচ বছর কারাগারে কাটিয়ে ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর জামিনে মুক্তির পর ওই দিনই ফের ৫৪ ধারায় আটক হয়েছিলেন দাউদ।
মুম্বাইয়ের সংগীত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টি-সিরিজের মালিক গুলশান কুমারকে ১৯৯৭ সালের ১২ আগস্ট আন্ধেরি এলাকার একটি মন্দির থেকে বেরিয়ে আসার সময় গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। ওই হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন ভাড়াটে খুনি দাউদ মার্চেন্টকে গ্রেপ্তারের পর ২০০২ সালে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় ভারতীয় আদালত। এর পর সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন দাউদ। কিন্তু ২০০৯ সালে ১৪ দিনের প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার পর পালিয়ে যান তিনি। ওই বছর ২৮ মে ভারত সীমান্তবর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে এক সহযোগীসহ তাকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশের পুলিশ। এর পর জাল পাসপোর্ট তৈরি ও অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়।
দ্য হিন্দুর খবরে বলা হয়েছে, অনুপ্রবেশের দায়ে দাউদ মার্চেন্টকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশ। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন। গত সপ্তাহে কারাগার থেকে ছাড়া পান। দাউদ মার্চেন্টকে দেশে ফেরাতে অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলছে ভারত। ভারতের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পরই বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ দাউদ মার্চেন্টকে মেঘালয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে তুলে দেয়।
খবরে বলা হয়েছে, ইন্টারপোলের সহায়তায় সীমান্তে দাউদ মার্চেন্টের হস্তান্তর-প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হচ্ছে, দাউদ মার্চেন্ট অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করার সময় বিএসএফের হাতে আটক হন।
এ ব্যাপারে পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) সঞ্জয় সাক্সেনা দ্য হিন্দুকে বলেন, ‘দাউদ মার্চেন্টকে জিজ্ঞাসাবাদের পরই বিএসএফ জানতে পারে যে তিনি মুম্বাইয়ে গুলশান কুমার হত্যা মামলার আসামি এবং এ মামলায় কারাবাসের সময় প্যারোলে মুক্তি পেয়ে লাপাত্তা হয়ে যান। দাউদ মার্চেন্টকে বৃহস্পতিবার সকালেই মুম্বাই নিয়ে সেখান উচ্চ আদালতে হাজির করা হয়। তিনি বলেন, হাইকোর্ট শুক্রবার (আজ) তাঁকে দায়রা আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দিয়েছেন।