আয়না২৪
আজ জাতীয় গণহত্যা দিবস, মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত দিন। ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি দিল সংসদ। গত বছরের ১১ মার্চ শনিবার জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হওয়ার পর থেকেই দিনটি জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
প্রায় সাত ঘণ্টা আলোচনার পর সংসদে সর্বসম্মতভাবে প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ ৫৬ জন সংসদ সদস্য এই আলোচনায় অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলোচনায় অংশ নিয়ে এই প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এই গণহত্যার প্রমাণ লাগে না। বিশ্বের বিভিন্ন প্রত্রিকায় এসেছে- কীভাবে গণহত্যা হয়েছে।”
প্রস্তাবে বলা হয়, “সংসদের অভিমত এই যে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যাকে স্মরণ করে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করা হউক এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হউক।”
গত বছরের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হওয়ার পর থেকেই দিনটি জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসাবে পালিত হয়ে আসছে।
গণহত্যা দিবসের কর্মসূচি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যৌথ উদ্যোগে ‘গণহত্যা দিবস’ পালন করা হবে। এ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে আয়োজন করা হয়েছে নানা অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে : সন্ধ্যা ৭টায় স্মৃতি চিরন্তন-এ মোমবাতি প্রজ্বলন, ডকুমেন্টারি প্রদর্শন আলোচনা সভা। এ ছাড়া, বা’দ জোহর মসজিদুল জামিয়ায় ২৫ মার্চের রাতে নিহতদের স্মরণে বিশেষ মোনাজাত এবং বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে অনুষ্ঠিত হবে প্রার্থনা সভা। রাত ৯টা থেকে ৯টা ১মিনিট পর্যন্ত ২৫ মার্চ কালরাত স্মরণে জরুরি স্থাপনা ব্যতিত সকল জায়গায় “ব্লাক-আউট” কর্মসূচি পালন করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলেও এ উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে : ২৫ মার্চ কালরাতে নিহত শহীদদের স্মরণে জগন্নাথ হল পরিবারের পক্ষ থেকে হল প্রাঙ্গণে স্মরণ অনুষ্ঠান। স্মরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
জাতীয়ভাবে এ দিন রাতে সারাদেশে এক মিনিটের জন্য (কেপিআই ও জরুরি স্থাপনা ব্যতিত) প্রতীকী ব্ল্যাক-আউট কর্মসূচি পালিত হবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক পত্রে বলা হয়েছে, ২৫ মার্চ রাত ৯টা থেকে ৯টা ১ মিনিট সারাদেশে এই প্রতীকি ব্ল্যাক-আউট কর্মসূচি পালিত হবে। এ ছাড়াও জাতীয়ভাবে গণহত্যা দিবস পালনের অংশ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আজ সকাল ১০টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘রক্তাক্ত ২৫ মার্চ গণহত্যার ইতিহাস’ শীর্ষক শিরোনামে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ, এইদিন বাংলার মাটিতে মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী তাদের ‘অপারেশন সার্চলাইটে’র নীলনকশা অনুযায়ী আন্দোলনরত বাঙালির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ঢাকাসহ সারা দেশে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর শুরু হয় ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরোচিত ও নিকৃষ্টতম গণহত্যা। নয় মাসজুড়ে বাঙালি জাতির বিরুদ্ধে যে নিধন অভিযান পরিচালিত হয়েছিল তার ভয়ঙ্করতা ও ব্যাপকতা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ বিশেষ ছিল না।