নানা আয়োজনে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উদযাপন

Spread the love

আয়না ২৪ ডেস্ক

আজ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ। সাতই মার্চের ভাষণ ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৭ই মার্চ ঢাকার রমনায় অবস্থিত রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) অনুষ্ঠিত জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত এক ঐতিহাসিক ভাষণ। ১৮ মিনিট স্থায়ী এই ভাষণে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদেরকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা অবিস্মরণীয় গৌরবের এক অনন্য দিন। তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) তিনি এ আগুনঝরা ভাষণ দেন। কালজয়ী ভাষণে বজ্রকণ্ঠে তিনি ঘোষণা করেনÑ এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।

সেদিনের অগ্নিঝরা ভাষণে জাতির উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেবো, এ দেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ্।’ বঙ্গবন্ধুর এই আহ্বান বিদ্যুৎ বেগে ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। স্বাধীনতার স্বপ্নে জেগে ওঠে পুরো জাতি। শোষিত বঞ্চিত মানুষের মনের অব্যক্ত কথা যেন বের হয়ে আসে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের প্রতিটি উচ্চারণ, প্রতিটি বর্ণ ও শব্দে।

বঙ্গবন্ধুর এই তেজদৃপ্ত ঘোষণাই ছিল প্রকৃতপক্ষে আমাদের স্বাধীনতার ভিত্তি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে গত বছর অক্টোবরে জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই এবার অনেকটা জাঁকজমকপূর্ণভাবে দিবসটি পালনে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ১৯৭১ সালের অগ্নিঝরা মার্চের ৭ তারিখ বঙ্গবন্ধুর সেই মহাকাব্যিক দৃপ্ত উচ্চারণ আগে থেকে লেখা ছিল না। বরং তা ছিল মুক্তিকামী বাঙালির প্রতি বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনামূলক এক তাৎক্ষণিক ভাষণ।

‘পদ্মা মেঘনা যমুনা তোমার আমার ঠিকানা’, ‘তোমার দেশ আমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর’ প্রভৃতি আগুনঝরা স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করে আসতে লাগল শোষিত বঞ্চিত জনতা। স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয় রেসকোর্স ময়দান।

৭ই মার্চ এর কর্মসূচী

দিবসটি পালনে আজ বুধবার অপরাহ্নে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ। জানা গেছে, এবার ঐতিহাসিক ৭ মার্চে আরেকটি ইতিহাস গড়তে চায় আওয়ামী লীগ। ভাঙতে চায় লোক সমাগমের অতীতের সকল রেকর্ড। এজন্য ব্যাপক প্রস্তুতি ক্ষমতাসীনদের। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ। জনসভাকে ঘিরে রেকর্ড লোক সমাগমের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।

ঐতিহাসিক এই দিনটিকে উপলক্ষ্য করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচির আয়োজন করেছে।  আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে ঢাকায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসভাও এটি। এ জনসভায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দিক-নির্দেশনামূলক বার্তা দিবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল নেতাকর্মীদের গাইডলাইনও দেওয়া হবে। জানা গেছে, এবারের জনসভায় ১৫ লাখ মানুষের উপস্থিতির টার্গেট নেওয়া হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সকাল সাড়ে ছয়টায় রাজধানীর ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনসহ দলীয় সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং সকাল সাতটায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন। বেলা দু’টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন। জনসভা সফল করতে গত তিন দিন ধরে ঢাকা মহানগরীতে লিফলেট বিতরণ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।