আয়না ২৪ লাইফস্টাইল
বাচ্চারা নতুন কিছু শেখার ব্যাপারে অনেক বেশি আগ্রহী হয়ে উঠে।তারা তাতে যদি একবার মজা পেয়ে যায়। একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ আর একজন শিশু দুজনের শারীরিক ও মস্তিষ্কের গঠন কখনো এক রকম হয় না। আর এই তারতম্যের কারণে তাদের আচরণ ও কখন এক হয় না। বাচ্চাদের শারীরিক গঠনের পার্থক্য সহজেই বোঝা যায়। যদি আমরা মস্তিষ্ক ও মানসিক সংগঠনের পার্থক্য বুঝতে চাই তাহলে তাদের দিক এ একটু মনোযোগ দিতে হবে। শিশুর মস্তিষ্ক যে হারে শিখতে আগ্রহী সে হারে পূর্ণ বয়স্ক মস্তিষ্ক শিখতে চায় না। কারন হলো শৈশবে শেখার হারটা বেশি থাকে শিশুদের। জন্মের পরই একটি শিশু ধীরে ধীরে তার আশপাশের পরিবেশ থেকে শিখতে শুরু করে।
আজ আমরা আপনাদের সামনে শিশুদের শেখার প্রক্রিয়া তুলে ধরবো-
১। কবিতা ছড়া ও রূপকথার গল্প শোনান
তবে আমাদের মাতৃভাষা যেহেতু বাংলা, সেক্ষেত্রে বাংলা ছড়া, কবিতাগুলো ছন্দে ছন্দে শিশুর সামনে আবৃত্তি করতে পারেন।শিশুদের জন্য বাংলা ও ইংরেজিতে প্রচুর কবিতা, গান , রূপকথা,কবিতা লেখা হয়েছে। আপনি যত বেশি তাকে ছড়া, গল্প বা কবিতা পড়ে শোনাবেন,তত দ্রুত তার মাঝে কথা বলার প্রবণতা ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পাবে। শিশুরা খুব দ্রুত যেকোন শব্দ মনে রাখতে পারে ও পরে তা বলতে পারে। এছাড়া রাতে ঘুম পাড়ানোর সময় মজার রূপকথার গল্প পড়ে শোনাতে পারেন।
২। শিশুকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন
নানা বিষয় নিয়ে তাকে সহজ ও ছোট ছোট প্রশ্ন করতে পারেন। তাকে নিজ থেকেই উত্তর দিতে সাহায্য করুন। শুরু করতে পারেন সাধারণ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে করে। যেমন-তার গত জন্মদিনে সে কী কী করেছিল তার বর্ণনা দাও,সে যে আইসক্রিম খেয়েছিল তার রংটা ঠিক কী ছিল বা স্কুলে তার বন্ধুদের নাম মনে করা ইত্যাদি। এভাবে সে যখন প্রক্রিয়াটির সাথে মানিয়ে উঠবে তখন প্রশ্নগুলোকে পড়ালেখার সাথে সম্পর্কিত করুন।
৩। পাঠগুলো আলাদা আলাদা ভাগ করে পড়া
আপনার কাছে যেটা খুব সহজ আর দ্রুত শিক্ষণীয় মনে হচ্ছে বাচ্চাদের কাছে তা মনে নাও হতে পারে।কারন বড় আর ছোটদের শেখার মাত্রা এক নয়। কোনো তথ্য বা পড়া শেখানোর সময় ছোট ছোট করে ভেঙে পড়ান। এভাবে বাচ্চার পাঠ্য কবিতা, গল্প বা কোনো হোমওয়ার্ককে ছোট ছোট খণ্ডে বিভক্ত করে পড়ায় উৎসাহিত করতে পারেন। এভাবে ছোট ছোট খণ্ড-গুলোকে জোড়া লাগিয়ে বড় কোনো বিষয়কে সে সহজেই শিখতে ও মনে রাখতে পারবে।তাই ধৈর্য ধরুন, সময় দিন।
৪। বিভিন্ন প্রাণী বা বস্তুর সম্পর্কে অবস্থান শেখান
আমাদের মস্তিষ্ক নতুন তথ্য সাধারণত স্বল্পস্থায়ী স্মৃতিতে রেখে দেয় এবং তা খুব কম সময়ের জন্যই তা আমাদের মনে থাকে। কিন্তু নতুন কিছুকে যদি আগে থেকে জানা বা শেখা বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত করতে পারি তাহলে তা মনে থাকে বহুদিন। বাচ্চারা নতুন কোনো তথ্য সহজে মনে রাখতে পারে। শিশুকে নিয়ে যখন বাইরে ঘুরতে যাবেন, তখন তাকে বিভিন্ন প্রাণী বা বস্তুর অবস্থান যে আলাদা আলাদা হয়, তা বুঝতে সহযোগিতা করবেন।যেমন- কাক ডাকে “কা কা” করে এটা তাকে শোনাবেন। পরবর্তীতে যখন আবার “কা কা” ডাক শুনবে তখন আপনি তাকে জিজ্ঞেস করবেন। তখন দেখবেন সে আস্তে আস্তে সঠিক উত্তর দিতে শিখে যাবে। এভাবে সে বুঝতে শিখবে। তবে মনে রাখবেন, তাকে শেখার ক্ষেত্রে জোর করবেন না মোটেও। এর ফলে শিশুর শেখার আগ্রহ কমে যাবে, যা তার ভবিষ্যতে পড়াশোনা বা যেকোন বিষয় শেখার আগ্রহের ক্ষেত্রে অনীহা তৈরি করবে।
৫। সন্তানের কাছ থেকে আপনিও শিখুন
তাকে বলুন, সে নতুন যেটা শিখলো তা যেন আপনাকে শেখায়। এটা তাকে তথ্য মনে রাখার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।এই ধরুন, কীভাবে যোগ-বিয়োগ করতে হয় ইত্যাদি বিষয় এ।
৬। সংখ্যা বুঝতে শেখান
সংখ্যা গণনার জন্য শিশুকে তার হাতের আঙ্গুলের মাধ্যমে গুণতে শেখাতে পারেন।অক্ষরের সাথে সংখ্যার ধারণাও শিশুদের মাঝে দিতে হবে। যেমন- একটি বল, দুটি পাখি-এরকম।এছাড়া সংখ্যা মনে রাখার জন্য নামতা পদ্ধতি বেশ ভালো পদ্ধতি।
৭। শিশুকে খেলতে সময় দিন
আপনার শিশুকে বিভিন্ন ধরণের খেলাধুলাতে উৎসাহ দিন।এতে তার অন্য শিশুদের সাথে যোগাযোগের দক্ষতা বাড়বে এবং তার বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে সাহায্য করবে।খেলাধুলা হতে পারে লুকোচুরি, কানামাছি, সাত চাড়া, লুডো বা একটু বড় হলে কুইজ দাবা, ক্রিকেট, ফুটবল বা তার যেসব খেলায় আগ্রহ রয়েছে।
এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে শিশুর ইন্টিলিজেন্স গ্রোথ বা বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ যেমন হবে, একইভাবে সে গড়ে উঠবে একজন প্রাণবন্ত মানুষ হিসেবে।এভাবে ধীরে ধীরে আরো ২ থেকে ৬ মাস অতিবাহিত হলে একটি শিশু আমাদের অর্থাৎ পূর্ণবয়স্ক মানুষের ব্যাকরণ অনুসরণ করে কথা বলতে পারে।তাই বাংলাদেশের কোনো শিশু যখন ইতালিয়ান বা ফরাসি পরিবেশে বেড়ে ওঠে তখন তার আচার-আচরণ ও ভাষায় ইতালীয় বা ফরাসিয়ানা দেখা যায়। এমনকি যদি বাঙালি কোনো শিশুকে অন্য কোনো ভাষা পরিবেশে রেখে আসা হয় তবে তার মানসিক ব্যাকরণটা বাংলা ভাষার নয় বরং অন্য সেই ভাষারই অনুসারী হবে।শিশু সুন্দর ভাষা আর আচরণ শিখবে, নৈতিক শিক্ষায় দীক্ষিত হয়ে মানবিক জীব হবে এটার প্রতিই সমাজ বিজ্ঞানীরা এবং মনোবিজ্ঞানীরা জোর দিচ্ছেন। তারা পুরনো গবেষণাগুলোকে নতুন আঙ্গিকে দেখছেন।সুন্দর ও শান্ত সমাজকে মানুষের টিকে থাকা এবং সন্তুষ্ট থাকার জন্য বিশেষ জরুরী মনে করেন। এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে শিশুর ইন্টিলিজেন্স গ্রোথ বা বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ যেমন হবে, একইভাবে সে গড়ে উঠবে একজন প্রাণবন্ত মানুষ হিসেবে।