আয়না ২৪ ঝালকাঠি প্রতিনিধি
যে শিক্ষক আজীবন শুধু বিদ্যালয় ও ছাত্রদের নিয়ে ভেবেছেন। নীতি, আদর্শ ও পান্ডিত্যে যিনি অনন্য। বিদ্যা শিক্ষা দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেননি তিনি। নৈতিক শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি খোঁজ রেখেছেন সব ছাত্রের। যিনি পুরো জীবনে নিজের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। যিনি আইন বিষয়ে পড়ালেখা করেও আইনজীবি হননি। নামের সাথে উকিল উপাধি নিয়েই শিক্ষকতা পেশায় কাটিয়ে দিয়েছেন জীবনের ৪১টি বছর। তিনি ঝালকাঠির রাজাপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন জেষ্ঠ্য শিক্ষক আ: মান্নান (উকিল) স্যার। তাঁর বয়স এখন ৮০ বছর। তিনি এখন অসুস্থ্য। জীবনের এই ক্রান্তিকালে যখন তাঁর সাহায্যের খুব প্রয়োজন ঠিক তখনই শিক্ষকের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ ও ভালবাসার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন বিদ্যালয়ের কিছু প্রাক্তন ছাত্র।
তবে এই উদ্দোগের প্রধান ভূমিকায় ছিলেন বিদ্যালয়ের ১৯৮৮ ব্যাচের ৩ ছাত্র। এই ৩ জন হলেন, বরিশাল বিশ্ব বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মুহম্মদ মুহসিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু ইনস্টিটিউট অব কম্পারেটিভ লিটারেচার ও কালচারে’র পরিচালক ড. শামীম রেজা ও ব্যবসায়ী সৈয়দ সগির উদ্দিন আহম্মদ। এই ৩ বন্ধু মিলে প্রিয় শিক্ষকের জন্য কিছু করার মানসিকতা নিয়ে যোগাযোগ শুরু করেন বিদ্যালয়ের অন্য প্রাক্তন ছাত্রদের সাথে। কিছু মানুষ সহযোগীর হাত বাড়িয়ে দেয়ার কারনে শুক্রবার (০৯ ফেব্রুয়ারী) সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হয় ব্যতিক্রমী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। বিদ্যালয় চত্ত্বরে এসে উপস্থিত হতে থাকেন স্যারের প্রিয় ছাত্ররা।
প্রিয় শিক্ষকের ৮০ বছরে পদার্পন উপলক্ষে তাঁর প্রাক্তন ছাত্রদের পক্ষথেকে আয়োজন করা এই ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠানটিকে ব্যতিক্রমী বলার কারন রয়েছে। এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ছিলনা কোন প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি। অনুষ্ঠানের মধ্যমনি শুধু মান্নান স্যারকে ঘিরেই ছিল সব আয়োজন। এমন ব্যতিক্রমী আয়োজনে মান্নান স্যারের যে ছাত্ররা এসেছিলেন তারা সবাই নিজ নিজ যোগ্যতায় আজ প্রতিষ্ঠিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, চিকিৎসক, কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষক, সরকারি আমলা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ সবাই ছিল স্যারের কাছে শ্রদ্ধায় অবনত।
প্রিয় শিক্ষকের ৮০ বছরে পদার্পন উপলক্ষে ছাত্র ও সহকর্মীদের পক্ষ থেকে প্রদ্ধার্পণিকা নামক গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়। গ্রন্থের প্রকাশক সৈয়দ সগির উদ্দিন আহম্মদ। সম্পাদনা করেন ড. মুহম্মদ মুহসিন। এছাড়াও ক্রেষ্ট ও উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে দেড় লাখ টাকা তুলে দেয়া হয় প্রিয় স্যারকে। প্রয়োজনে আরো দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন প্রাক্তন ছাত্ররা। সব মিলিয়ে এক আবেগময় পরিবেশ সৃষ্টি হয় সংবর্ধনাস্থলে। এমন মহান প্রয়াস অব্যাহত রাখান ঘোষনা দেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্ররা। এজন্য প্রাক্তন ছাত্রদের পুরনো একটি সংগঠনকে আবারো সক্রিয় করার তাগিদ দেন সবাই।
পুরো অনুষ্ঠানে সব বক্তার মুখেই ছিল স্যারের সহজ-সরল জীবনযাপনের স্মৃতিচারন মূলক বক্তব্য। এছাড়াও বক্তারা বর্তমান শিক্ষার মান, শিক্ষার্থীদের আচরন ও সামাজিক অবক্ষয় নিয়ে কথা বলেন। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, ড. শামীম রেজা। এরপর বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক মো. হেমায়েত উদ্দিন খান, বাবু নিরোধ চন্দ্র হালদার, মো. গোফরান তালুকদার, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে বক্তব্য দেন, সাবেক অধ্যক্ষ শাহজাহান মোল্লা, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. হারুনর রশীদ, সাবেক অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. সমেরেন্দ্র সরকার (মানিক), উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এ্যাড. খায়রুল আলম সরফরাজ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিলন মাহমুদ বাচ্চু, জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এ্যাড. সঞ্জিব কুমার বিশ্বাস ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাহিদুল ইসলাম। সঞ্চালনায় ছিলেন, ড. মুহম্মদ মুহসিন।