রাণী আনেকসুনামুনের সমাধির সন্ধান!

জানুয়ারি ২৬, ২০১৮
Spread the love

বিশেষ প্রতিবেদক

মাত্র দশ বছর বয়সে তিনি মিশরের সিংহাসনে বসেছিলেন।  ওই সময় তিনিই ছিলেন সারা পৃথিবীর সর্বকনিষ্ঠ রাজা।  তাঁর নাম  তুতেনখামেন। সিংহাসনে দায়িত্ব নেওয়ার পর এই অল্পবয়সী রাজা  বিয়ে করেন তাঁর সৎ বোন আনেখসেনপাতেনকে। পরে তিনি নিজের নাম বদলে হয়ে যান আনেকসুনামুন। তবে তুতেন খুব অল্প সময়  রাজত্ব করেন। কারন, তিনি  মাত্র ১৯ বছর বয়সেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তাঁকে সমাহিত করা হয়েছিল পিরামিডে। 

 মিশরের রাজা বা ফেরাউদের  সমাহিত করা হতো পিরামিডে।  ১৯২২ সালে রাজা তুতেনের পিরামিডের খোঁজ  পান গবেষক লর্ড কার্নারভন ও হাওয়ার্ড কার্টার। এর পর থেকেই   তুতেনখামেনের পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সমাধির সন্ধান করছিলেন গবেষকেরা। তুতেনখামেনের সমাধির সন্ধানের বিষয়টি ছিল ইতিহাসের  আলোচিত ঘটনাগুলোর একটি। 

 ২০১৭ সালের শুরুতে  মিশরের ‘ভ্যালি অফ কিংগসে-  একটি পিরামিডের সন্ধান  পাওয়া  যায়। গবেষকদের ধারণা,   এটা তুতেনখামেনের স্ত্রী আনেকসুনামুনের সমাধী হতে পারে। আর এর সূত্র ধরে প্রত্মতত্ত্ববিদেরা  বর্তমানে সেখানে খনন কার্য চালাচ্ছেন। প্রত্নতাত্ত্বিক ও মিশরের সাবেক মন্ত্রী জাহি হাওয়াস এই খনন কার্যের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি  বিশ্বাস করেন, এই পিরামিডের ভেতরেই  রানি আনেকসুনামুনের মমি রয়েছে।

এর আগে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে একই স্থানে রাজা তুতেনের উত্তরাধিকারী, আই-এর সমাধীর সন্ধান পান তাঁরা। রাডার প্রযুক্তি ব্যবহার করে  প্রত্মতাত্ত্বিকেরা  তাদের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হন।

ঐতিহাসিকদের ভাষ্য, ক্ষণজন্মা রাজা  তুতেনখামেনের স্ত্রী রানি আনেকসুনামুনের  দাম্পত্য শুরুর পর নানা ঘাত-প্রতিঘাতে   জীবন বিষিয়ে উঠেছিল।   তুতেনখামেনের ঔরসে তাঁর দুই মৃত কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। এরপর  তুতেনের অকাল মৃত্যুর ফলে  তাঁর দাম্পত্য জীবন বেশি স্থায়ী হয়নি। রাজা  তুতেনের  মৃত্যুর পর মিশরের পরবর্তী ফারাও বা রাজা আই  আনেকসুনামুনকে বিয়ে করেন।  নিজের বাবা ও দাদার সঙ্গেও বিয়ে হয়েছিল এই রাণীর। 

রাজা তুতেনের মমি আবিষ্কার হল যেভাবে

১৯০৭ সালের কথা।  ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ ও গবেষক হাওয়ার্ড কার্টার তুতেনের  সমাধির খননকার্যে হাত দেন।  কার্টার অবশ্য ১৮৯১ সাল থেকেই মিশরে ছিলেন।  প্রাচীন মিশরের অধিকাংশ সমাধিই তখন আবিষ্কৃত হয়েছিল। কিন্তু  রাজা তুতেনখামেন সম্পর্কে খুব কম তথ্যই ছিল সবার কাছে। বিশেষ করে  তার সমাধিটি তখনও ছিল অনাবিস্কৃত।  

কিন্তু তুতেনের সমাধি খুঁজে পেতে হাল ছাড়েননি গবেষকেরা।  দীর্ঘ ১৫ বছর তাঁরা অনুসন্ধান অব্যাহত রাখেন।  ১৯২২ সালের ৪ নভেম্বর। ওইদিন প্রত্মতত্ত্ববিদ ও গবেষক  কার্টার ও তাঁর সহযোদ্ধারা তুতেনখামেনের সমাধি আবিষ্কারের কাছাকাছি যান।   মিশরের আরেক প্রাচীন শাসক ষষ্ঠ রামসেসরের  সমাধির  কাছেই ছিল এটা।   ১৯২২ সালের ২৬ নভেম্বরে কার্টার ও তার সহকর্মী  লর্ড কার্নারন প্রায় অনেক চেষ্টার পর  তুতেনখামেনের সমাধির সন্ধান পান।

 রাজা তুতেনের মমিটি সুদৃশ্য অলংকৃত এবং শিলালিপি সম্বলিত পাথরের শবাধারে রক্ষিত। সোনার রাজমুকুটসহ প্রায় পাঁচ হাজার প্রাচীন শিল্পকর্ম পাওয়া যায় সেখানে।   তুতেনখামেনের সমাধিক্ষেত্রে কেবল একটি  সমাধিরই সন্ধান মেলে।   কিন্তু বর্তমানের অনেক গবেষক মনে করেন, তুতেনখামেন ওই সমাধিক্ষেত্রে আসলে দুটি সমাধি ছিল। অনেকের ধারণা, সেখানে তুতেনের সঙ্গে আরেকজন রানীর সমাধি ছিল। উচ্চ প্রযুক্তির  স্ক্যানার দিয়ে বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তুতেনের  সমাধিক্ষেত্রটির দেয়ালে একটি গোপন প্রবেশদ্বার আছে। দীর্ঘদিন পর সম্প্রতি গবেষকরা   সে সময়ের কিছু রঙিন ছবি প্রকাশ করেছে।  ১৯২২ সালের তুতেনের সমাধিস্থল  খনন চলাকালে  ব্রিটিশ ফটোগ্রাফার হ্যারি বার্টন এসব  ছবি তুলেছিলেন।