মেয়রের নির্দেশেই ইরানি বেগমের ছাগল জবাই! (ভিডিওসহ)

জানুয়ারি ১৯, ২০১৮
Spread the love

মিজানুর রহমান

গত বুধবার সন্ধ্যায় বরগুনা পৌরসভার কার্যালয়ে একটি দুগ্ধজাত মা ছাগলকে জবাই করে পৌর কর্মচারীরা ভুরিভোজ করেছেন বলে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সরেজমিনে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। পৌরসভার সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য রোপণকৃত গাছ নষ্ট করার অপরাধে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়। ছাগলটির দুইটি দুগ্ধপোষ্য দেড় মাসের বাচ্চা রয়েছে।

ঘটনার অল্পসময়ের মধ্যেই আয়না২৪ এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যাপক সমালোচনা করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান সবাই।

শতাধিক শেয়ার এবং সহস্রাধিক রিয়াক্ট এর মধ্যে অনেকে তাঁদের মন্তব্যে পৌর মেয়র মো. শাহাদাত হোসেন এর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মেনশন করে তাঁর নিকট অতিসত্ত্বর ঘটনাটি তদন্ত ও মীমাংসার এর দাবী জানান গতকাল। কিন্তু আজ জানা যায় মেয়রের নির্দেশেই এ ধরনের অপ্রত্যাশিত ও অগ্রহণযোগ্য ঘটনাটি ঘটানো হয়।

এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায় গত বুধবার দুপুরে গাছ নষ্ট করায় পৌর কর্মচারিরা ধরে নিয়ে ছাগলটি বেধে রাখেন। পরে মেয়রের নির্দেশে সন্ধ্যার পরে জবাই করে পৌর ভবনের ভিতরে ভুরিভোজের আয়োজন করা হয়। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার এঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য দুইজন পৌর কাউন্সিলরকে ইরানি বেগমের বাসায় দৌড়ঝাপ করতে দেখা যায়।

জানা গেছে, পৌর শহরের প্রধান সড়ক বিভাজনে নদী বন্দর এলাকায় পৌর শহরের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য রোপণকৃত গাছ খেয়ে ফেলার কারণে পৌর ভবন সংলগ্ন বস্তি এলাকার বাসিন্দা ইরানি বেগমের (৪৫) ছাগলটি পৌরসভার এমএলএসএস মামুন ও তার সহযোগী শাহীন খান ধরে পৌর ভবনের নিচ তলায় বেধে রাখেন।

অনেক খোজাঁখুজি পরে খবর পেয়ে ইরানি বেগম ছাগলটি উদ্ধার করতে পৌর ভবনে গেলে মামুন নামের ওই কর্মচারি জানান, মেয়রের নির্দেশে তারা ছাগলটি ধরে নিয়ে এসেছেন। ইরানি মেয়রের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তাকে যেতে বাধা দেওয়া হয়।

ইরানি বেগমের ক্রন্দনরত অবস্থায় বলেন, সম্বল বলতে দুটি ছাগল ছিলো। একটি ছাগল দেড় মাস আগে দুটি বাচ্চা দিয়েছে । বুধবার সন্ধ্যায় সেই ছাগলটি পৌর শহরের সড়ক বিভাজনে রোপণ করা গাছের চারা খেয়ে ফেলায় বরগুনা পৌরসভার কর্মচারী ছাগলটিকে ধরে নিয়ে জবাই করে খেয়ে ফেলেছেন।, দুগ্ধপোষ্য দেড় মাসের দুটি বাচ্চা কিভাবে বাচাবে সেই চিন্তায় দিশেহারা ।


পৌর কর্মচারি শাহীন খান বলেন, আমি কোনো ছাগল জবাই করিনি , তবে কাল সন্ধ্যায় পৌর ভবনে ছাগল জবাই করে খাওয়া দাওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে নদী বন্দর এলাকার এক চা বিক্রেতা বলেন , ঘটনাটি খুব দুখ:জনক । ছাগলটির দুটি দুধের বাচ্চা আছে। বাচ্চা দুটির চিৎকারে রাতে ঘুমাতে পারিনি । পৌর বাসিন্দা আতিকুর রহমান বলেন, খবরটি শুনে প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি, মানুষের ভেতরে এখন আর মানবিকতা নেই। তবে এঘটনার সুষ্ঠু বিচার হওয়া উচিত।

বরগুনা পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও ৭ নং ওয়াডের কাউন্সিলর রইসুল আলম রিপন বলেন,এ ঘটনাটি খুবই দু:খজনক। সন্তানের সামনে মাকে ধরে নিয়ে হত্যা করার শামিল। তিনি আরও বলেন,স্থানীয় সাংসদ বিষয়টি সমাধানের জন্য মেয়রকে নির্দেশ দিলেও এখন পর্যন্ত তিনি এ ঘটনার কোন সমাধান দেননি।

যোগাযোগ করার করা হলে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ছাগল জবাই দেওয়া বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। এছাড়া পৌর শহরের সৌন্দর্য্যে বর্ধনের জন্য রোপণ করা গাছ রক্ষার জন্য মাইকিং করেছি। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিচার করবো। তিনি বলেন, যে ছাগলটি জবাই করা হয়েছে বাচ্চা দুটো সেই ছাগলের না ।