বাঘের গায়ে মাঘের শীত!

জানুয়ারি ১৫, ২০১৮
Spread the love

   রেজবুর রহমান

বাংলার গ্রামে গ্রামে খুব ভোরে শয্যা ত্যাগ করে অনেকেই নাড়া-খড়, পাটকাঠি জ্বেলে আগুনে হাত-পা সেঁকে—শীতে বাংলার এক চিরচেনা দৃশ্য। এ সময় রোদ পোহানোর হিড়িক পড়ে যায়। সন্ধ্যার পরে সবাই শীতে জড়োসড়ো হয়ে পড়ে। রাত ৮টার মধ্যেই খাওয়াদাওয়া সেরে সবাই কম্বল নয়তো লেপের তলায়। এই মাঘের শীতেই বনের বাঘ প্রচণ্ড ঠান্ডায় কাতর হয়ে ঘন গাছপালার মধ্যে আশ্রয় নেয়।

‘মাঘের শীতে বাঘ পালায়’ প্রবাদের মর্মার্থ এবার হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে দেশের মানুষ। দিনপঞ্জিকায় রোববার মাঘের শুরু হলেও এবার সেই মাঘের শীত শুরু হয়েছে পৌষের ২০ তারিখ, অর্থাৎ ৩ জানুয়ারি। ১১ দিন পেরিয়ে গেলেও বিরতি দিচ্ছে না কনকনে শীত। দেশের বেশির ভাগ এলাকাটানা শৈত্যপ্রবাহকে ব্যতিক্রম বলছেন আবহাওয়াবিদেরা।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, শৈত্যপ্রবাহ আরও দু-তিন দিন চলতে পারে। এরপর ক্রমে তা দুর্বল হয়ে আসতে পারে। গত তিন দিনে দেশের বেশির ভাগ এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে।

তবে শীতের কষ্ট কমেনি, বরং কুয়াশা ঘন হয়ে সড়কে-নৌপথে দৃষ্টির সীমা কমিয়ে দিচ্ছে। সঙ্গে শীতল হু হু বাতাস বাড়িয়ে দিচ্ছে মানুষের ভোগান্তি, বিশেষ করে দরিদ্র মানুষ বেশ বিপদে পড়েছে।

সাধারণত তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে সেই পরিস্থিতিকে শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে ১০ দিনের বেশি টানা শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে ১৯৮৯, ২০০১, ২০০৩, ২০১১ ও ২০১৩ সালে। কিন্তু ওই শৈত্যপ্রবাহগুলো মূলত দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা যশোর ও চুয়াডাঙ্গা এবং উত্তরাঞ্চলের জেলা দিনাজপুরে সক্রিয় ছিল। কিন্তু চলমান শৈত্যপ্রবাহটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোর-চুয়াডাঙ্গা, উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর-কুড়িগ্রাম ও পঞ্চগড়, মধ্যাঞ্চলে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ, পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ জেলায় একযোগে সক্রিয় ছিল। এবছর অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করে  ৮ জানুয়ারি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

৩০ বছরের বেশি সময় আবহাওয়া নিয়ে গবেষণা করছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজের (বিসিএএস) বিশেষ গবেষণা ফেলো সমরেন্দ্র কর্মকার। দেশে তাপমাত্রা ধারাবাহিকভাবে বাড়লেও শীত কেন কমছে না, সেই প্রশ্নের জবাবে  বলেন, আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগর থেকে আসা বিশাল ও ঘন জলীয় বাষ্পের প্রবাহ ভারতের বিহার, উত্তর প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ এবং আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। আর উত্তরাঞ্চল দিয়ে জেট বায়ু সক্রিয় আছে। এই দুটি মিলে বাংলাদেশের তাপমাত্রা কমিয়ে দিয়েছে। এ কারণে এই টানা শৈত্যপ্রবাহ চলছে।