আন্তর্জাতিক ডেস্ক
হঠাৎ ফুঁসে উঠেছে মধ্যপ্রচ্যের প্রভাবশালী দেশ ইরানের রাজনীতি। এর আগে ২০০৯ সালে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন উত্তাপ ছড়ালেও পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমগুলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, এবারের এই বিক্ষোভ ২০০৯ সালের চেয়েও ব্যাপকতর।
ইরানের সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সরকারের অর্থনৈতিক নীতির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হাজার হাজার ইরানির বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে দেশটির বেশ কয়েকটি শহর। ইরানের সংবাদসংস্থা ফার্স বলছে, শুক্রবার দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের শহর কারমানশাহতে কয়েকশ লোক বিক্ষোভে অংশ নেয়। পুলিশ জল কামান ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। পরে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মাশহাদে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে মিছিল হয়। এর জেরে ইরানের খোরামাবাদ, ঝানজান, আহভাজ, তেহরানসহ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ হয়। এতে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আল খামেনি ও প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির বিরুদ্ধে স্লোগান দেয় বিক্ষোভকারীরা।
ইরানে এই বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্প ঘন ঘন টুইট করছেন। তিনি দেশটির সরকারকে সতর্ক করে মানুষের প্রতিবাদের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে বলেছেন। ইরান ২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি সই করে। এরপর থেকেই দেশটির সঙ্গে ওয়াশিংটনের ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। তবে যক্তরাষ্ট্রের তাৎক্ষণিক এমন প্রতিক্রিয়াকে সুনজরে দেখছেন না বিশ্লেষকেরা।
যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের এমন প্রতিক্রিয়াকে উদ্দেশ্যমূলক বলে মন্তব্য করেছেন তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ মারান্ডি। এই বিক্ষোভের নেপথ্য কারণ জানতে মারান্ডির সঙ্গে কথা বলে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা।
মারান্ডি বলেন, দেশটিতে অর্থনৈতিক সঙ্কট রয়েছে এটা ঠিক। কারণ, পরমাণু বিষয়ে সমঝোতার (জেসিপিও) পর ইরানের মানুষের আশা ছিল দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সতেজ হবে। জেসিপির পর সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের ব্যাপারে তাঁদের বৈরী আচরণ অব্যাহত রেখেছেন। এমনকি দেশটির বিরুদ্ধে ভিসা নিষিদ্ধকরণসহ নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য নতুন নতুন নানা আইন পাস করেছে। এরমধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র জেসিপি বার বার লঙ্ঘন করেছে।
মারান্ডি আরো বলেন, অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারনে ছোটেআকারে কিছু প্রতিবাদ হয়েছে। কিন্তু এমন কি ঘটেছে যে সেটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এমনকি বেশ কিছু শহরে তা ছড়িয়ে পড়ল। ‘আমি মনে করি যে অব্যবস্থাপনা নিয়ে ইরানিদের ক্ষোভ রয়েছে এবং তারা যা চা্ইছে তাতে বাধার মুখে পড়ছেন। আর এটাও সত্য এই অব্যবস্থাপনা আর অর্থনৈতিক মন্দার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের নিষেধাজ্ঞাও একটি কারণ।
‘তবে যখন বেশ কিছু মানুষ অর্থনৈতিক সমস্যার প্রতিবাদ করছে তখন আরো একটি বিষয় মাথায় রাখতে বলেন এই অধ্যাপক। মারান্ডি এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা বেশকিছু বিদেশি সরকারগুলোর স্বতঃস্ফুর্ত প্রতিক্রিয়া দেখছি।’
তাছাড়া ‘বিবিসির ফারসি ভাষার সম্প্রচার মাধ্যমটি যুক্তরাজ্য ও ভয়েস অব অামেরিকা মার্কিন সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এসব গণমাধ্যম প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে পশ্চিমা সরকারের দ্বারা পরিচালিত। এজন্য তারা এই বিক্ষোভকে বড় করে দেখাতে চেষ্টা করছে।আন্তর্জ্রাতিক ও আঞ্চলিক রাজনীতির কারণে এই বিক্ষোভকে তীব্র করারও চেষ্টা চালাচ্ছে।’
তিনি এও বলেন, এই বিক্ষোভ অর্থনীতি নয়, এই বিক্ষোভের পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্যে রয়েছে। কারণ বিক্ষোভে সরকারবিরোধী স্লোগান শুনতে দেওয়া হচ্ছে।
বিক্ষোভে ‘রুহানির মৃত্যু’, ‘ফিলিস্তিন ভুলে যাও’, ‘গাজায় না’, ‘লেবাননে না, আমার জীবন ইরানের জন্য এমন স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। এ্সব স্লোগান ইরানের বিদেশ নীতির বিরোধী।
আকষ্মিক এমন বিক্ষোভ নিয়ে ইরানের সরকার কতটা উদ্বিগ্ন? এমন প্রশ্নের জবাবে মারান্ডি বলেন, ‘ বিক্ষোভকারীরা সংখ্যায় বেশি নয়। বিক্ষোভকারীদের সবাই কিন্তু এক ধরনের স্লোগান দিচ্ছে না। এদের মধ্যে কেউ কেউ সরকার বিরোধী অাবার অনেকে ইরানের বিদেশনীতির বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে।’
‘বিক্ষোভের ভিডিও ফুটেজগুলোতে দেখবেন, অনেকেই ঐক্যবদ্ধভাবে হাত নেড়ে স্লোগান দিচ্ছে। আবার অনেককে মৌলবাদী কন্ঠেও স্লোগান দিচ্ছে। এরপর আপনি দেখা যাবে অনেকেই আবার স্লোগানের পুনরাবৃত্তি করছে না। অত্র্ওব এটা খুব সহজ বিষয় নয়।’ ইরানে বিক্ষোভের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানোর বিষয়টিও খুব কৌতূহল উদ্দীপক। বিক্ষোভকারীদের কঠোর হাতে দমন না করতে ট্রাম্প ইরান সরকার সতর্ক করেছেন। মারান্ডি বলেন, ‘ যুক্তরাষ্ট্রে যখন বিক্ষোভ-পাল্টা বিক্ষোভ হচ্ছে তখন ট্রাম্পের এমন চেহারা বেশ কৌতূকপ্রদ।
কারন, একদিকে শার্লোটভিলেতে একজন খুন হয়েছেন। অন্যদিকে, আমরা দেখছি দুর্ভিক্ষজনীত কারণে ধ্বংসপ্রাপ্ত ইয়েমেনে নির্দয় গণহত্যায় সৌদি আরবকে সমর্থন দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সিরিয়ায় চরমপন্থীদের সমর্থন দিয়েছে। অতএব, ইরানের অভ্যন্তরে মানবাধিকার বিষয়ে ট্রাম্প ও তাঁর দেশের কথা বলাটা খুবই বেমানান।’