নিজস্ব প্রতিবেদক
বাঙালীর উৎসবের দিন, আনন্দের দিন, মহা অর্জনের ঐতিহাসিক দিন। ১৬ ডিসেম্বর। লাখো ভাইয়ের রক্ত, মা-বোনো সম্ভ্রম, অশ্রু কত ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বিজয়ের দিন।
এই বিজয় যুদ্ধজয়ের অতুলনীয় আনন্দের। এই বিজয়ের মধ্যদিয়ে দিয়ে অর্জিত হয় আমাদের হাজার বছরের আরাধ্য প্রিয় বাংলাদেশ, প্রিয় জাতীয় স্বাধীনতা। আজ সেই সোনালী অর্জনের ৪৬ তম বার্ষিকী। ৪৬ বছর আগের এমন কুয়াশায় মোড়ানো এক শীতদিনে পাকিস্তানি ঘাতক বাহিনীকে পরাজিত করেছিল বীর বাঙালির কাছে।
মহান বিজয়ের এই দিন বাঙালী জাতির জীবনে যেমন আনন্দের-গৌরবের। তেমনি বেদনারও। প্রিয় স্বাধীনতাকে অর্জনের জন্য কত মূল্য দিতে হয়েছে এ জাতিকে। নয় মাসের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে বাংলার প্রতিটি ধূলিকণা, জল-নদী। তিন লাখ মা-বোন তাঁদের সম্ভ্রম হারিয়েছেন। অগণন মানুষ পঙ্গু হয়েছে, ঘরদোর হারিয়েছেন, দুর্বিষহ যন্ত্রণা সহ্য করছেন। দখলদার পাকিস্তানি বর্বর বাহিনীর নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ, লুন্ঠন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের মত জঘন্য মানবতা বিরোধী অপরাধের শিকার হয়েছিল বাঙালী।
২০০ বছর ব্রিটিশ পরাধীনতার শৃংখল ভাঙার পর ভারতবর্ষ ভাগ হয়েছিল জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে। ব্রিটিশ উপনিবেশের শিকল ছিড়ে ভারত-পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করলেও বাঙালির শোষণমুক্তি ঘটেনি । পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক-বেসামরিক শাসকদের শোষণ- নির্যাতনে বাঙালী জাতির মধ্যে তীব্র স্বাধীনতা আকাংখা আরও তরান্বিত হয়। তারা বাঙালীদের ভাষার ওপর আঘাত হানে। বাঙালী বুকের রক্ত দিয়ে তা রুখে দেয়। অর্থনৈতিক, সামজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে বাঙালিদের ওপর শোষণ-নির্যাতন, দমন-পীড়ন, বঞ্চনা ক্রমেই বাড়তে থাকে।
বাঙালির এই মুক্তির আকাংখাকে সামনে আনেন বাঙালীদের নন্দিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।তিনি নির্ভয়ে রুখে দাঁড়ান। এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন, বাঙালী ঐক্যবদ্ধ করেন। একপর্যায়ে ঘোষণা করেন ঐতিহাসিক ছয় দফা। বাঙালীরা এই ছয়দফার দাবি নিয়ে ফুঁসে ওঠে। শুর করে অসহযোগ আন্দোলনে। বঙ্গবন্ধু জাতিকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের জন্য ঐক্যবদ্ধ করেন। মানসিকভাবে প্রস্তুত করে তোলেন।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। মন্ত্রমুগ্ধের মত সেই দরাজ কন্ঠে বঙ্গবন্ধু বললেন সেই , ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’বঙ্গবন্ধুর এই উক্তি ছিল বাঙালীর হাজার বছরের আকাংখারই প্রতিফলন।
এই অবিসংবাদিত নেতা তাঁর ভাষণে শত্রুর মোকাবিলায় যার কাছে যা আছে তা-ই নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলেন।
বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণের পর মুক্তির আকাংখায় বাঙালীরা উন্মাতাল হয়ে ওঠে। আর পাকিস্তানি ঘাতক সেনারা সেই আকাংখা দমন করার জন্য ২৫ মার্চ রাতে আকস্মিক ঘুমন্ত বাঙালিদের ওপর চালায় পৃথিবীর নির্মম, ভয়ঙ্গকর গণহত্যা। কিন্তু তাতে দমানো যায়নি। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাসের সংগ্রাম শেষে ১৯৭১ সালের এই দিনে বিজয়ের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা।
জাতিসংঘের শিক্ষা-সংস্কৃতি সংস্থখা ইউনেসকো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের সেই কালজয়ী ভাষণকে এবার বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই এবারের বিজয় দিবস বাঙালী জাতির জন্য এক ভিন্ন মাত্রার। ভিন্ন প্রেক্ষাপটের।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন তাদের নিজ নিজ কর্মসূচি নিয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।