ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস এ সফল হওয়ার ১২ টি উপায়

নভেম্বর ২৫, ২০১৭
Spread the love

মোঃ রাকিবুল ইসলাম
প্রতিষ্ঠাতা, রাকিবস আইএলসি

বর্তমানে বাংলাদেশে অনলাইন আউটসোর্সিং অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বাইরের দেশে এটা একটি স্বীকৃত পেশা হলেও কিন্তু আমাদের দেশে অনেকেই এটাকে পেশা হিসেবে তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এর পেছনের অন্যতম কারণ হল অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করতে না পারা। অনেক সময় দীর্ঘমেয়াদী ক্লায়েন্ট না পাওয়াও এর অন্যতম কারন। নিচের পরামর্শগুলো নিশ্চিত করতে পারলে যেকেউ আউটসোর্সিং কে একটি দীর্ঘমেয়াদী পেশা হিসেবে নিতে পারবেন। 

সুনাম ই সবকিছু

ব্যবসা হোক কিংবা চাকরি, সকল ক্ষেত্রেই আপনার সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। আর এ কথাটি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোর জন্যও প্রযোজ্য। অনলাইনে কাজ করতে গেলে আপনাকে প্রতিটি কাজে দক্ষতা এবং কমিটমেন্ট ঠিক রাখতে হবে।

প্রতিটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস এ কাজের রেটিং কিংবা সাকসেস স্কোর দেয়া থাকে যা কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক। আপনাকে সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনভাবেই আপনার কাজের জন্য আপনার ক্লায়েন্ট নেগেটিভ রেটিং না দেন। আপনি যদি কাজ করার সময় দক্ষতা এবং কমিটমেন্ট ঠিক রাখেন তবে ক্লায়েন্ট আপনাকে ভাল রেটিং দিতে বাধ্য।

নতুন প্রজেক্ট নেয়ার আগে যা করবেন

সকল ফ্রিল্যান্সাররা একটা জিনিস ভুল করে যে, তারা সামনে যে প্রজেক্ট দেখেন, সেখানেই আবেদন করেন। এমনকি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা প্রজেক্ট এর বিস্তারিত না পড়েই আবেদন করেন যা অনলাইনে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে সবথেকে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিচের ৫ টিপস কাজে লাগাতে পারেন-

1. প্রজেক্টটি ভালোভাবে বুঝা

প্রজেক্ট এ প্রদত্ত কাজের বর্ণনা ভালভাবে পড়তে হবে। অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে সম্পূর্ণ লেখাটি পড়বেন। এর কোন বিকল্প নেই।

পড়ার পড়ে আপনি সিদ্ধান্ত নেবেন যে ওখানে যা চাওয়া হয়েছে তা আপনি নির্দিস্ট সময়ের মধ্যে করে দিতে পারবেন কি না। কাজটি করতে গেলে যে সকল স্কিল দরকার হবে সেগুলো আপনার আছে কি না। যদি মনে করেন সবকিছু ঠিক আছে, তাহলে দ্রুত আবেদন করে ফেলুন।

2. প্রজেক্টটি করার জন্য আপনার যথেষ্ট সময় আছে কি না

প্রজেক্টটি কবে শেষ করতে হবে সে ব্যাপারে স্পস্ট ধারণা নিন। ক্লায়েন্ট নির্ধারিত দিনের মধ্যে আপনি শেষ করতে পারবেন কি না তা ভেবে দেখুন। একাধিক কাজ হাতে থাকলে একটি প্ল্যান করে সময় নির্ধারণ করতে পারেন। ফ্রিল্যান্সিং এ সফল হতে হলে আপনাকে অবশ্যই নির্দিস্ট সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করতে হবে।

3. আপনি ই যে কাজটির জন্য যোগ্য ব্যক্তি তা প্রমাণ করুন

কাজে আবেদনের সময় আপনাকে লিখে প্রমাণ করতে হবে যে আপনি ই এই প্রজেক্ট এর জন্য যোগ্যতম ব্যক্তি। এজন্য আবেদনের শুরুতেই আপনার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ক্লায়েন্টকে ধারণা দিন। পূর্বে যদি একই ধরণের কাজের অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে অবশ্যই তাঁকে জানান। পূর্বের কাজটি শেষ করতে কতদিন লেগেছিল, কি কি দক্ষতার প্রয়োজন হয়েছে সেগুলো উল্লেখ করতে পারেন।

4. ক্লায়েন্টকে পর্যবেক্ষণ করুন

কোন প্রজেক্ট এ আবেদনের পূর্বে ক্লায়েন্ট এর প্রোফাইলটি ভালভাবে পড়ে দেখুন। কোন খারাপ রেটিং থাকলে সেটি পড়ে দেখুন। ক্লায়েন্ট কোন দেশের তা খেয়াল রাখুন। এশিয়া মহাদেশের কোন ক্লায়েন্ট এর সাথে কাজ না করাই উত্তম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা কম পারশ্রমিক দিতে চেস্টা করেন।

5. আপনার সময় ম্যানেজ করুন

সারাদিনে আপনি শুধুমাত্র নির্দিস্ট সময় পর্জন্ত কাজ করতে পারেন। তাই আপনার কাজের সময় আপনাকেই ম্যানেজ করতে হবে। এজন্য আপনি একটি “To-Do List” ব্যবহার করতে পারেন। অনলাইন “To-Do List” এর মধ্যে Evernote এবং Trello সর্বাধিক জনপ্রিয়।

প্রজেক্ট এর কাজ শুরু করার সময় করণীয়

6. মিটিং

প্রথমেই ক্লায়েন্ট এর সাথে একটি মিটিং করে সবকিছু বুঝে নিন।

7. কাজের ডেডলাইন ঠিক করুন

ক্লায়েন্ট এর সাথে মিটিং একটি ডেডলাইন ঠিক করে নিন। মনে রাখবেন অনলাইনে কাজ করার ক্ষেত্রে ডেডলাইন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রজেক্ট শুরু করার সময় দুই জনের মিটিং একটি সুবিধাজনক ডেডলাইন ঠিক করে নিন।

8. কাজ সঠিকভাবে করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও উপকরণ নিশ্চিত করুন

আপনার কাজটি করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য অবশ্যই ক্লায়েন্ট এর নিকট থেকে নিয়ে নিন। আর যদি ক্লায়েন্ট এর নিকট থেকে কোন টুলস কিংবা উপকরণ দরকার হয় তাও চেয়ে নিন। মোট কথা কাজ করার সময় প্রয়োজনীয় তথ্য ও উপকরন নিশ্চিত করতে হবে।

প্রজেক্ট এর কাজ করার সময় করণীয়

9. ক্লায়েন্ট এর সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখুন

প্রজেক্ট শুরু থেকে শেষ পর্জন্ত ক্লায়েন্ট এর সাথে ইমেইল/স্কাইপ কিংবা মার্কেটপ্লেস এর মেসেজ এর মাধ্যমে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখুন। যেকোন সমস্যা হলে তাকে জানান। নিয়মিত কাজের আপডেট দিতে হবে ক্লায়েন্টকে। 

10. প্রজেক্ট এর মাঝ সময়ে ক্লায়েন্ট এর রিভিউ চান

যখন মনে করবেন প্রজেক্ট এর অর্ধেক কাজ শেষ হয়েছে, তখন ক্লায়েন্ট এর নিকট থেকে মতামত নিন। ক্লায়েন্ট এর কোন পরামর্শ থাকলে সেটি প্রজেক্টে অন্তর্ভুক্ত করুন।

11. নিজেকে ক্লায়েন্ট ভাবুন!

কাজ করার সময় নিজেকে ক্লায়েন্ট ভাবুন। মনে করুন যে আপনি যদি ক্লায়েন্ট হতেন, তাহলে কাজটি কিভাবে চাইতেন। সেভাবে কাজটি করে ফেলুন।

12. ক্লায়েন্ট যাতে খুশি হয় তা নিশ্চিত করুন

সবশেষে কাজ ডেলিভারি দেয়ার পরে ক্লায়েন্ট খুশি হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করুন। এজন্য তাঁকে মতামত দেয়ার জন্য অনুরোধ করুন। যদি মনে হয় ক্লায়েন্ট খুশি নন, তবে নির্দিধায় কাজটি পুনরায় করে দিন কিংবা কোথাও সমস্যা মনে হলে সেই অংশ সমাধান করুন।