আয়না২৪ ডেস্ক
রোহিঙ্গাদের ছেড়ে আসা উত্তর রাখাইন রাজ্যে আবাদি জমি থেকে ধান কেটে নিতে শুরু করেছে মিয়ানমার সরকার। স্থানীয কর্মকর্তাদের বরাত ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য দিয়েছে।
এএফপির খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানমার সরকারের এমন পদেক্ষেপের ফলে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় পালিয়ে যাওয়া ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গার রাখাইনে ফেরা নিয়ে উদ্বেগ বাড়াতে পারে। গত আগস্টের শেষের দিকে শুরু হওয়া সহিংসতায় মিয়ানমারের এই সীমান্ত অঞ্চলের বেশির ভাগই এখন জনমানবশূন্য। রোহিঙ্গাবিরোধী মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘ।
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে ‘রাষ্ট্রহীন সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার সংখ্যা ৬ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। উত্তর রাখাইনের রোহিঙ্গাদের শত শত গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছে, রাখাইনের উগ্র বৌদ্ধদের সহযোগিতায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী সেখানে হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করছে।
আন্তর্জাতিক ব্যাপক চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবত্যনে অঙ্গীকার করেছে। যারা সেদেশের বাসিন্দা হিসেবে প্রমাণ দেখাতে পারবেন শুধুমাত্র তাদেরকেই ফেরত নেওয়া হবে- এমন মন্তব্য করেছেন দেশটির নেত্রী অং সান সু চি।তবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবত্যনের এই পরিকল্পনা এখনো অনিশ্চিতই রয়ে গেছে।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বলছে, শনিবার রাখাইনের মংডুর ৭১ হাজার একর জমির ধান কাটতে শুরু করেছে দেশটির সরকার। ব্যাপক সহিংসতায় মংডুর অধিকাংশ এলাকা থেকে পালিয়েছে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা।
মংডু কৃষি বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা থেইন ওয়েই বলেন, আমরা আজ থেকে মিও থু জি গ্রামের জমি থেকে ধান কাটতে শুরু করেছি। আমরা বাঙালিদের কিছু ধানক্ষেত কাটতে যাচ্ছি; যারা বাংলাদেশে পালিয়েছে। বৌদ্ধ অধ্যুষিত মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
তবে সরকার এই ধান কী করবে বা প্রক্রিয়া কি হবে সেবিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দিতে পারেননি ওই কর্মকর্তা। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ফসল কাটার কাজে সহায়তা করার জন্য দেশের অন্যান্য অংশ থেকে শ্রমিকদের নিয়ে আসা হয়েছে।
রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করতেই একাজ করা হচ্ছে বলে মিয়ানমার সরকারের ব্যাপক সমালোচনা করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ফিল রবার্টসন বলেন, ফসল কাটায় সরকারি কর্মকর্তার নেতৃত্ব দেয়ায় বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। যে রোহিঙ্গারা এসব জমিতে বীজ বপন করেছিলেন সেটার চেয়ে ফসল কাটতেই বেশি মনযোগী মিয়ানমার সরকার।