আয়না২৪ ডেস্ক
জর্ডানের রানী রানিয়া আল আবদুল্লাহ বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধন অভিযান চলছে। এ অবস্থায় বিশ্ব সম্প্রদায় নীরব ভূমিকা পালন করতে পারে না। তিনি বলেন, শুধু মানবিক কারণে নয়, ন্যায়বিচারের স্বার্থে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।
সোমবার কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
জর্ডানের রানী রানিয়া আল আবদুল্লাহ বলেছেন, রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর যে বর্বর নিপীড়ন চলছে তা বিশ্বের সবচেয়ে জঘন্যতম ঘটনা। মিয়ানমারের এ গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার হতে হবে। তিনি বিশ্ববাসীকে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান।
রানী রানিয়া জর্ডান থেকে বিশেষ বিমানে সরাসরি কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান বেলা ১১টায়। তার সঙ্গে রয়েছে ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম চৌধুরী এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি তাকে স্বাগত জানান। দুপুর ১২টায় জর্ডানের রানী কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে পৌঁছান। তিনি ক্যাম্পের কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখেন। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় রোহিঙ্গারা তাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সরকারের বর্বর নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন। রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা শুনে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এ ছাড়াও তিনি পর্যবেক্ষণ করেন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোর কার্যক্রম। ক্যাম্পে একটি স্কুলে তিনি মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসা রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের সঙ্গে খেলায় অংশ নিয়ে কিছুটা সময় কাটান।
পরিদর্শন শেষে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে আইওএম-এর অস্থায়ী হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন রানী। সংবাদ সম্মেলনে রানী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের একার পক্ষে বিশাল এ বোঝা বহন করা সম্ভব নয়। বিশ্ব সম্প্রদায়কে এ সংকট মোকাবেলায় এগিয়ে আসতে হবে।
জর্ডানের রানী রানিয়া বলেন, আমি এখানে রোহিঙ্গাদের অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের কাছ থেকে পরিস্থিতি সম্পর্কে যা শুনেছি তা সত্যিই ভয়াবহ। এখানে ৯৫ শতাংশ রোহিঙ্গা মৌলিক চাহিদা-সংকটে রয়েছে। এখানে যারা আশ্রয় নিয়েছে তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশ শিশু। প্রায় চার লাখ শিশু পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। তাদের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা সংকটে জর্ডান বাংলাদেশের পাশে থাকবে। আশা করছি, বিশ্বের অন্য দেশগুলোও এ সংকটে এগিয়ে আসবে।
পরিদর্শনকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম চৌধুরী, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল ও আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরীসহ জর্ডান দূতাবাস ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জর্ডানের রানীর কুতুপালং ক্যাম্প পরিদর্শনকালে কপবাজার-টেকনাফ সড়ক ছিল নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা। র্যাব, পুলিশ, অতিরিক্ত পুলিশ, আনসার, বিজিবিসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কড়া নজরদারিতে রাখে।
জর্ডানের রানী ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির (আইআরসি) একজন বোর্ড সদস্য। একই সঙ্গে তিনি জাতিসংঘের মানবিক সংস্থাগুলোর পরামর্শক।