• Home  / 
  • বিশ্ব  / 

মিয়ানমারের হুঁশিয়ারিঃ নিষেধাজ্ঞায় ভালো ফল আসবে না

অক্টোবর ১২, ২০১৭
Spread the love

আয়না২৪ ডেস্ক

রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের  জেরে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপিয় ইউনিয়নের সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা কারো জন্য ভালো কোনো ফল বয়ে আনবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে দেশটির  পরিকল্পনা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব ইউ টুন টুন নাইং।  মিয়ানমার টাইমসের এক প্রতিবেদনে বুধবার এই হুঁশিয়ারির কথা জানানো হয়।

গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে পুলিশের ওপর রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর থেকে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়ছে। সেনাবাহিনীর নৃশংস অভিযানে লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমেরা বাংলাদেশে পালিয়েছে। রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর ছয় সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনও রোহিঙ্গা মুসলিমরা রাখাইন ছেড়ে পালাচ্ছে।

আক্রমণাত্মক অভিযানে লাখো রোহিঙ্গা পালিয়ে আসার ঘটনায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের  ইঙ্গিত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

এর প্রত্যুত্তরে মিয়ানমার টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘যদি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় তাহলে কয়েক বছরের উন্নয়নের পর দেশটির বর্তমান অর্থনীতিকে পেছনের দিকে ঠেলে দিতে পারে।’

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। এটা ভালো কোনো লক্ষণ নয়। নিষেধাজ্ঞা আরোপের অর্থ হচ্ছে কোনো দেশকে অর্থনৈতিকভাবে অন্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বাধা দেয়া। তারা আমাদের অবাধ ব্যবসা-বাণিজ্যের অধিকার ও দেশের সঠিক উন্নয়নে বাধা দিচ্ছে এবং এটা ভালো কিছু নয়’- বলেন ইউ তুন তুন নাইং।

মিয়ানমারের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘যদি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় তাহলে অর্থনীতির ওপর সরাসরি কোনো প্রভাব পড়বে না। বাণিজ্য এবং সহযোগিতার মাত্রা কম থাকায় এতে কোনো সমস্যা হবে না।’

তবে জাতিগত শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে দেশটিকে পেছনের দিকে ঠেলে দিতে পারে। এটি দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সংস্কারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।’ মিয়ানমার টাইমসের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়। 

এদিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অব্যাহত গণহত্যা ও সহিংসতার মধ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ রোহিঙ্গা ইস্যুতে কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদনের ওপর শুনানি করতে অনানুষ্ঠানিক এক বৈঠকে বসছে। আগামীকাল  শুক্রবার  এই বৈঠকের কথা রয়েছে।   সেপ্টেম্বর মাসের পর এটি নিরাপত্তা পরিষদের দ্বিতীয় বৈঠক।

অন্যদিকে জাতিসংঘের রাজনীতি বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা জেফ্রি ফেল্টম্যান রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা করতে চারদিনের সফরে শুক্রবার মিয়ানমার যাওয়ার কথা আছে।  জাতিসংঘ বলছে, জাতিগত নিধন চালাচ্ছে মিয়ানমার। তারা এও বলেছে, রোহিঙ্গাদের পুরোপুরি বিতাড়িত করতেই এই  অভিযান চালাচ্ছে দেশটি। জেফ্রি এই  সংকট নিয়ে কথা বলতেই মিয়ানমার যাচ্ছেন। 

জাতিসংঘসহ পশ্চিমা বিশ্বের অব্যাহত কূটনৈতিক চাপে দেশটির সেবাহিনীর ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও  ইউরোপিয় ইউনিয়নের সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কায় আছে দেশটি। এনিয়ে  দেশটির প্রভাবশালী গণমাধ্যম মিয়ানমার টাইমস প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমার এখনও গণতান্ত্রিক যাত্রা ও জাতীয় ঐক্যের পথে শুরুর দিকে রয়েছে। তুলনামূলকভাবে দেশটির অর্থনীতি দ্রুত অগ্রগতি লাভ করছে। আগের বছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে; যা ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। নতুন বিনিয়োগ আইন কার্যকর করা হয়েছে এবং শিগগিরই নতুন কোম্পানি আইনও অনুমোদন পাবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

এছাড়া বেশ কিছু বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও গভীর সমুদ্র বন্দরে বড় ধরনের বিনিয়োগের ব্যাপারে আলোচনা চলছে। ফলে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এবং লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে এসব প্রক্রিয়া  বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখপাত্র ইউ জ্য হতেই বলেন, ‘কোন ধরনের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা চলছে সেটি কোনো ব্যাপার নয়; তবে গণতন্ত্রের রূপান্তর, অভ্যন্তরীণ শান্তি বজায় রাখা এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য আমাদের প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা পশ্চিমাদের উচিত হবে না।’

মিয়ানমার টাইমসের প্রতিবেদন বলা হয়, দেশীয় যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, পূর্ববর্তী প্রশাসন থেকে বর্তমান সরকার, সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠী অভ্যন্তরীণ শান্তি বজায় রাখতে সম্মত হয়েছে। তবে জাতিগত, ধর্মীয় এবং সামরিক বিষয়গুলো এখনো অত্যন্ত সংবেদনশীল।

দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ইউ ইয়ে মিন ওও বলেন, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে অভ্যন্তরীণ বিভাজন ও অনৈক্য দেখা দিতে পারে।’

ইউ তুন তুন বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে মিয়ানমারের অর্থনীতিতে তা সীমিত প্রভাব ফেলতে পারে। নিষেধাজ্ঞার কারণে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ব্যবসা বাণিজ্যের ওপর। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিয়ানমারের ব্যবসা-বাণিজ্য সীমিত। চীন, জাপান, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের তুলনায় ইইউ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য কম হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা মিয়ানমারের অর্থনীতির ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারবে না।’

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানাচ্ছে, সহিংসতার জেরে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় সোয়া পাঁচ লাখ। তবে বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা সাড়ে ছয় লাখ ছাড়িয়েছে। দিন দিন রোহিঙ্গা স্রোত কোনো মতেই থামছে না। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। সহিংসতায় প্রাণ গেছে তিন হাজারের বেশি মানুষের। বেসরকারিভাবে এই সংখ্যা দশ হাজার পার করেছে মধ্য সেপ্টেম্বরেই। কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদল সেখানে কাজ করার সুযোগ না পাওয়ায় নতুন তথ্য জানা যাচ্ছে না।