আয়না ২৪ ক্রীড়া ডেস্ক
কোনো ঘরোয়া টুর্নামেন্ট মানেই অচেনা খেলোয়াড়দের নিজেকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, চেনা তারকার নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া। আর মঞ্চ যখন বিপিএল, তখন তো সেটা তারকার মিলনমেলা। সেখানে আলো ছড়াবেন তারারাই। এই তারাদের মধ্যেও আগ্রহটা ছিল নিজেদের চেনা তারাদের নিয়ে।
দুয়ারে নিউজিল্যান্ড সফর। নিউজিল্যান্ডের পেস–বান্ধব কন্ডিশনে বাংলাদেশের সাফল্য–ব্যর্থতার অনেকটাই নির্ভর করছে পেসারদের ওপর। প্রথমেই তাই বাংলাদেশের পেসারদের খতিয়ানটা নিয়ে নেওয়া যাক।
পেস বোলারদের প্রসঙ্গে প্রথমেই আক্ষেপের গল্প শোনাতে হচ্ছে। না, পেসাররা খারাপ করেননি, কিন্তু যে দুজন ছিলেন সবচেয়ে উজ্জ্বল, তাঁদেরই পাওয়া যাবে না এ সফরে। ৮ ম্যাচে ১৫ উইকেট পেয়ে নিজের নামের পাশ থেকে ‘টেস্ট বোলার’ খেতাবটা মাত্রই মুছে ফেলছিলেন মোহাম্মদ শহীদ। এরপরই চোটের ধাক্কা, সফর থেকেই ছিটকে গেলেন বিপিএলের আগেই চোট কাটিয়ে ফেরা শহীদ। আর একদম শেষ দিকে এসে দলের বাইরে চলে গেলেন শফিউলও। ১৩ ম্যাচে ১৮ উইকেট পেয়ে শফিউলই খুলনার বোলিংয়ের নেতৃত্ব দিয়েছেন পুরো বিপিএলে। এ ছাড়া মাশরাফি বিন মুর্তজা পেয়েছেন ১৩ উইকেট, তবে ৬.৪৩ রান রেটটাই সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক জাতীয় দলের জন্য।
তাসকিন আহমেদ ও রুবেল হোসেন নিয়েছেন ১৫ উইকেট, তবে দুজনই ছিলেন বেশ খরুচে। আল আমিন হোসেন তো সুযোগই পেলেন না, ৫ ম্যাচ খেলে পেয়েছেন ৫ উইকেট। তিনি অবশ্য নেই নিউজিল্যান্ড সফরের দলে। তবে দলে থাকা কামরুল ইসলাম ও শুভাশিস রায় হতাশ করেছেন, দুজনই নিয়েছেন মাত্র ৭ উইকেট।
নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন পেস-বান্ধব হলেও বাংলাদেশের স্পিননির্ভরতা তো আড়াল হয়ে যাবে না। জাতীয় দলের স্পিনাররা বিপিএলে যে দুর্দান্ত ছিলেন, তা–ও নয়। আরাফাত সানি পেয়েছেন ১৩ উইকেট, মাত্র ৬.২৯ রান রেটে। তবে তাঁর বোলিং অ্যাকশন নিয়ে আবারও উঠেছে প্রশ্ন। সাকিব আল হাসানের শিকার ফাইনালের আগে ১১টি। মেহেদী হাসান মিরাজও পেয়েছেন ১১ উইকেট, আর বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম পেয়েছেন ১০টি।
১০ উইকেট পেয়েছেন মাহমুদউল্লাহও, উইকেট–সংখ্যার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ—যে সময়ে বল করেছেন। ম্যাচের শেষ ওভারে বল করে খুলনা টাইটানসকে দুটি ম্যাচ জিতিয়েছেন। তবে যে লাইন লেংথে উইকেট পেয়েছেন, সেটি খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। আর চমক দিয়ে নিউজিল্যান্ড সফরের দলে ঢুকে পড়া লেগ স্পিনার তানভীর হায়দার খেলেছেনই মাত্র এক ম্যাচ। ১ উইকেট পেয়েছেন, বোলিংও দেখে মন ভরেনি সেদিন।
সে তুলনায় ব্যাটসম্যানদের অনেকেই পেরেছেন প্রত্যাশা পূরণ করতে। ফাইনালের আগ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৪৭৬ রান তামিম ইকবালের। ১৩ ম্যাচে ৬টি ফিফটি দেশসেরা ওপেনারের, তাতে ৫৩ চার, ১১ ছক্কা। এক বিপিএলে সবচেয়ে বেশি ফিফটির রেকর্ড গড়েছেন তামিম। শুধু স্ট্রাইক রেটটা অবশ্য (১১৫) আরও ভালো হতে পারত। সে তুলনায় মুশফিকুর রহিম অনেকটাই এগিয়ে, ১৩৫ স্ট্রাইকরেট তাঁর। রানটাও খারাপ করেননি, ৩৪১। সর্বোচ্চ ৮১ রানের ইনিংসটিসহ ২টি ফিফটি।
মাহমুদউল্লাহও আছেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের মধ্যে। ১৪ ম্যাচে ৩৯৬ রান তাঁর, সঙ্গে ১১৮ স্ট্রাইকরেটটাই টুর্নামেন্টজুড়ে খুলনা দলকে এনে দিয়েছে ভালো সংগ্রহ। সাব্বির রহমানও ভালো করেছেন, ১২২ রানের এক ইনিংসসহ ৩৫১ রান তাঁর। তবে স্ট্রাইক রেটটা (১১৭) তাঁর নামের সঙ্গে যায় না।
ভালো করেছেন মোসাদ্দেক হোসেন (২৯৯) ও ইমরুল কায়েসও (২৫৭)। এ দুজনই ১২০–এর বেশি স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন। তবে চমক হয়ে এসেছেন মুমিনুল হক। রাজশাহী কিংসের হয়ে ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে ৩০৪ রান তাঁর, তাতে ৩টি ফিফটি। সে তুলনায় অনুজ্জ্বল সাকিব, ১৩ ম্যাচে ১২৪ স্ট্রাইকরেটে ২১৪ রান করলেও কোনো ফিফটি পাননি। নিউজিল্যান্ড সফরের প্রাথমিক দলে না থাকা নাসির হোসেনও ব্যর্থ, ১১৭ স্ট্রাইকরেটে করেছেন ১৯০ রান।
তবে দলে যাঁরা আছেন, সেই নাজমুল হোসেন, সৌম্য সরকার ও শুভাগত হোমের পারফরম্যান্স হতাশাজনক। নাজমুল তবু প্রথমবারের মতো বিপিএল খেলতে নেমে ১টি ফিফটিসহ ১৮০ রান করেছেন ১০৯ স্ট্রাইকরেটে। সৌম্য কিংবা শুভাগতর সেই অজুহাতও নেই। ১২ ম্যাচে ১৩৫ রান সৌম্যের। পুরো টুর্নামেন্টে ৯ চার ও ৬ ছক্কা! স্ট্রাইকরেট ৯১.২১। স্ট্রাইকরেটে শুভাগত একটু ভালো, ঠিক ১০০। কিন্তু রানটা তিনি করেছেন সৌম্যের চেয়েও কম, ১৩ ম্যাচে ১১৫ রান।
ব্যাটে-বলের পাশাপাশি এবারের বিপিএলে মাহমুদউল্লাহর নেতৃত্বও আলাদা করে নজর কেড়েছে। এটিও কম পাওয়া কিন্তু নয়!