আয়না২৪ ডেস্ক
এবার শান্তিতে নোবেল পাচ্ছেন কে? এনিয়ে জল্পনা এখন সর্বত্র। নোবেল পুরস্কার, তা সে যে ক্যাটাগরিতেই হোক, অতি মূল্যবান। তবে সব সময় বিশ্ববাসীর চোখ থাকে একটি ক্যাটাগরির দিকে। আর তা হলো- শান্তি। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার। শান্তি প্রতিষ্ঠায় যিনি কিংবদন্তি হয়ে ওঠেন এমন একজন বা একাধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। আজ শুক্রবার নরওয়ের স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় (বাংলাদেশ সময় বিকাল তিনটায়) এ ঘোষণা দেওয়ার কথা। কিন্তু কে পাচ্ছেন এবারের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার- তা নিয়ে আগেভাগেই শুরু হয়ে যায় জল্পনা-কল্পনা।
নোবেল কমিটি মনোনীতদের নাম প্রকাশে মুখে কুলুপ এঁটে থাকে সব সময়ই। এবারো তাই। ফলে তাদের কাছ থেকে কোনো নাম জানা যাচ্ছে না যে, শর্টলিস্টে কাদের নাম আছে। তবে তারা এটুকু জানিয়েছে, এবার ৩১৮টি মনোনয়ন জমা পড়েছে। এর মধ্যে ২১৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি। বাকি ১০৩টি হলো সংগঠন। এ যাবৎ শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য সর্বোচ্চ যতগুলো মনোনয়ন এসেছে তার মধ্যে এবারের সংখ্যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
২০১৬ সালে এ সংখ্যা ছিল রেকর্ড সংখ্যক ৩৭৬টি। বার বার ঘুরেফিরে আসছে সেই প্রশ্ন এবার শান্তিতে নোবেল পুরস্কার কোথায় যাচ্ছে এশিয়া, ইউরোপে, যুক্তরাষ্ট্রে নাকি অন্য কোথাও। এ নিয়ে অনেক জল্পনা। অনেক কথা বলাবলি। কানকথা মতে অথবা নিশ্চিত করে লন্ডনের অনলাইন দ্য গার্ডিয়ান বলছে, মনোনয়নের তালিকায় থাকতে পারে লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ, লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও, বৃটিশ প্রয়াত রাজনীতিক জো কক্স, বুলগেরিয়ান অর্থডক্স চার্চ, ডেভিড বোউই, ভ্লাদিমির পুতিন ও ডনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু অসলোতে নরওয়ের
পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতি বছরের মতো এবারো একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করেছে। তার মধ্যে সামনের সারিতে রয়েছেন কয়েকজন ব্যক্তি ও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এই তালিকাটি এ রকম- ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফ ও ফেডেরিকা মঘেরিনি, দ্য হোয়াইট হেলমেটস ও তাদের নেতা রায়েদ আল সালেহ, ক্যান ডানদার ও কামহুরিয়েত, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন, অ্যাঙ্গেলা মারকেল, পোপ ফ্রাঁসিস, আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন ও রাইফ বাদাবি। এতে বলা হয়েছে, এবার শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য শক্ত অবস্থানে আছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মঘেরিনি। তারা ইরানের পারমাণবিক চুক্তিতে মূল ভূমিকা রেখেছেন। এখন যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে, ঠিক এ সময়ে পারমাণবিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণের প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন দিতে পারেন জুরিরা। ইরানের সঙ্গে এ চুক্তি ছিন্ন করতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প এ চুক্তিকে বিব্রতকর বলে আখ্যায়িত করেছেন। উল্লেখ্য, ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি সম্পাদনে সমঝোতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও। নোবেল কমিটি ওই চুক্তিটির পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন প্রত্যাশা করে পুরস্কার ঘোষণা করতে পারে।
দ্য হোয়াইট হেলমেটস ও রায়েদ আল সালেহ: এটি একটি সংগঠন। আগে এটি পরিচিত ছিল সিরিয়ান সিভিল ডিফেন্স নামে। তাদের এর আগেও কয়েকবার শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য নমিনেশন দেয়া হয়েছিল। এর কারণ, গৃহযুদ্ধ কবলিত সিরিয়ায় সাধারণ বেসামরিক মানুষজনদের তারা সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ মানবিক সেবা দিয়ে যাচ্ছে এ সংগঠনটি। যখন দেশের সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে তখন তারা সামাজিক সংহতি প্রকাশ করে বিপর্যস্ত মানুষের সেবায় কাজ করছে। আর এ সংগঠনের নেতা রায়েদ আল সালেহ।
ক্যান ডানদার ও কামহুরিয়েত: ক্যান ডানদার তুরস্কের একজন কলামনিস্ট এবং প্রধান সম্পাদক। তিনি ধর্ম নিরপেক্ষ। তার পত্রিকা কামহুরিয়েত। বর্তমানে তিনি স্বেচ্ছা নির্বাসনে বসবাস করছেন জার্মানিতে। নিজেদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করার কারণে তার সহকর্মীদের অনেকের বিরুদ্ধে তুরস্কে রাষ্ট্রীয়ভাবে আনা হয়েছে সন্ত্রাসের অভিযোগ। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোগান সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যে দমনপীড়ন চালাচ্ছেন তাতে ক্যান ডানদার ও তার পত্রিকা কামহুরিয়েতকে পুরস্কার দিলে তা হবে এরদোগানের বিরুদ্ধে এক প্রতীকি আঘাত।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন: অতীতে জাতিসংঘের এই এজেন্সি দু’বার শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জিতেছে। কিন্তু ১৯৮১ সালের পর তারা আর এ পুরস্কার পায়নি। তাই জুরি বোর্ড এর কাজের প্রতি দৃষ্টি দিতে পারে। বিশেষ করে ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বিশ্বব্যাপী অপ্রত্যাশিত শরণার্থী ও বাস্তুচ্যুত মানুষের সেবায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাদের এই কাজ অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক সময়ে এই এজেন্সি সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে, ইউরোপে শরণার্থী সংকট ও মিয়ানমারের পলায়নরত রোহিঙ্গা মুসলিমদের ইস্যুতে কাজ করেছে এবং করছে। ১০ লাখেরও বেশি শরণার্থী ও অভিবাসীর জন্য সীমান্ত খুলে দেয়ার জন্য এ পুরস্কারের জন্য জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মারকেলও নমিনেশন পেয়েছেন বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে।
পোপ ফ্রাঁসিস: শরণার্থী, দারিদ্র্য, সামাজিক ন্যায়বিচার ও জলবায়ু ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নেয়ার কারণে তিনি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। এ বছর তার নমিনেশন নিশ্চিত করেছেন নরওয়ের পার্লামেন্টের একজন সদস্য। কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে, তিনি ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর বিরল সাহস দেখিয়েছেন।
আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব শুরু করার পর থেকেই সক্রিয় রয়েছে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বহু বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা আইনি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। এটা করেছে বার বার। তারা চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে। সেনাবাহিনীতে হিজড়াদের নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। এ সংগঠনটি ট্রাম্পকে ‘এক ব্যক্তির সাংবিধানিক সংকট’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
রাইফ বাদাবি: রাইফ বাদাবি সৌদি আরবের ব্লগার। ইসলাম অবমাননার অভিযোগে তাকে ২০১২ সালের জুনে গ্রেপ্তার করে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। অভিযোগ আছে, তিনি তার ওয়েবসাইট ও টিভি কমেন্টের মাধ্যমে ইসলামের অবমাননা করেছেন। এ জন্য তাকে এক হাজার বেত্রাঘাত ও ১০ বছরের জেল দেওয়া হয়। তাকে ৫০ ঘা বেত্রাঘাত দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, বাকি বেত্রাঘাত দেওয়া হলে তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীর্ণ হয়ে পড়তো।