ইহুদিরা কোনো এতো মেধাবী?

অক্টোবর ২, ২০১৭
Spread the love
স্টিফেন কার লিওন

ইসরাইলের কয়েকটি হাসপাতালে তিন বছর মধ্যবর্তীকালীন কাজ করার কারনেই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করার চিন্তা আমার মাথায় আসে।
এতে অমত করার কোনো সুযোগ নেই যে, ইহুদিরা  প্রকৌশলবিদ্যা, সংগীত, জ্ঞান- বিজ্ঞানসহ জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই অন্যদের থেকে অনন্য। বিশেষ করে ব্যবসা ক্ষেত্রে। প্রসাধনী, খাদ্য, অস্ত্র, ফ্যাশন, ফিল্ম ইন্ডাষ্ট্রি ইত্যাদি  (হলিউড) পৃথিবীর প্রায় ৭০ ভাগের কাছাকাছি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এদের দখলে।

দ্বিতীয় বছর আমি যখন ক্যালিফোর্নিয়া ফেরত যাচ্ছিলাম তখন এই চিন্তা আমার মাথায় আসে যে, স্রষ্টা কেনো তাদেরকে এই বিশেষ ক্ষমতা (বুদ্ধিমত্তা) দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। এটা কি নিতান্তই কোনো কাকতালীয় ব্যাপার নাকি ব্যাপারটা মনুষ্যসৃষ্ট? ফ্যাক্টরিতে  যেমন বিভিন্ন জিনিস বানানো যায় তেমন করে কি বুদ্ধিমান ইহুদি বানানো সম্ভব? সকল তথ্য উপাত্ত সঠিকভাবে সংগ্রহ করে আমার গবেষণা শেষ করতে প্রায় আট বছর সময় লেগে যায়। যেমন তাদের খাদ্যাভাস, সংস্কৃতি, ধর্ম, গর্ভাবস্থার প্রস্তুতি ইত্যাদি এবং পরবর্তীতে এসব আমি অন্যান্য জাতির সঙ্গে তুলনা করব।

প্রথমেই শুরু করা যাক  ইহুদি নারীদের গর্ভাবস্থার প্রাকপ্রস্তুতি দিয়ে। ইসরাইলে প্রথমেই যে বিষয়টা আমার নজরেে আসে সেটা হল গর্ভবতী মায়েরা সবসময় গান বাজনা ও পিয়ানো বাজাবে এবং তাদের স্বামীদের নিয়ে গণিতের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করবে। গর্ভবতী নারীরা সবসময় তাদের সঙ্গে গণিতের বই সঙ্গে নিয়ে ঘুরতো যেটা দেখে আমি সত্যিকার অর্থেই খুব আশ্চর্য হওয়ছিলাম। এমনকি আমি নিজেও কয়েকবার তাদের গণিতের সমস্যা সমাধান করে দিয়েছিলাম। আমি একবার একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, এটা কি তুমি তোমার গর্ভের সন্তানের জন্য করছো? তখন সে উত্তর দিয়েছিল হ্যা, এটা আমরা করি যাতে শিশু গর্ভে থাকা অবস্থা থেকেই প্রশিক্ষণ নিতে পারে এবং পরবর্তীতে জন্মের পর আরো বেশি মেধাবী হয়ে বেড়ে উঠতে পারে। বাচ্চা প্রসবের আগ পর্যন্ত তারা তাদের এই গণিতিক সমস্যার সমাধান চালিয়ে যায়।
এর পরেই যে জিনিসটি আমি পর্যবেক্ষণ করি সেটি হচ্ছে তাদের খাদ্যাভাস। গর্ভবতী মায়েরা আলমন্ড, খেজুড় আর দুধ খেতে খুব ভালোবাসে। দুপুরের খাবারের তালিকায় থাকে রুটি এবং মাছ (মাথা ছাড়া), আলমন্ড এবং অন্যান্য বাদাম যুক্ত সালাদ। তারা বিশ্বাস করে যে মাছ হচ্ছে মস্তিষ্কে পুষ্টি সরবরাহ করে। অপর দিকে মাছের মাথা মস্তিষ্কের জন্য খারাপ। এছাড়াও গর্ভবতী নারীদের কডলিভার খাওয়া ইহুদি সংস্কৃতির একটি অংশ।

আমি যখন রাতের খাবারের দাওয়াতে অংশ নিতাম তখন দেখতাম তারা সবসময় মাছ খেতে খুব পছন্দ করত এবং মাংস পরিত্যাগ করত। তাদের বিশ্বাস মতে মাছ এবং মাংস দুটি একসঙ্গে খেলে তা শরীরের কোনো কাজে লাগে না। অপর দিকে সালাদ এবং বাদাম তাদের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই থাকবে, বিশেষ করে আলমন্ড।
তারা যে কোনো প্রধান আহারের আগে ফল খাবে। তারা বিশ্বাস করে যে যদি প্রধান আহারের পরে ফল খাওয়া হয় তবে তা নিদ্রার উদ্রেগ ঘটাবে যা পাঠ গ্রহণের ক্ষেত্রে বাধার কারন হয়ে দাঁড়াবে।

ইসরাইলে ধুমপান করা নিষিদ্ধ। যদি আপনি তাদের বাসার অতিথি হয়ে থাকেন তবে বাসার  ভেতরে ধুমপান করা থেকে বিরত থাকবেন না হলে তারা খুব বিনীতভাবে তাদের বাড়ির বাইরে গিয়ে ধুমপান করার অনুরোধ জানাবে।

ইসরাইলী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের মতে, ধুমপান মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দেয় এবং শরীরের জিন এবং ডিএনএকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। ফলে বংশপরম্পরায় ত্রুটিযুক্ত মস্তিষ্কের কোষযুক্ত বাচ্চা জন্মগ্রহণ করবে ( এখানে একটা জিনিস খেয়াল করবেন যে, পৃথিবীর বড় বড় সব সিগেরেটের কোম্পানিগুলো কাদের সেটা আপনারা আশা করি ভালো করেই জানেন…..)।

বাচ্চারা কি খাবার খাবে সেটা সব সময় তাদের বাবা-মা ঠিক করে দেয়। প্রথমে ফল খাবে এরপর প্রধান খাবার খাবে যেমন রুটি, মাছ এরপর কড লিভারের তেল খাবে। আমার দেখা মতে, প্রত্যেকটি ইহুদি বাচ্চারই সাধারণত তিনটি ভাষার ওপর দখল থাকে – হিব্রু, আরবি এবং ইংরেজি। শিশুকাল থেকেই প্রত্যেকটি বাচ্চাকে ভায়োলিন এবং পিয়ানো বাজানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
তারা বিশ্বাস করে এতে করে তাদের আইকিউ লেভেল  বৃদ্ধি ঘটে এবং বাচ্চারা মেধাবী হয়ে বেড়ে ওঠে।

জিউস বিজ্ঞানীদের মতে, সঙ্গীতের কম্পন মস্তিষ্কের কোষগুলোকে উদ্দীপিত করে। একারনেই ইহুদিদের মাঝে এত মেধাবী মানুষ দেখা যায়।
ক্লাস এক থেকে ছয় পর্যন্ত তাদেরকে গণিত এবং ব্যাবসা শিক্ষা শিখানো হয়। বিজ্ঞান তাদের এক নম্বর পছন্দের বিষয়। ইহুদি বাচ্চারা কিছু বিশেষ ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে যেমন, দৌড়, ধনুবিদ্যা, শুটিং। তারা মনে করে শুটিং এবং ধনুবিদ্যা তাদের মস্তিষ্ককে সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সাহায্য করে।

উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান শিক্ষার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। এসময় তারা বিভিন্ন জিনিস বানানোর চেষ্টা করে থাকে এর মধ্যে সবধরনের প্রজেক্ট থাকে। যদিও তাদের বানানো কিছু কিছু জিনিস অনেক হাস্যকর এবং ব্যবহার অযোগ্য লাগতে পারে। কিন্তু সব কিছুতে গুরুত্বের সঙ্গে মনোযোগ দেওয়া হয়। বিশেষ করে যদি সেটা হয় যুদ্ধ উপকরণ, ঔষধ কিংবা যন্ত্রবিজ্ঞান। যে সকল প্রকল্প বা ধারণাগুলো সফলতা পায় সেগুলোকে উচ্চবিদ্যাপিঠগুলোতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আরো ভালোভাবে গবেষণা করবার জন্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বছরে ব্যবসা শিক্ষা অনুষদকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। ব্যবসা শিক্ষার সকল ছাত্র ছাত্রীদের একটি করে প্রজেক্ট দেওয়া হয় এবং তারা শুধু মাত্র পাস করতে পারবে যদি তাদের গ্রুপ (প্রতি গ্রুপে আনুমানিক ১০জন) সেই প্রজেক্ট থেকে ইউএসডি এক মিলিয়ন ডলার লাভ করতে পারে। অবাক হওয়ার কিছুই নেই, এটাই বাস্তবতা।  আর  এ কারনেই পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইহুদিদের দখলে।

আপনারা কি কখনো ইহুদিদের প্রার্থনা করতে দেখেছেন? তারা প্রার্থনা করার সময় সবসময় তাদের মাথা ঝাকায়। তারা বিশ্বাস করে তাদের এই কার্যকলাপ তাদের মস্তিষ্কে আরো অধিক পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ করে। ( একই জিনিস ইসলাম ধর্মেও দেখা যায়- তারা নামাজের রাকাতের শেষে সালাম ফিরাবার সময় মাথা ডানে এবং বামে ঘুরায়)
জাপানিজদের দেখলেও দেখতে পাবেন যে তারা তাদের একজন আরেকজনের সঙ্গে দেখা হলে মাথা নামিয়ে সম্মান করে এবং এটা তাদের সংস্কৃতির অংশ। আর জাপানিজদের মাঝেও অনেক মেধাবী দেখা যায়। জাপানিজরা শুশী (তাজা মাছ) খেতে অনেক পছন্দ করে। আপনার কি মনে হয় মাথা নাড়ানো এবং মাছ খাওয়ার ব্যাপারটা কাকতালীয় কোনো ব্যাপার?

আমেরিকায় ইহুদিদের বানিজ্যিক কেন্দ্র নিউইয়র্কে অবস্থিত যেখান থেকে তাদের জন্য খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করা হয়। যদি কোনো ইহুদি ব্যাক্তির লাভজনক কোনো আইডিয়া থাকে তাহলে সেই বানিজ্যিক কেন্দ্র থেকে সুদবিহীন মূলধনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় এবং সেটাকে সফল করতে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হয়। একইভাবে জিউস কোম্পানিতে যেমন – স্টারবাক্স, লিভাইস,হলিউড, ওরাকল, কোকাকোলা, ডানকিন ডোনাটসহ যে সব প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের ফ্রি স্পন্সরশিপ দেওয়া হয়।
নিউইয়র্কে ডাক্তারী পাস করে যে সব ছাত্র-ছাত্রী বের হয় তাদেরকে এই বানিজ্যিক কেন্দ্রের আওতায় নিবন্ধন করে বেসরকারিভাবে প্রাকটিস করতে সুদবিহীন ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। এখন আমি বুঝতে পারছি কেনো নিউইয়র্ক এবং কেলিফোর্নিয়ায় স্পেশালিস্ট  চিকিৎসকের এতো অভাব।

আমি আগেও বলেছি ধূমপানের কারনে বংশপরম্পরায় বোকা-গর্ধব এক প্রজন্ম বেড়ে উঠে। ২০০৫ সালে আমি যখন সিঙ্গাপুর ভ্রমন করেছিলাম সেখানেও আমি অবাক হয়ে দেখেছিলাম ধুমপায়ীরা সমাজ থেকে বিতাড়িত এবং এক প্যাকেট সিগেরেটের দাম ইউএসডি সাত ডলার। ইসরাইলের মতই ধূমপান সেখানে প্রায় নিষিদ্ধ। সিঙ্গাপুরের সরকার ব্যবস্থা অনেকটা ইসরাইলের  মতো।  এ কারনেই সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক উচ্চমানের। যদিও দেশটির আয়তন কেবল মাত্র আমেরিকার ম্যানহাটন শহরের সমান।

এবার একটু ইন্দোনেশিয়া দেশটার দিকে তাকান। সেখানে মোটামুটি সবাই ধুমপান করে। এক প্যাকেট সিগেরেটের দাম খুবই সস্তা। মাত্র ইউএসডি ০.৭ সেন্টস। ফলাফল লক্ষাধিক মানুষ কিন্তু জনসংখ্যার খুব কম সংখ্যক মানুষ মেধাবী! দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা আপনি হাতে গুনে বলে দিতে পারবেন। এমন কোনো কিছু তারা উৎপন্ন করে না যা নিয়ে তারা গর্ব করতে পারে। নিচু মানের প্রযুক্তি, এমনকি তারা তাদের নিজেদের ভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় কথাও বলতে পারে না। যেমন, তাদের দেশের মানুষদের জন্য ইংরেজিতে ভালো দখল নেওয়া অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আর এর কারন হচ্ছে ধূমপান করা, বাজে খাদ্যাভাস এবং তাদের সংস্কৃতি।

আমার এই গবেষণায়,  ধর্ম এবং জাতি মূল বিষয় বস্তু ছিল না। কেনো ইহুদিরা এত অহংকারি আর কেনই বা ফেরাউনের সময় থেকে শুরু করে হিটলারের সময় পর্যন্ত এত নিগ্রহের শিকার হতে হয়েছে তাদের। আমার মতে, বিষয়টা রাজনৈতিক এবং টিকে থাকার অদম্য বাসনা।
আমার এই গবেষণার মূল বক্তব্য ছিলো – আমরা কি ইহুদিদের মত এমন একটা বুদ্ধিমান প্রজন্ম তৈরি করতে পারবো?
উত্তর হ্যা, হতে পারে। কিন্তু এর জন্য আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভাস পরিবর্তন করতে হবে, পরিবর্তন করতে হবে আমাদের বাচ্চা লালন পালনের পদ্ধতিকে। তাহলেই হয়ত তিন প্রজন্ম পর এটা আমরা অর্জন করতে সক্ষম হব।

মূল লেখকঃ ড. স্টিফেন কার লিওন। অনুবাদকঃ আসিফ ইকবাল তারেক