আয়না২৪ ডেস্ক
একদিকে ছিলেন জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা অন্যদিকে রাজনীতিক হিসেবেও ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। তামিলনাড়ুর মানুষের কাছে তিনি ছিলেন ‘আম্মা’ হিসেবে খ্যাত। গতরাতে জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়া ৬৮ বছরের এই মুখ্যমন্ত্রীর জন্য এখন শোকে ভাসছে গোটা রাজ্য এমনকি ভারতবর্ষ ।
জে জয়ললিতার রাজনৈতিক জীবন যেমন রঙিন ছিল, তেমনি ছিল রহস্যেঘেরা ছিল তাঁর ব্যক্তিগত জীবন। শেষ জীবনে তাঁর ব্যক্তিগত পরিসরে বিশেষ কারও প্রবেশাধিকারও ছিল না। তিনি ছিলেন চিরকুমারী। কিন্তু এমনটা নয় যে, জয়ললিতার কোনও রোমান্টিক সম্পর্ক কখনো ছিল না। তবু কেন তিনি বিয়ে করলেন না? এ প্রশ্ন কিন্তু ঘুরেফিরে আজও আসছে সবার মধ্যে।
তামিল পত্রিকায় জয়ললিতার আত্মজীবনী ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের কথা থেকে যে সম্ভাব্য কারণগুলি জানা যায় সেগুলো আয়না২৪ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-গণমাধ্যম ও ঘনিষ্ঠজনেরা বলছেন, জয়ললিতাকে ছোট থেকেই অনেক বাধা-বিপত্তির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার জন্য মাত্র ১৫ বছর বয়সে মা-বাবার ইচ্ছায় তিনি অভিনয়ে নামতে বাধ্য হন। তাঁর আইন নিয়ে পড়াশোনার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু তা আর হয়নি। তখনই বাবা-মায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে চিড় ধরে। নিজের বাবার সম্বন্ধে তিনি বলেছিলেন, তিনি বেহিসেবি আর আরামপ্রিয় ছিলেন। সেই থেকেই সম্ভবত পুরুষদের প্রতি তাঁর বিতৃষ্ণা জন্মাতে শুরু করে ললিতার মনের অন্ধরে।
বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে এক কিশোরের প্রেমে পড়েন তিনি। কিন্তু সে প্রেম অচিরেই ভেঙে যায়। শোনা যায়, ছেলেটি জয়ার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল।
এরপর পরিণত বয়সে অভিনয় করতে গিয়ে ঘনিষ্ঠতা হয় তেলগু হিরো শোভন বাবুর সঙ্গে। তবে সে সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়নি। রাজনীতিতে আসার আগেই শোভন বাবুকে ছেড়ে চলে আসেন জয়া। সেই সময়ে তিনি একবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন।
জে জয়ললিতার জীবনের সবচেয়ে আলোচিত সম্পর্ক বোধ হয় তাঁর সঙ্গে তামিল মহানায়ক এম জি রামচন্দ্রনের। এমজিআর শুধু জয়ার ছবির হিরোই ছিলেন না, জয়ার রাজনীতির হাতেখড়ি তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমজিআর-এর থেকেই। তাঁদের মধ্যে বিশেষ ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। ততদিনে অবশ্য রামচন্দ্রনের দুটি বিয়ে হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় স্ত্রী জানকী কখনই জয়ললিতাকে রামচন্দ্রনের কাছে আসতে দিতে চাননি। রামচন্দ্রনের মনে জয়াকে নিয়ে সন্দেহও দানা বেঁধেছিল। এমজিআর-এর অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে জয়া তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী পদেও বসতে চেয়েছিলেন। সেই প্রণয়ের সমাপ্তি সুখের হয়নি।
ললিতা মনে করতেন, প্লেটনিক প্রেম বলে কিছু হয় না। একজন পুরুষ ও নারীর মধ্যে হয় রোমান্টিক সম্পর্ক বা শুধুই বন্ধুত্ব হতে পারে। তিনি জীবনে কোনও পুরুষকেই বিশ্বাস করতে পারেননি। যাঁদেরকে বিশ্বাস করতে চেয়েছিলেন, তাঁরাই ললিতাকে হতাশ করেছিলেন। ফলে জয়ললিতা গভীর একাকীত্বে ভুগেছেন সারাজীবনই। একবার আক্ষেপ করে বলেওছিলেন, জীবনে একমাত্র একজনকেই বিশ্বাস করবে— কেবল নিজেকে!