আয়না২৪ প্রতিবেদন
বরগুনার কৃতি সন্তান অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আবদুল হামিদ। এতোদিন মো. আখতারুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ উপাচার্য (প্রশাসন) পদে ছিলেন।
আজ সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হাবিবুর রহমান এই প্রজ্ঞাপনে সই করেছেন।
গত ২৪ আগস্ট উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের স্বাভাবিক মেয়াদ শেষ হয়। সিনেটের বিশেষ অধিবেশনে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে ২০১৩ সালের ২৪ আগস্ট তিনি চার বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছিলেন। তবে এর আগে ২০০৯ সালে রাষ্ট্রপতি তাঁকে সম্পূর্ণ অস্থায়ী হিসেবে নিয়োগ দিলেও তিনি নির্বাচন ছাড়াই সাড়ে চার বছর দায়িত্ব পালন করেন।
১৬ জুলাই এক চিঠিতে সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়, ২৯ জুলাই সিনেটের বিশেষ অধিবেশন ও উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন হবে। এই চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২৪ জুলাই ১৫ জন শিক্ষক ও রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। হাইকোর্ট ওই চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করেন। পরে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ জুলাই হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত করেন চেম্বার আদালত। আর আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন।
চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে ২৯ জুলাই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন সম্পন্ন হয়। সিনেটের এই বিশেষ অধিবেশনে নির্বাচিত উপাচার্য প্যানেলে আবার আরেফিন সিদ্দিকের নাম আসে। তবে অধিবেশনে সিনেটের ১০৫ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ৪৭ জন উপস্থিত ছিলেন। সিনেটের একটি বড় অংশের নির্বাচন ও মনোনয়ন বাদ রেখেই এই অধিবেশন হয়। পরে ৩ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নির্বাচনের জন্য মনোনীত তিন সদস্যের প্যানেলের পরবর্তী কার্যক্রম স্থগিত করে রিট আবেদনটি চার সপ্তাহের মধ্যে হাইকোর্টকে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। আদেশে আপিল বিভাগ বলেন, রিট আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য তাঁর দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ২১, ২২ ও ২৩ আগস্ট রিটের শুনানি গ্রহণ করেন। আগামী ৩ অক্টোবর পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারিত আছে। উপাচার্যের স্বাভাবিক মেয়াদ শেষ হলেও আপিল বিভাগের ওই আদেশে ২৪ আগস্টের পর থেকে আরেফিন সিদ্দিক দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপনে কিছু বলা নেই।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩ এর ১১ (২) ধারা অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও আচার্য ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানকে সম্পূর্ণ সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে এই নিয়োগের সঙ্গে তিনটি শর্ত দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো—রাষ্ট্রপতি ও আচার্য প্রয়োজন মনে করলে যেকোনো সময় অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করতে পারবেন। তিনি বিধি অনুযায়ী, পদ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সার্বক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী অধ্যাপক আখতারুজ্জামান ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৫ সালে তিনি আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান হন।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করে একই বিভাগে ১৯৯০ সালে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। এর বাইরেও ফারসি ভাষায় তাঁর ডিপ্লোমা রয়েছে। পিএইচডি করেছেন আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলব্রাইট স্কলার ছিলেন অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং স্কলার ছিলেন।
অধ্যাপক আখতারুজ্জামান ‘মুসলিম ইতিহাসতত্ত্ব’, ‘মধ্যযুগীয় বাংলার সমাজ ও নগরায়ণ’ নামে দুটি বই লিখেছেন। তিনটি বইয়ের সম্পাদনা করেছেন। তাঁর ৪২টি গবেষণা প্রবন্ধ বিভিন্ন জার্নাল ও সংকলন বইতে প্রকাশিত হয়েছে।
অধ্যাপক আখতারুজ্জামান ২০০৪, ২০০৫ ও ২০০৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এবং ২০০৯ ও ২০১১ সালে সহসভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য ও ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কবি জসীমউদ্দীন হলের প্রাধ্যক্ষও ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। তিনি ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলী ইউনিয়নের কালীপুর গ্রামের সন্তান।