আয়না২৪ প্রতিবেদন
‘বাঘ আমাদের গর্ব, আমরাই বাঘ রক্ষা করব’ স্লোগান সামনে রেখে আজ ২৯ জুলাই শনিবার পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব বাঘ দিবস ২০১৭’।
২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর এই দিন বিশ্ব বাঘ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। আজ দিবসটি উপলক্ষে শোভাযাত্রা, আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
কর্মসূচির মধ্যে আছে সকাল ৯টায় বাগেরহাট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে সমাবেশ, ৯টা ১০ মিনিটে বর্ণাঢ্য র্যালী, ১০টায় জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে আলোচনা সভা ও ১১টা ২৫ মিনিটে লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। বিশেষ অতিথি থাকবেন পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, ডা. মো. মোজাম্মেল হোসেন এমপি, এডভোকেট মীর শওকত আলী বাদশা এমপি, হ্যাপী বড়াল এমপি এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসতিয়াক আহমদ।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মোহাম্মদ সফিউল আলম চৌধুরী। বিশ ্ব বাঘ দিবসের এবারের মূল প্রতিপাদ্যের উপর আলোচনা করবেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এম এ আজিজ।
এদিকে, এ বছর বিশ্ব বাঘ দিবসের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি বন অধিদপ্তরের সুন্দরবন বিভাগীয় সদর দপ্তর (পূর্ব) বাগেরহাটে অনুষ্ঠিত হওয়ার খবরে সুন্দরবন অঞ্চলে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের একমাত্র সুন্দরবন বাঘের আবাসস্থল হওয়ায় বাঘ সংরক্ষণ, বাঘ শিকার ও পাঁচার বন্ধ, বাঘের খাদ্য সুন্দরবনের হরিণ রক্ষাসহ সন্নিহিত লোকালয়ের অধিবাসীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে এ দিবস পালনের গুরুত্ব অপরিসীম।
উল্লেখ্য, বাঘ রয়েছে বিশ্বের এমন ১৩টি দেশ বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ভুটান, নেপাল, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম ও রাশিয়ায় প্রতি বছর এ দিনটি পালিত হয়।
২০০০ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত বাঘ সমৃদ্ধ ১৩টি দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের সম্মেলনে বাঘ সংরক্ষণকে বেগবান করার জন্য এক ঘোষণা পত্র তৈরি হয়। সেই ঘোষনা পত্রের আলোকে প্রতিবছর ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস পালিত হচ্ছে।
বাগেরহাট প্রতিনিধি নীহার রঞ্জন সাহা ও শরণখোলা (বাগেরহাট) সংবাদদাতা আসাদুজ্জামান মিলন জানান, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করায় সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি করেছে বনবিভাগ। সচেতনতা সৃষ্টির কারণে গত দুই বছরে লোকালয় ঢুকলেও জনতা বাঘ হত্যা করেনি।
তবে ‘বাংলাদেশের সুন্দরবনে বাঘের ঘনত্ব’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা এখন মাত্র ১০৬টি। এর আগে ২০০৪ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির সহায়তায় বনবিভাগ বাঘের পায়ের ছাপ গুণে জরিপ করে বলেছিল, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৪৪০টি।
২০১৩ সালে ‘ক্যামেরা ট্যাপিং’ পদ্ধতিতে সুন্দরবনে বাঘ গণনা শুরুর পর ওই জরিপ কিছুটা ত্রুটিপূর্ণ ছিল বলে প্রশ্ন ওঠে। বাঘ শুমারির চূড়ান্ত ফলাফল অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভারতীয় অংশ মিলে ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটারের সুন্দরবনে মোট বাঘের সংখ্যা ১৭০টি।
সুন্দরবন সুরক্ষায় শরণখোলা রেঞ্জের সহ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন বলেন, বাঘ সুন্দরবনের প্রাকৃতিক রক্ষক। বাঘ কমলে সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র্যের উপর হুমকি বাড়বে। তাই শুধু বাঘ নয়, বিশ্ব ঐতিহ্য ও সুন্দরবনকে এবং বনের সকল জৈববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারকে আরো উদ্যোগী হতে হবে। পাশাপাশি সুন্দরবন সংলগ্ন জনপদের মানুষকে বন সুরক্ষায় আরো বেশি সচেতন এবং উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, বনবিভাগসহ প্রশাসনের কড়া নজরদারিতে গত দুই বছরে কোন বাঘ হত্যা বা শিকারের অঘটন ঘটেনি। সুন্দরবনে টহলকালে বাঘ ও বাঘের বাচ্চা ঘোরা ফেরা করতে দেখা যায়। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, বাঘের সংখ্যা বাড়ছে।