আয়না২৪ ডেস্ক
সিরিয়ার রাকা শহরের কাছে কুর্দি নেতৃত্বাধীন বাহিনী সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্স বা এসডিএফ- এর হাতে এখন আটক আছেন ইসলামিক স্টেট বা আইএস জঙ্গিদের বেশ কয়েকজন স্ত্রী।
তাঁরা বলেছেন কেন আইএসে তাঁরা যোগ দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে জানিয়েছেন আইএসের ভেতরের পরিস্থিতির কথা। খবর বিবিসির।
এই নারীরা এসেছেন বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে, কিন্তু আইএসে তারা যোগ দিয়েছিলেন একই লক্ষ্য নিয়ে। তাদের একটাই লক্ষ্য ছিল আইএস-এর কথিত ‘খেলাফত’ প্রতিষ্ঠা করা।
আইএসের কথিত খেলাফতের রাজধানী ইরাকের রাকা এবং এটি তাদের শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবেও পরিচিত।
যদিও আইএস এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্স রাকার দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং তারা এই অভিযানে সাফল্যও পাচ্ছে। দুপক্ষের লড়াইয়ের ফলে রাকা থেকে হাজারো মানুষ পালাচ্ছে। শহর ছেড়ে পালানো মানুষের ভিড়ে আইএস জঙ্গিদের স্ত্রী-সন্তানেরাও আছে।
তাদেরই কয়েকজন এখন কুর্দি বাহিনীর জিম্মায় রয়েছে।
এদেরই একজন ইমান ওথমানি ও তার স্বামী তিউনিসিয়া ছেড়েছিলেন রাকায় আইএস-এর ঘাঁটিতে যোগ দেবার জন্য?
কী আকর্ষণে আইএসে যোগ দিয়েছিলেন তারা?
বিবিসিকে ইমান বলেন, “সিরিয়ায় সক্রিয় আইএসের ভিডিও দেখতাম আমরা। ওই সব ভিডিওতে ইসলামি গান থাকত। আইএসকে ইসলামি শরিয়াভিত্তিক কাজ করতে দেখতাম। এসব দেখে ভালো লেগে যায়। রাকায় গিয়ে বসবাস করতে মন চায়”।
এমান আরও জানান যে আইএসের যেসব ভিডিও দেখে তাঁরা উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন তাতে মানুষ হত্যার দৃশ্য খুব কমই ছিল। বিবিসির সাংবাদিককে তিনি বাস্তব পরিস্থিতি যে ভিন্ন ছিল তা তারা রাকায় গিয়ে দেখতে পান। তখনই আইএসের নৃশংসতা তারা দেখেন।
“সেখানে ভয়ংকর ঘটনা দেখি আমরা। আমার স্বামী ও সন্তানদের জন্য চিন্তা ও ভয় নিয়ে আমি ঘুমাতে যেতাম। মনে হতো তারা হয়তো কোনো রাতে এসে আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে যেয়ে হত্যা করে ফেলবে” -বলেন ইমান।
ইমানের স্বামী এখন রাকার বাইরে একটি এলাকায় কুর্দিশ নিয়ন্ত্রিত একটি কারাগারে বন্দী রয়েছেন।
রাকা থেকে যারা পালিয়েছেন তারা সবাই ঘটনার শিকার কি না সে বিষয়টা নিশ্চিত হওয়া কঠিন। এক হিসেবে এরা সবাই আসলে ইসলামিক স্টেট জঙ্গিগোষ্ঠীর অংশ।
ইমানের ছেলে রাকাতেই জন্ম নিয়েছে।
তিনি এখন আশা করেন ইসলামিক স্টেটের প্রভাব থেকে দূরে গিয়েই নিজের ছেলেকে সুন্দরভাবে মানুষ করতে পারবেন তিনি।
“আমি মানুষ। আমি ভুল করেছি। যারা আইএসে যোগ দেয়ার চিন্তা করছে তাদের প্রতি আমার উপদেশ ভুলেও এমনটা ভাববেন না, নিজেকে বাঁচান। আইএসে যোগ দিয়ে মৃত্যু হলে আপনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন না। আপনার জন্য শুধুই জাহান্নাম অপেক্ষা করছে” -বলেন ইমান।
এদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ যুদ্ধে অংশ নিতেন। আইএসের নারী যোদ্ধাদের একটা পৃথক ব্রিগেড আছে বলে জানান তাঁরা।
আরেক আইএস যোদ্ধার স্ত্রী খাদিজা আল ওমারি জানান সেখানকার অন্দরমহলের কথা।
তিনি বলেন, সেখানে একজন নেতা ধরনের নারী থাকতেন যিনি ছিলেন মরক্কোর নারী। তিনি অন্য সব নারীকে নির্যাতন করতেন। কেউ যদি আইএসকে নিয়ে বাজে কথা বলতো তাহলে ওই নারী নেত্রী তাকে ধরে নিয়ে কারাগারে ঢোকাতেন। আইএসকে নিয়ে কথা বলা নারীকে ‘চর’ হিসেবে চিহ্নিত করা হতো”।
রাকা থেকে পালিয়ে আসা এসব নারীদের সঙ্গে যেসব শিশু রয়েছে তারা জানেনা ইসলামিক স্টেটের মতো জঙ্গিগোষ্ঠীর আবর্তে তাদের জীবন কেটেছে।
এখন এসব শিশুদের মায়ের আইএস এর কথিত ‘খেলাফত’ জীবন আর নিজ বাড়ি থেকে পালিয়ে আসার ঘটনার মধ্য দিয়ে জীবন পার করছে। অনেক নারী এখন আইএস এর নৃশংসতা ভুলে, নিজ ভুল স্বীকার করে পুরনো জীবনে ফিরে যেতে চান।-বিবিসি অবলম্বনে