কক্ষপথে বাংলাদেশের প্রথম ন্যানো স্যাটেলাইট

জুলাই ৮, ২০১৭
Spread the love

আয়না২৪ প্রতিবেদন

বাংলাদেশের প্রথম ক্ষুদ্রাকৃতির কৃত্রিম উপগ্রহ বা ন্যানো স্যাটেলাইট ‘ব্র্যাক অন্বেষা’ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনথেকে উৎক্ষেপণের পর পৃথিবীর কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করছে।

বাংলাদেশ সময় শুক্রবার বেলা ৩টা ১০ মিনিটে স্যাটেলাইটটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। ঢাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তা সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

স্যাটেলাইটটি পৃথিবী থেকে ৪০০ কিলোমিটার উপরে অবস্থান করবে, পৃথিবীর চারপাশে প্রদক্ষিণ করতে সেটির সময় নেয়ার কথা ৯০ মিনিট।

জাপানে তৈরি হওয়া এ ন্যানো স্যাটেলাইটের নকশা, উপকরণ সংগ্রহ ও তা বানানোর সব কাজই করেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী। তার হলেন- রায়হানা শামস ইসলাম অন্তরা, আবদুল্লা হিল কাফি ও মাইসুন ইবনে মনোয়ার।

এর আগে ৪ জুন ন্যানো স্যাটেলাইটটি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অবস্থিত নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেসএক্স ফ্যালকন-৯ রকেটের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। উৎক্ষেপণের পর সেটি বাংলাদেশের উপর দিয়ে দিনে ৪ থেকে ৬ বার উড়ে যাবে।

ন্যানো স্যাটেলাইট প্রকল্পের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক খলিলুর রহমান জানান, স্যাটেলাইটটি বার্তা পাঠাতে দুই থেকে সাত দিন সময় লাগতে পারে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় জানায়, কৃষি, দুর্যোগ মোকাবিলাসহ মহাকাশ-সংক্রান্ত নানা বিষয়ে গবেষণার জন্য উচ্চমানের ছবি তুলে পাঠাবে স্যাটেলাইটটি। মহাকাশে বিশেষ বিশেষ দিনে দেশের জাতীয় সংগীতও বাজাবে। এটি পৃথিবী থেকে ৪০০ কিলোমিটার ওপরে অবস্থান করবে। পৃথিবীর চারপাশে প্রদক্ষিণ করে আসতে সময় লাগবে ৯০ মিনিটের মতো।

এটি বাংলাদেশের ওপর দিয়ে দিনে চার থেকে ছয়বার উড়ে যাবে। স্যাটেলাইটটি দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতায় ১০ সেন্টিমিটার করে। ওজনে প্রায় এক কেজি। এই কৃত্রিম উপগ্রহের গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন বা ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণের স্থান ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে।

১০ সেন্টিমিটার কিউব আকৃতির ও ১ কেজি ওজনের এ ন্যানো স্যাটেলাইট মহাকাশ সংক্রান্ত নানা বিষয়ে গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের জন্য ছবি পাঠাবে, যা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যবহার করবেন।

গত ফেব্রুয়ারিতে জাপানে এক অনুষ্ঠানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৈয়দ সাদ আন্দালিব কিউশু ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যানো স্যাটেলাইটটি গ্রহণ করেন। একই অনুষ্ঠানে মহাকাশে উৎক্ষেপণের জন্য ন্যানো স্যাটেলাইটটি জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির কাছে হস্তান্তর করা হয়।

পরে ন্যানো স্যাটেলাইটটির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির মহাখালী ক্যাম্পাসের ৪ নম্বর ভবনের ছাদে তৈরি গ্রাউন্ড স্টেশনটি ২৫ মে উদ্বোধন করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অফ ট্রাস্টির চেয়ারপারসন ফজলে হাসান আবেদ।

উদ্ভাবক তিন তরুণের প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, টেকনোলোজি শুধু জানলেই হবে না, সেই আইডিয়াটা শেয়ার করতে জানতে হবে। আমরা এখন পুরো নির্ভরশীল আমাদের তরুণ প্রজন্মের ওপর। আমাদের প্রতিভা আছে, কিন্তু সে প্রতিভাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে হবে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, এ বছরের শেষ অথবা আগামী বছরের শুরুতে বাংলাদেশের প্রথম নিজস্ব স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ উদ্বোধন করা হবে। এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে এটি উদ্বোধন করা হবে। সেটা তৈরির কাজ চলছে এখন।

জাপান এরোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি আয়োজিত এ ভিডিও কনফারেন্সে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে অবস্থিত জাপান দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি তোশিয়ুকি নগুচি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর সৈয়দ সাদ আন্দালিব।

জাপানের কিউশু ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (কিউটেক) একটি প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ ছাড়াও শুক্রবার ঘানা, মঙ্গোলিয়া, নাইজেরিয়া ও স্বাগতিক দেশ জাপানের ন্যানো স্যাটেলাইট পৃথিবী প্রদক্ষিণ শুরু করে।