আয়না ২৪ প্রতিনিধি
আজ শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। কাল সোমবার সারা দেশে উদযাপন করা হবে মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। রোববার সন্ধ্যায় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির উদ্যোগে ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সভা হতে এ ঘোষণা দেয়া হয়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান।
একমাস সিয়াম সাধনার পর এলো খুশির ঈদ। আজ শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় বাংলাদেশের ঘরে ঘরে আনন্দের বন্যা বইছে। যদিও সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আজ ঈদ হওয়ায় বাংলাদেশে সোমবার ঈদ হওয়ার সম্ভাবনা আগে থেকেই ছিল। কিন্তু তবুও চাঁদ দেখার অপেক্ষায় ছিল একমাস সিয়াম সাধনায় মগ্ন মুসলমানেরা।
এখন ঈদ জামাতে নামাজ আদায়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। রাজধানীসহ সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গ্রহণ করা সকল ঈদ জামাতের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ে জাতীয় ঈদগাহের সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নেওয়া হয়েছে চার স্তরের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মোতায়েন থাকবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক হাজার সদস্য।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে রাজধানীতে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনের জাতীয় ঈদগাহে সকাল সাড়ে ৮টায়। আর আবহাওয়া খারাপ থাকলে সকাল ৯টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় ঈদগাহ প্রস্তুতকারী সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লাখো মুসল্লির ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য প্রায় প্রস্তুত জাতীয় ঈদগাহ।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ জাতীয় ঈদগাহের প্রধান জামাতে অংশ নেবে।
এখানে নারীদের জন্যও আলাদা নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, বায়তুল মোকাররমে ঈদের দিন সকাল ৭টা থেকে এক ঘণ্টা পর পর মোট পাঁচটি জামাত হবে। তবে, আবহাওয়া খারাপ হলে সকাল ৯টায় বায়তুল মোকাররমের জামাতই ঈদের প্রধান জামাত হবে বলে জানিয়েছেন ধর্মসচিব মো. আব্দুল জলিল।
এ ছাড়া বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের ঈদের নামাজের জন্য আলাদা জায়গা সংরক্ষণ করা হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাব -পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারি বজায় রাখবেন।
জাতীয় ঈদগাহের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ইতোমধ্যে কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেছেন সংস্থার কর্মকর্তারা। আর নিরাপত্তার দিকটি দেখছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
ডিএসসিসির মহাব্যবস্থাপক খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম জানান, জাতীয় ঈদগাহে প্রধান জামাতে প্রায় ৮৪ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারবেন। পাঁচ হাজার নারীর নামাজ আদায়ের জন্য পর্দা দিয়ে আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, মাঠের ২ লাখ ৭০ হাজার ২৭৭ বর্গফুট এলাকা বৃষ্টি প্রতিরোধক ত্রিপল দিয়ে আচ্ছাদিত করে দেয়া হয়েছে। মাঠে ৭০০ সিলিং ও ১০০টি পেডেলস্ট্যান্ড পাখা লাগানো হয়েছে। ১৪০টি অজুর জায়গা করা হয়েছে। এ ছাড়া একটি ভ্রাম্যমাণ শৌচাগারও থাকছে।
জাতীয় ঈদগাহের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ঈদগাহে শুধু মাত্র জায়নামাজ আনা যাবে। মোবাইল ফোন বা অন্যকোনো ধরনের ডিভাইস আনা যাবে না। এমনকি পানির বোতল না আনতে নিরুৎসাহিত করার কথা জানান তিনি।
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, এবার রাজধানীর ৫শ’ স্থানে ছোট-বড় ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে। সেসব স্থানে র্যাব ও পুলিশ যৌথভাবে নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে।
জাতীয় ঈদগাহের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, এবার ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জাতীয় ঈদগাহে ৪ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুরো রাজধানীতে থাকবে নিশ্ছিদ্র পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুরো ঈদগাহ এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। নিরাপত্তার জন্য ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আগত মুসল্লিরা ব্যাগ, ভ্যানিটি ব্যাগ, লাগেজ, দাহ্য পদার্থ, ছুরি-কাঁচি ইত্যাদি যাতে নিয়ে প্রবেশ না করে সেজন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে। ঈদগাহের চারদিকে এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পুলিশি চৌকি থাকবে। নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে। সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করা হবে। গাড়ি ও মোটরসাইকেল আধা কিলো মিটার বাইরে নির্দিষ্ট স্থানে পার্কিং করতে হবে।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এবারও ৫টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত হবে সকাল ৭টায়। ১ ঘণ্টা পরপর অন্য ৪টি জামাত হবে যথাক্রমে ৮টা, ৯টা, ১০টা ও পৌনে ১১টায়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, আবহাওয়া প্রতিকূল থাকলে বায়তুল মোকাররম মসজিদে সকাল ৯টায় অনুষ্ঠেয় ঈদ জামাত দেশের প্রধান ঈদ জামাত হিসেবে গণ্য হবে। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবর্গ, জাতীয় সংসদের হুইপবৃন্দ, সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এলাকার মুসল্লিগণ জামাতে অংশ নেবেন।
ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি ওয়ার্ডের মসজিদ, মাঠ ও ঈদগাহে ৪-৫টি করে ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিআয় ঈদের দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায় এবং দ্বিতীয় জামাত হবে সকাল ৯টায়। এছাড়াও সলিমুল্লাহ মুসলিম হল মেইন গেইট সংলগ্ন মাঠে এবং শহীদুল্লাহ হল লনে সকাল ৮টায় পৃথক দুটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি বছরের মতো এবারও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে সেখানেও ঈদ জামাতের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ঈদের দিন সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহের ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। ঈদ উপলক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনসমূহে আলোকসজ্জা করা হবে।
বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন ঈদ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলো ঈদের আগের দিন থেকে টানা ৭ দিন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচারের ঘোষণা দিয়েছে। ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে। ঈদের দিন দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, আশ্রয়কেন্দ্র, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনা টিকিটে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন সব শিশুপার্কে প্রবেশের সুযোগ এবং নগরী জুড়ে বিনোদন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে। বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ জাতীয় কর্মসূচি ও নিজ নিজ কর্মসূচির আলোকে ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন।
বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহে যথাযথ মর্যাদায় সরকারি কর্মসূচির আলোকে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।