আয়না২৪ প্রতিবেদন
সরকার বরগুনার পাথরঘাটা-মঠবাড়িয়া-তুষখালী-মঠবাড়িয়া সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্ত করনের উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বরগুনা জেলার পাথরঘাটা ও পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়ার সঙ্গে বিভাগীয় শহর বরিশালের নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ৩০ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা ব্যয় সম্বলিত মোট ১২টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের প্রকল্প বিষয়ে অবহিত করেন।
সভা সূত্রে জানা যায়, পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া ও মঠবাড়িয়া উপজেলাকে বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার সাথে সংযুক্ত করেছে সড়কটি। এ সড়ক দিয়ে বিশেষত পাথরঘাটার সামুদ্রিক মত্স্য কেন্দ্র হতে প্রতিদিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মাছভর্তি ট্রাক চলাচল করে। সড়কটির গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ায় সড়কটি যথাযথ মানে প্রশস্ত করা হবে। সেইসাথে অন্যান্য উন্নয়ন কাজও করা হবে। জুলাই ২০১৬ থেকে জুন ২০১৮ মেয়াদে সরকারের সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে।
সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, বিদ্যুত্ সঞ্চালন লাইন সম্প্রসারণে দুটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে বাড়তি ২৭ লাখ গ্রাহক বিদ্যুত্ সংযোগ পাবে। পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম গ্রাম অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দেশব্যাপী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করায় সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। রূপকল্প-২০২১ অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
মন্ত্রী আরো জানান, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২১২টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৭৮টি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭১ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৯৪টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৯০ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা। মন্ত্রী বলেন, একনেকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এখন থেকে যেখানেই রেললাইন তৈরি হবে সেখানেই ওভারপাস করতে হবে। তাছাড়া শুধু বিদ্যুতের লাইন নয়, ঘরে ঘরে বিদ্যুত্ পৌঁছে দিতে হবে।
সভায় জানানো হয়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সমপ্রসারণের লক্ষ্যে আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়ককে চারলেনে উন্নীত করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে নেওয়া প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৫৬৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সড়কটি আশুগঞ্জ নদীবন্দরকে আখাউড়া স্থলবন্দরের সাথে সংযুক্ত করবে। এই সড়কের দৈর্ঘ্য ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সমপ্রসারণ, দেশের অভ্যন্তরে পণ্যসামগ্রী ও যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা সহজকরণ এবং উপ-আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে এ প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে বলে জানান পরিকল্পনা মন্ত্রী।
একনেকে অনুমোদন পাওয়া দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচির ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৯৯১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিপিএটিসি) প্রশিক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৫৯ কোটি টাকা। সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পের সংশোধনীতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৮৬৯ কোটি ৮ লাখ টাকা। বরিশাল-পটুয়াখালী মহসড়কে পায়রা নদীর উপর পায়রা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৭৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা। ২১১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় ধরে জামালপুর শহরের গেইটপাড় এলাকায় রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
গতকাল অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে, ৭ হাজার ১৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্রগ্রাম ও সিলেট বিভাগ) প্রকল্প, ৬ হাজার ৭৭৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ে শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ) প্রকল্প, ৯৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, ৮৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে বন্দরসেরি বেগওয়ানে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স ও হাইকমিশনারের বাসভবন নির্মাণ প্রকল্প এবং ৩৬৩ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার জেলাধীন ক্ষতিগ্রস্ত পোল্ডারসমূহের পুনর্বাসন প্রকল্প।