এএফপি
না ফেরার দেশে চলে গেলেন কিউবার বিপ্লবী নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রো । গতকাল শুক্রবার রাতে হাভানায় শেষ নিঃশ্বাস ফেলেন বিশ্বের নিপিড়িত মানুষের এই মহান নেতা।
কিউবার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে নেতৃত্ব দিয়ে বিজয়ী হওয়ার পর ফিদেল দেশটির ক্ষমতায় আসীন হন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী একটি দেশে বামপন্থী নেতৃত্বের উত্থান ভালোভাবে নেয়নি দেশটি। এ জন্য বহুবার কাস্ত্রোকে হত্যার চেষ্টা হয়। সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান।শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০০৬ সাল থেকে কাস্ত্রোর জনসমক্ষে আসা কমতে থাকে। ২০০৮ সালে ভাই রাউল কাস্ত্রোর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন । অনেক দিন ধরেই তাঁকে তেমন জনসমক্ষে দেখা যায়নি।গত ১৩ আগস্ট ফিদেল কাস্ত্রোর ৯০ তম জন্মদিন উদযাপন করে কিউবার মানুষ। ওই অনুষ্ঠানেও তিনি জনসমক্ষে আসেননি ।
বন্ধু গার্সিয়া মার্কেসের চোখে ফিদেলঃ
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ১৯৫৯ সালে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে কিউবার ক্ষমতায় আসেন ফিদেল কাস্ত্রো। এরপর তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় কলম্বিয়ার ঔপন্যাসিক গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের। খুব অল্প সময়ে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। সময়ের পরিক্রমায় বিংশ শতাব্দীতে লাতিন আমেরিকার বিখ্যাত ব্যক্তিত্বে পরিণত হন এই দুজন। গত বৃহস্পতিবার মার্কেসের মৃত্যুতে কিউবার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়।
১৯৫৯ সালের জানুয়ারিতে কিউবার ডানপন্থী স্বৈরশাসক ফালজেনসিও বাতিস্তাকে উৎখাত করে কাস্ত্রোর গেরিলা বাহিনী। সেই বাহিনীর খবর সংগ্রহের কাজে সাংবাদিক মার্কেস ছুটে যান কিউবায়। পরে একসময় তিনি বোগোটা ও নিউইয়র্কে কিউবার বার্তা সংস্থা প্রেনসা লাতিনার জন্য কাজ করেন।
কিউবাডিবেট নামের একটি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘ফিদেল ও কিউবার সঙ্গে মার্কেসের সম্পর্ক টিকে ছিল তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।’
লাতিন আমেরিকার ডানপন্থী স্বৈরশাসকদের সমালোচনায় সব সময় উচ্চকণ্ঠ ছিলেন মার্কেস। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আবার বৈপরীত্য দেখা গেছে বামপন্থীদের বেলায়। কমিউনিস্টদের সঙ্গে তাঁর ছিল ‘বন্ধুত্ব’।
২০০৬ সালে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর ছোট ভাই রাউল কাস্ত্রোর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন ফিদেল। সে সময় একবার বন্ধু মার্কেস সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, ‘মার্কেস শিশুর মতো নিষ্পাপ ও মহাজাগতিক প্রতিভা।’
২০০৮ সালে মার্কেস ও তাঁর স্ত্রী মার্সিদেসকে শুভেচ্ছা জানিয়ে কাস্ত্রো বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে দশকের পর দশকের সাধনায়। দুজনের মধ্যে প্রচুর কথোপকথনের ফসল এই সম্পর্ক, যা আমার কাছে সব সময়ই উপভোগ্য।’
কিউবার হাভানায় মার্কেসের একটি বাড়ি ছিল। সেখানে যাতায়াত করতেন কাস্ত্রো। তাঁর বাচাল স্বভাব এবং মানুষকে সম্মোহন করার ক্ষমতার প্রশংসা করতেন মার্কেস। বন্ধু সম্পর্কে মার্কেসের বক্তব্য, ‘তিনি যখন কথা বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন, তখন বিশ্রাম নেওয়ার জন্য কথা বলেন।’