• Home  / 
  • বিশ্ব  / 

ইরানে পার্লামেন্ট ও খোমেনির মাজারে হামলা, নিহত ১২

Spread the love

আয়না২৪ ডেস্ক

ইরানের পার্লামেন্টে ও আয়াতুল্লাহ খোমেনির মাজারে সন্ত্রাসীদের  আত্মঘাতী বোমা হামলা ও গুলিতে কমপক্ষে ৭ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম।তবে বিবিসি ইরানি কর্মকর্তাদের বরাতে জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা ১২ ছাড়িয়েছে।
ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তৃতীয় হামলা পরিচালনার পরিকল্পনাকারী একটি জঙ্গি দলকে আটক করা হয়েছে। এই বিষয়ের বিস্তারিত কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
 
জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট এই হামলার দায় স্বীকার করলেও দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ প্রকাশ করতে পারেনি। যদি বিষয়টি নিশ্চিত করা যায় তাহলে এটি হবে ইরানে আইএসের প্রথম হামলা। ইরানের মধ্যপন্থি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার এক মাসের মধ্যে বুধবার ইসলামি বিপ্লবের জনপ্রিয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনির মাজার ও পার্লামেন্টে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
 তেহরানের পার্লামেন্টে সন্ত্রাসী হামলার সময় একটি শিশুকে নিরাপদে বের করে আসছে পুলিশ-এএফপি
পার্লামেন্ট সদস্য ইলিয়াস হজরতি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে বলেন, একটি পিস্তল ও দুটি একে ৪৭ রাইফেল নিয়ে তিন হামলাকারী পার্লামেন্টে হামলা করে। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ইরিব জানিয়েছে, সেখানে এক হামলাকারী আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
তবে কিছু গণমাধ্যমের দাবি হামলাকারীদের গ্রেনেড থেকে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে। তাসমিন নিউজ এজেন্সি অসমর্থিত সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, পার্লামেন্ট ভবনে চারজনকে জিম্মি করেছে জঙ্গিরা। ৭ জন নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছেন আরো অনেকে।
প্রেস টিভি ইরান তেহরানের গভর্নরের বরাতে জানিয়েছে, পার্লামেন্টে হামলার আধা ঘণ্টার মধ্যে আয়াতুল্লাহ খোমেনির মাজারে গুলি করে কয়েকজনকে আহত করে এক অস্ত্রধারী হামলাকারী। এক হামলাকারী আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায়, একজনকে আইনশৃঙ্খলাকারী বাহিনী হত্যা করেছে এবং আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রয়টার্স।

তবে এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরর জড়িত বলে অভিযোগ করেছে ইরানের এলিট ফোর্স রেভল্যুশনারি গার্ড। তারা এ হামলার প্রতিশোধ গ্রহণের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে জার্মানি ও কাতার।

২০১০ সালে সিস্তানের একটি মসজিদে হামলা চালিয়ে ৩৯ জনকে হত্যার পর শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইরানে আর বড় ধরনের হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। অথচ এই সময়ের মধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যে সুন্নিপন্থী জঙ্গি সংগঠন আইএসের উত্থান ঘটে। ইরান শুরু থেকেই আইএসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিলেও জঙ্গি সংগঠনটি দেশটিতে পাল্টা কোনো হামলা করতে পারেনি। এর মধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া-সুন্নি বিরোধ আরো তীব্র হয়। সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরবের নেতৃত্বে আইএসবিরোধী জোটও গড়ে ওঠে। এই জোট মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতে গত মাসে ‘আরব ইসলামিক আমেরিকান’ সম্মেলন করে। সম্মেলনের ঠিক ১৫ দিন পর গত সোমবার ‘ইরানঘেঁষা’ সুন্নি দেশ কাতারকে একঘরে করে দেয় সৌদি জোট। আর সম্মেলনের ১৭ দিন পর ইরানে হামলা হলো, যার দায় স্বীকার করল আইএস।

সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইরানের রাজধানী তেহরানের অধিবাসীদের কাছে শহরটি নিরাপদ হয়ে ওঠে। কারণ প্রতিবেশী অন্যান্য দেশে নিয়মিত সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটলেও ইরান এ ধরনের হামলা থেকে মুক্ত ছিল। আইএসের দাবি সত্য হলে, এটিই হলো ইরানে আইএসের প্রথম কোনো হামলা।

ইরানি সংবাদ সংস্থা আইএসএনএ জানায়, সকাল সোয়া ১০টার দিকে হামলা শুরু হয়। কালাশনিকভ হাতে চার ব্যক্তি তখন তেহরানের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পার্লামেন্ট কমপ্লেক্সে অতর্কিতে ঢুকে পড়ে। ঢোকার সময় তারা এক নিরাপত্তারক্ষী ও এক সাধারণ ব্যক্তিকে হত্যা করে পার্লামেন্ট ভবনে ঢোকে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, হামলাকারীরা নারীদের মতো পোশাক পরে দর্শনার্থী গেট দিয়ে পার্লামেন্ট ভবনে ঢোকে। পুলিশ জানিয়েছে, হামলা শুরুর পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে সব হামলাকারীকে তারা হত্যা করতে সক্ষম হয়।

অন্য হামলাটি চালানো হয় সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে পার্লামেন্ট ভবন থেকে ২০-২৫ কিলোমিটার দূরে। তিন থেকে চার হামলাকারী ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির সমাধি প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ে। তারা খোমেনির মাজারের এক মালিকে হত্যা করে। এ হামলায় আহত হয় সাতজন। ইরানের জরুরি সেবা সংস্থাগুলো জানায়, দুই হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত এবং ৩৯ জন আহত হয়।

খোমেনির মাজারে হামলার সময় দুই হামলাকারী দেহে বেঁধে রাখা বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেদের উড়িয়ে দেয়। তাদের মধ্যে একজন এক নারী আত্মঘাতী রয়েছে। আর পার্লামেন্ট ভবনে হামলাকারীদের একজন পাঁচ তলায় উঠে নিজের সঙ্গে বেঁধে রাখা বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হয়। ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয় জানায়, নিরাপত্তা বাহিনী একই ধরনের আরেকটি হামলা রুখে দেয়। তবে এর ঘটনাস্থল জানানো হয়নি।

দক্ষিণ তেহরানে অবস্থিত খোমেনির মাজারের এক কর্মকর্তা বলেন, তিন থেকে চার ব্যক্তি পশ্চিম গেট দিয়ে মাজার প্রাঙ্গণে ঢোকে। ঢুকেই তারা উন্মুক্ত গুলিবর্ষণ শুরু করে।

পার্লামেন্ট ভবনে যখন হামলা শুরু হয় তখন এর অধিবেশন চলছিল। এমপিরা হামলা সত্ত্বেও নিজেদের কাজকর্ম স্বাভাবিক রেখেছেন—তা দেখাতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। অনেক এমপি সেলফি তুলে পরিবেশ শান্ত দেখাতে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন। ইরানি পার্লামেন্টের স্পিকার আলী লারিজানি এক বিবৃতিতে ‘এটি সামান্য ব্যাপার’ বলে হামলার কথা উড়িয়ে দেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদোলরাহমান আইএসএনএকে বলেন, তিনি দেশের নিরাপত্তা কাউন্সিলের জরুরি বৈঠক ডেকেছেন।

হামলার পর তেহরান শহর অচল হয়ে পড়ে। অনেক রাস্তা ও শহরের কিছু কিছু অংশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সাংবাদিকদের খোমেনির মাজার থেকে দূরে রাখে পুলিশ।