আয়না২৪ প্রতিবেদন
বনানীর আলোচিত হোটেল ‘রেইনট্রির’ মালিক শাহ মোহাম্মদ আদনান হারুনের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি ধারায় তিনটি মামলা দায়ের করার প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মঈনুল খান। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ভ্যাট ও শুল্ক আইনে এসব মামলা হবে।
মঙ্গলবার (২৩ মে) রাজধানীর কাকরাইলে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর কার্যালয়ে রেইন্ট্রির মালিক আদনান হারুনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
হোটেল রেইনট্রির মালিক শাহ মোহাম্মদ আদনান হারুন ঝালকাঠির রাজাপুর-কাঁঠালিয়া আসনের সাংসদ বিএইচ হারুনের ছেলে।
আজ সকালে রেইন্ট্রির মালিক তার চাচা মুজিবুল হক কামাল, ফুফাতো ভাই হাসিব রুমী, ফুফা আকবর হোসেন মঞ্জু এবং তার আইনজীবী জাহাঙ্গীর কবিরসহ শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে যান।
সম্প্রতি রেইনট্রি হোটেলটি আলোচনায় এসেছে দুই তরুণীতে সেখানে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর। গত ৬ মে করা একটি মামলায় এক তরুণী অভিযোগ করেছেন আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ ও তার বন্ধু নাঈম আশরাফ তাদের আটকে রেখে ধর্ষণ করেছেন। এতে আরও তিনজন সহযোগিতা করেন। তার আগে জন্মদিনের পার্টিতে তাদের মদ খাওয়ানো হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এরপরে রেইন্ট্রি হোটেলে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগে সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ১০১ নম্বর কক্ষ থেকে দশ বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করে।
মহাপরিচালক বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে রেইন্ট্রি হোটেলের মালিক বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। হোটেলের ১০১ নম্বর কক্ষ থেকে যে দশ বোতল মদ উদ্ধার হয়েছে, তা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছেন তারা। সেগুলোকে তারা জুসের বোতল বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিল। বোতলের সেম্পল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে পাঠানোর পর তারা পরীক্ষা করে বলেছে সেগুলো বিদেশি মদ ছিল। এতে অ্যালকোহলের পরিমাণ ১৩.৫%।
মঈনুল খান বলেন, মদ সংরক্ষণ অথবা বিপণন করার জন্য ওই হোটেলে কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। জিজ্ঞাসাবাদে তারা এই ব্যাপারে তেমন কোনো তথ্য দিতে পারেনি। আমাদের কাছে প্রমাণ আছে, রেইন্ট্রিতে মদের ব্যবসা অতীতেও হয়েছে।
রেইন্ট্রির মালিক আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে উল্লেখ করে শুল্ক গোয়েন্দা মহাপরিচালক বলেন, তারা জুসের অবস্থান থেকে সরে এসে স্বীকার করেছেন সেগুলো মদই ছিল। তবে তারা এর বৈধ কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।
তবে এ ব্যাপারে মালিকপক্ষ দায়ী নয় জানিয়ে জিএম ফ্রাঙ্ক হেনরী এবং এজিএম ফুড এন্ড বেভারেজ এমদাদুল আমীন বলতে পারবেন বলে জানান রেইন্ট্রির মালিক। শুল্ক গোয়েন্দা মহাপরিচালক জানান, তাদেরকেও তলব করা হয়েছে, দুই পক্ষের বক্তব্য নিয়ে জানা যাবে আসলে কে জড়িত।
রেইন্ট্রির মালিক আট লাখ সতের হাজার টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছেন জানিয়ে মঈনুল খান বলেন, মার্চ থেকে ১৪ মে পর্যন্ত রেইন্ট্রির মালিক আট লাখ ২৭ হাজার টাকা ভ্যাট আদায় করছেন, কিন্তু মাত্র দশ হাজার টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছেন। বাকিটা নিজেরে প্রফিট দেখিয়েছেন, যা অমার্জনীয় অপরাধ। এই বিষয়ে মামলার জন্য সুপারিশ করা হবে বলেও জানান তিনি।
মঈনুল খান বলেন, আলামতসহ আলোচিত বনানী ধর্ষণ ঘটনার তদন্তকারী সংস্থার কাছে পাঠাবো, যেটি পেয়েছি তা ওই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ আলামত হিসেবে বিবেচিত হবে।
আপন জুয়েলার্সের স্বর্ণ জব্দ প্রসঙ্গে শুল্ক গোয়েন্দা মহাপরিচালক বলেন, আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি শো-রুমে সাড়ে ১৩ মণ স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছে যার মূল্য আড়াইশ কোটি টাকা। যার কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই।
মঈনুল খান বলেন, আজ সকালে সিলেটের জিন্দাবাজারে থেকে লুকায়িত একটি মার্সিডিজ গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। পরে জানতে পারি যে গাড়িটি আপন জুয়েলার্সের মালিক এবং তার ছেলে সাফাতের। এই গাড়িতে শুল্ক ফাঁকির ঘটনা ঘটেছে। বিআরটিএর রেজিস্ট্রেশনে দেখানো হয়েছে গাড়ি ২০১১ সালের, কিন্তু পিন নম্বরে দেখা যায় ২০০২ সালে।
জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে রেইনট্রির মালিক শাহ মোহাম্মদ আদনান হারুন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা নির্দোষ প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র্র্র জমা দিয়েছি। তারা এই কাগজপত্র্র পেয়ে সন্তুষ্ট। অবশ্যই মাদক অবৈধ। তবে কিভাবে এই মাদকদ রেইন্ট্রিতে প্রবেশ করল সেটা আমি জানি না। আমার নতুন হোটেল বিধায় এখনো আমি গুছিয়ে উঠতে পারিনি। এটি কারা করেছে এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।