আয়না২৪ ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোরভাবে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা নিশ্চিত করতে সন্ত্রাসীদের অস্ত্র ও অর্থায়নের যোগান বন্ধে বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। রোববার সৌদি আরবের রাজধানীতে কিং আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আরব-ইসলামিক-আমেরিকান সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অবশ্যই সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র সরবরাহ ও অর্থের উত্স বন্ধ করতে চাই।’
মুসলিম দেশগুলোর প্রতি মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি বন্ধ ও শান্তির নীতি অবলম্বনের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংলাপে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি সকলের জন্য বিজয়-বিজয় পরিস্থিতি তৈরি করবে।’ অনুষ্ঠানে সৌদি আরবের বাদশা ও দুটি বড় মসজিদের খাদেম সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সউদ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং আরব ও অন্যান্য মুসলিম দেশসমূহের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানগণ বক্তব্য রাখেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস ও চরমপন্থা বিশ্বের শান্তির জন্য কেবল বড় হুমকিই নয়, এটি উন্নয়ন ও মানব সভ্যতার জন্যও। তিনি বলেন, ‘এটি যে কোনো দেশ, ধর্ম ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সকল প্রকার চরমপন্থার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে এবং সর্বদাই যে কোনো ধরনের একক বা সম্মিলিত সন্ত্রাস ও উেসর বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। ইসলামকে সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম, বিশ্বাস বা মৌলিক পরিচয় নেই, তারা যে কোনো ধর্ম থেকে আসুক না কেন।’ ইসলামকে শান্তির ধর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম কখনো সহিংসতা বা হত্যাকাণ্ড সমর্থন করে না এবং ‘আমরা যে কোনো ধরনের চরমপন্থা ও সহিংসতায় ধর্মকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিচার্য মনে করি না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ইরাক ও সিরিয়ার মতো যুদ্ধাবিধ্বস্ত দেশগুলো সন্ত্রাসী সংগঠনসমূহের অভিযান এবং সদস্য সংগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর যুক্তরাষ্ট্রের মার্শাল পরিকল্পনা অনুসরণে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর জন্য একটি পুনর্গঠন ও উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা আশঙ্কা করে বলেন, বিশ্বব্যাপী শরণার্থী সংকটের কারণে সন্ত্রাস ও সহিংসতা বেড়ে যেতে পারে। কারণ শরণার্থী সংকট সন্ত্রাস ও সহিংসতার একটি সম্ভাবনাময় উেস পরিণত হতে পারে। তিনি বলেন, সমুদ্র সৈকতে পড়ে থাকা তিন বছরের শিশু আয়লানের লাশের ছবি অথবা আলেপ্পোতে ওমরানের রক্তাক্ত মরদেহ প্রতিটি মানুষের হূদয়কে নাড়া দিয়েছে। একজন মা হিসেবে আমাকেও এ ছবি কঠিনভাবে নাড়া দিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, শরণার্থীদের বেদনা আমি বুঝি। কারণ আমিও শরণার্থী ছিলাম। এ প্রসঙ্গে তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর পরিবারের বন্দিত্ব এবং ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের শাহাদাত বরণের পর প্রবাস জীবনের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ৬ বছর আমি ও আমার ছোট বোন বিদেশে শরণার্থী ছিলাম। তাই শরণার্থীদের বেদনার বাস্তবতা আমি বুঝতে পারি। শেখ হাসিনা বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি ও বঞ্চনা নতুন প্রজন্মের মনে অন্যায়-অবিচারের প্রতি ঘৃণার মনোভাবের সৃষ্টি হয়। তাই একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আমাদেরকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশে সন্ত্রাস দমনে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ দমনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো প্রস্তুত এবং অস্ত্রসহ যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তারা দেশে গজিয়ে ওঠা সন্ত্রাসীদের কার্যকরভাবে মোকাবেলা করছে। তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে তাঁর সরকার জনগণকে যুক্ত করে বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা কার্যকরভাবে দেশে গজিয়ে ওঠা উগ্রবাদীদের মোকাবেলা করছি। বেশ কয়েকটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব গোষ্ঠী কোন কোন মহল থেকে সমর্থন পেয়ে আসছিল। পাশাপাশি সরকার এদের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যাপক প্রচারাভিযান চালাচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে তিনি ব্যক্তিগতভাবে সমাজের সকল শ্রেণি বিশেষ করে জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, ছাত্র এবং দেশব্যাপী মসজিদগুলোর ইমামদের সঙ্গে সভা ও মতবিনিময় করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত আরব-ইসলামিক-আমেরিকান শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়ে তিনি আনন্দিত। তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য তিনি বাদশা সালমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। শেখ হাসিনা রিয়াদে ইসলামিক কাউন্টার টেররিজম সেন্টার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়ার জন্যও বাদশা সালমানকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হতে পেরে সস্তুষ্ট।
প্রধানমন্ত্রী মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর রওজা মুবারক জিয়ারত করেছেন-
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সোমবার বিকালে সৌদি রাজকীয় নিয়ম অনুযায়ী পবিত্র নগরী মদিনায় মসজিদ-ই নববীতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর রওজা মুবারক জিয়ারত করেছেন। এর আগে তিনি একই মসজিদে জোহরের নামাজ আদায় এবং দেশবাসীর মঙ্গল ও মুসলিম উম্মাহর অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাতে অংশ নেন।