আয়না২৪ ডেস্ক
যুক্তরাজ্যের কট্টর ডানপন্থী বিতর্কিত নেতা নাইজেল ফারাজকে তাঁর দেশে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত করার বাসনা ব্যক্ত করে টুইট করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর এমন টুইটে রীতিমতো বিব্রত যুক্তরাজ্য সরকার।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক মুখপাত্র কেবল ‘যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূতের পদ খালি নেই’ বলে প্রতিক্রিয়া সীমাবদ্ধ রেখেছেন। তবে ট্রাম্পের ওই টুইটে সমালোচনার ঝড় বইছে বিভিন্ন মহলে। বলা হচ্ছে, ট্রাম্পের এমন টুইট বার্তা ‘বিস্ময়কর হস্তক্ষেপ’ এবং ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচারের গুরুতর লঙ্ঘন’।
বর্ণবাদী, নারীবিদ্বেষী ও উগ্রবাদী নানা বিতর্কিত প্রচার চালিয়ে অভাবনীয়ভাবে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর পদে নির্বাচিত হওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় লেখেন, ‘অনেকে নাইজেল ফারাজকে যুক্তরাষ্ট্রে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত হিসেবে দেখতে চান এবং তিনি এ পদে বেশ ভালো কাজ করতে পারবেন।’
বিবিসির দক্ষিণ আমেরিকাবিষয়ক সম্পাদক জন সোপেল ট্রাম্পের আচরণ ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘একটি দেশের হবু রাষ্ট্রপ্রধান আরেকটি দেশকে বলছেন, তাঁরা কাকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ করা উচিত। যেকোনো বিচারে এটি সাংঘাতিক রকমের অস্বাভাবিকতা।’ তিনি বলছেন, ট্রাম্পের ওই এক টুইটে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের সব নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন। জন সোপেল বলেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের সঙ্গে আগামী বছর ট্রাম্পের সাক্ষাতের কথা রয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বর্তমান রাষ্ট্রদূত স্যার কিম ড্যারচে যখন ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাছ করছেন, তখন তাঁদের দুজনের জন্যই ট্রাম্পের ওই টুইট চরম বিব্রতকর পরিস্থিতির তৈরি করল।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনও বিষয়টি নিয়ে আজ মঙ্গলবার হাউস অব কমন্সে মন্তব্য করেন। তিনিও যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূতের পদ খালি নেই মন্তব্য করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বর্তমান রাষ্ট্রদূত চমৎকার কাজ করে যাচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে দায়িত্ব পালন করা সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত স্যার ক্রিস্টোফার মেয়ার বিবিসিকে বলেন, ‘এটি এক নজিরবিহীন ঘটনা। যুক্তরাজ্য কাকে ওয়াশিংটনে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেবে, সে স্বাধীনতা যুক্তরাজ্যের। আমার মতে, ট্রাম্পের পরামর্শ শোনার পর ভদ্র কিন্তু কঠোরভাবে এটা প্রত্যাখ্যান করা উচিত।’
নাইজেল ফারাজ ব্রিটিশ সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, যুক্তরাজ্য বারবার ট্রাম্পের প্রতি বিরূপ আচরণ করছে। জাতীয় স্বার্থকে বাদ দিয়ে নিজেদের পছন্দ-অপছন্দকে প্রাধান্য দিচ্ছে। ট্রাম্প সরকারের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় স্বার্থে যেকোনোভাবে তিনি এই যোগাযোগ কাজে লাগাতে প্রস্তুত।
যুক্তরাজ্যের অভিবাসনবিরোধী কট্টরপন্থী দলের নেতা নাইজেল ফারাজের সঙ্গে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রচারকালেই প্রকাশ পায়। কট্টর জাতীয়তাবাদ ও অভিবাসন নীতিতে এই দুই নেতার বেশ মিল রয়েছে। দুজনই রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে বিশ্বাসী এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ভেঙে দেওয়ার পক্ষে। ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর নাইজেল ফারাজ প্রথম কোনো ব্রিটিশ রাজনীতিক হিসেবে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পান।