আয়না২৪ প্রতিবেদন
সপ্তম বারের মতো জিএফআই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। ২০০৫ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত উন্নয়নশীল বিশ্বের অর্থ পাচারের তথ্য প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের সাথে বিশ্বের যেটুকু বাণিজ্য হয় তার ১২ থেকে ১৭ ভাগ পর্যন্ত পাচার হয়ে যাচ্ছে। এর পরিমাণ ৫৩০ কোটি ডলার থেকে ৭৫০ কোটি ডলারের মধ্যে। শুধু বাংলাদেশ নয়, উন্নয়নশীল বিশ্বের ৮৭ শতাংশ অর্থ পাচারের মাধ্যম হলো আন্ডার বা ওভার ইনভয়েসিং। এবারের প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যের তথ্য বিশ্লেষণ ছাড়াও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রদত্ত তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। অর্থ পাচারের তথ্য ছাড়াও বিভিন্ন দেশে কী পরিমাণ অর্থ অবৈধ মাধ্যমে আসছে তারও বিশ্লেষণ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী মোট বাণিজ্যের ৪ থেকে ১২ শতাংশ দেশের ভেতরে অবৈধভাবে প্রবেশ করছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর একটি বড় অংশ হুন্ডি হতে পারে। প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায় ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে গড়ে ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি পাচার হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৩ সালে সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি পাচার হয়েছে।
প্রতিবেদনের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বিরূপাক্ষ পাল বলেন, ২০১৩ সালে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা অনেক অস্থিতিশীল ছিলো। সেসময় বেসরকারি বিনিয়োগও কমেছিলো। ফলে অর্থ পাচার তুলনামূলক বেশি হবে এমন তথ্য অমূলক নয়।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির গবেষক ড. তৌফিকুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, আগের প্রতিবেদনের সঙ্গে তুলনা করলে দেশের অর্থ পাচার পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। বর্তমানে বাংলাদেশ অর্থ পাচারের তালিকার ২৪তম অবস্থানে রয়েছে। অর্থ পাচার রোধে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করা প্রয়োজন। সেইসঙ্গে দেশভিত্তিক বাণিজ্যের তথ্য আদান প্রদান বাড়াতে হবে বলেও তিনি মনে করেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৪ সালে উন্নয়নশীল ও উদীয়মান দেশগুলো থেকে প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। উন্নয়নশীল বিশ্বের মোট বাণিজ্যের ৪ দশমিক ২ ভাগ থেকে ৬ দশমিক ৬ ভাগ পাচার হয়ে যাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশ থেকে মুদ্রা পাচারের সম্ভাব্য কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে তথ্য গোপন ছাড়াও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকার একটি বড় অংশ পাচার হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া অনেকেই দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত বড় অঙ্কের অর্থ দেশে বিনিয়োগ করা নিরাপদ ভাবছেন না। বিনিয়োগ পরিবেশ যথাযথ মানে উন্নীত না হওয়া একটি বড় কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আগের বছরের তথ্যের চেয়ে এ বছরের তথ্যে অনেক ভিন্নতা আছে। মূলত, পদ্ধতি পরিবর্তনের ফলে এমনটি হচ্ছে। উন্নয়নশীল বিশ্ব থেকে অর্থ পাচার রোধে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। এরমধ্যে সকল দেশকে আন্তর্জাতিক মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাস অর্থায়নরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখা, অর্থ বিনিময়ের তথ্যের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা গড়ে তোলা ও দেশ ভিত্তিক তথ্যের আদান প্রদান বাড়ানোর ওপর তাগিদ দেওয়া হয় ওই প্রতিবেদনের সুপারিশে।