এখনই সংবিধান সংশোধন না করলে বর্তমান সংসদের পর সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন আর থাকছে না। সংবিধান সংশোধন করতে হলে সংসদের মোট সংসদ সদস্যের দুই তৃতীয়াংশের সমর্থন প্রয়োজন। ফলে একাদশ সংসদে সরকারি দলের দুই তৃতীয়াংশ সদস্য না থাকলে কিংবা বিরোধী দলের সমর্থন না পেলে মহিলা আসন পুনরায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না।
সংবিধান অনুযায়ী ৩৫০ জন সংসদ সদস্য নিয়ে সংসদ গঠিত হয়। দুই ধরনের নির্বাচনী ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্বাচিত সদস্যরা হন। এর মধ্যে একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকাসমূহ থেকে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ৩০০ জন এবং সংসদের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের পদ্ধতিতে ৫০ জন সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংবিধানের ৬৫(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বর্তমানে থাকা ৫০ জন সংরক্ষিত নারী সদস্যের মেয়াদ চলতি সংসদেই শেষ হচ্ছে। ওই অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে, ‘সংবিধান (চতুর্দশ সংশোধন) আইন, ২০০৪ প্রবর্তনকালে বিদ্যমান সংসদের অব্যবহিত পরবর্তী সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ হইতে শুরু করিয়া দশ বত্সর কাল অতিবাহিত হইবার অব্যবহিত পরবর্তীকালে সংসদ ভাংগিয়া না যাওয়া পর্যন্ত [পঞ্চাশটি আসন] কেবল মহিলা-সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত থাকিবে এবং তাঁহারা আইনানুযায়ী পূর্বোক্ত সদস্যদের দ্বারা সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির ভিত্তিতে একক হস্তান্তরযোগ্য ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হইবেন: তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার কোন কিছুই এই অনুচ্ছেদের (২) দফার অধীন কোন আসনে কোন মহিলার নির্বাচন নিবৃত্ত করিবে না।’
২০০৪ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধন করে সংরক্ষিত নারী সদস্যের ৪৫টি আসন সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আনুপাতিক হারে বন্টনের ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। তখন এর মেয়াদকাল নির্ধারন করা হয়েছিলো পরবর্তী সংসদের (নবম সংসদ) প্রথম বৈঠক থেকে দশ বছর। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। আর প্রথম অধিবেশন বসে ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি। সেই হিসাবে ২০১৯ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যের মেয়াদ রয়েছে। ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নারী সদস্যদের সংখ্যা ৪৫ থেকে ৫০ এ উত্তীর্ণ করা হয়। কিন্তু এর মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। ফলে এই সংসদ শেষে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যের বিধান সংবিধানে থাকছে না।
এই বিধান অব্যাহত রাখতে চাইলে আবার সংবিধান সংশোধন করতে হবে। এটি বর্তমান সংসদেও সম্ভব। কেননা বর্তমান সংসদে সরকারি দলের দুই তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্য রয়েছে। এই সংসদে তা না করা হলে ভবিষ্যতে এই বিধান রাখা নিয়ে জটিলতা দেখা দিতে পারে যদি পরবর্তী মেয়াদে সরকার গঠন করতে যাওয়া রাজনৈতিক দলের সংসদে দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন না থাকে।
এদিকে দেশে ক্রিয়াশীল নারী সংগঠনগুলো সংসদে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্বের অনুপাতে সংরক্ষিত নারী আসন বন্টনের বিধানের পরিবর্তে সরাসরি ভোটে সংরক্ষিত নারী সদস্যের নির্বাচন চায়। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মালেকা বানু বলেন, ‘আমরা চাই নারী আসন থাকুক। তবে এর সংখ্যা মোট সদস্যের এক-তৃতীয়াংশে উন্নীত করতে হবে। আর সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীরা সাধারণ সংসদ সদস্যদের মতো সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। যাতে কোন ব্যক্তি বা দলের প্রতি নয়, জনগনের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা থাকে। এখন যে প্রক্রিয়া চলছে এতে ব্যক্তির পছন্দের ভিত্তিতে সংরক্ষিত নারীরা মনোনীত হন। ফলে তারা ব্যক্তি ও দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। আমরা সংরক্ষিত নারী আসনের ক্ষেত্রেও একটা কার্যকর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রবর্তন চাই।
নিজেরা করি’র প্রধান নির্বাহী খুশি কবীরও সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোটের বিধান চালু করার দাবি জানান। তার মতে, নারী সংসদ সদস্যের সংখ্যা সাধারণ সদস্য সংখ্যার এক তৃতীয়াংশে উন্নীত করা উচিত। যদি তা ৫০ শতাংশে উন্নীত করা যায়, সেটা আরও ভাল হয়।