একান্তে “ডিয়ার” আলিয়া

নভেম্বর ২১, ২০১৬
Spread the love

আয়না ২৪ বিনোদন ডেস্ক-

কিছুদিন পরেই বলিউডে মুক্তি পেতে যাচ্ছে আলিয়া ভাট ও শাহ্রুখ খান অভিনীত ছবি “ডিয়ার জিন্দেগী”। সে প্রসঙ্গ ধরেই আনন্দবাজার পত্রিকা সাক্ষাৎকার নেয় আলিয়া ভাট এর। আয়না ২৪ পাঠকের জন্য তা হুবহু প্রকাশ করা হল-

বছর তেইশের আলিয়া ভাট- এর নাকি আজকাল প্রচণ্ড মনখারাপ?

(ঘাবড়ে গিয়ে) কই না তো! আমি তো বেশ ভাল আছি। সিঙ্গাপুরে ‘বদ্রীনাথ কি দুলহানিয়া’র শ্যুটিং করছি, মজা করছি, ভালই আছি তো…

 

কিন্তু টুইটার, ইনস্টাগ্রামে তো লিখেছেন, ‘গো টু হেল, জিন্দেগি’। জাহান্নামে যাও জীবন…

(খুব হেসে) আরে, শাহরুখের সঙ্গে নিজের প্রথম ছবি ‘ডিয়ার জিন্দেগি’, তার নতুন গান রিলিজ হয়েছে, সেটা তো সোশ্যাল মিডিয়ায় দেবই। কিন্তু আমি আজকাল আর মন খারাপ করি না। তবে একটা সময় ছিল, যখন ‘গো টু হেল’ কথাটা আমার ভীষণ প্রিয় ছিল। রাগ হলেই শুনিয়ে দিতাম। তখন সদ্য হার্টব্রেক… (একটু হেসে) যাক গে, ও সব পুরোনো স্মৃতি…

 

বলুন না। সুদূর সিঙ্গাপুরে বসে না হয় একটু স্মৃতির সরণিতে হাঁটলেনই…

আরে, তখন সতেরো বছর বয়স, প্রথম প্রেমটা সদ্য ভেঙেছে। মনে হতো সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে পালিয়ে যাই। কখনও মনে হতো কেন আমার সঙ্গেই এ রকম হচ্ছে। তবে, এখন আপনার সঙ্গে কথা বলতে বলতে মনে হচ্ছে, ধুস! এগুলো নিয়ে কেউ ভাবে নাকি? ওগুলো সব ছোটবেলার ফ্রাসট্রেশন…আরে, যেটা আমার হাতে নেই, সেটা নিয়ে না ভেবে বরং বাবা-মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করা অনেক ভাল (হাসি)।

 

সে কি! আপনি মহেশ ভাট আর সোনি রাজদানের সঙ্গে ঝগড়া করেন নাকি?

প্রচণ্ড। ওদের সঙ্গে ঝগড়া না করলে আমার চলে না। মাঝে মাঝে মনে হয় ওদের সঙ্গে আমার মতের মিল নেই, বোধহয় সেই কারণেই রোজ এত ঝগড়া করি। কিন্তু এটাও ঠিক যে ওরা না থাকলে তো কিছুই করতে পারতাম না। রোজ সকালে মায়ের ওপর একবার চিৎকার না করলে মনে হয়, আজ কী যেন একটা করলাম না। তখন, ফোন করে উস্কে দিই। ব্যস, মা পুরো ফায়ার!

বাবাকে অবশ্য জ্বালানো যায় না। তার উইলপাওয়ার খুব স্ট্রং, এবং ওই গুণটা বাবার থেকেই পেয়েছি আমি। তবে, আমি অনেকটা মায়ের মতো। এই রেগে গেলাম তো দু’মিনিটেই গলে জল। আর শুনুন, আমি কিন্তু সেটে কোনও দিন রাগারাগি করি না। ওখানে আমি ভীষণ প্রফেশনাল।

 

প্রফেশনাল হলে রাগ করা যায় না?

(একটু উত্তেজিত হয়ে) আরে না, না, তা কেন? কিন্তু শ্যুটিং করতে এসে তো আর বাড়ির মতো ঝগড়া করা যায় না। বড়জোর একটু বকতে পারি, মোবাইলটা জোরে বাজলে। তবে পাশে যখন শাহরুখ দাঁড়িয়ে, সেখানে কেউ মুখ খোলে নাকি?

 

শুনলাম, আজকাল নাকি বরুণ ধাওয়ান, সিদ্ধার্থ মলহোত্র-রা চাপে পড়ে গেছেন ‘ডিয়ার জিন্দেগি’তে ৫১ বছরের শাহরুখের সঙ্গে ২৩ বছরের আলিয়ার কেমিস্ট্রি দেখে…

(হেসে) তাই নাকি? জানি না তো। তবে আমার কাছে বয়সের ডিফারেন্সটা কোনও ফ্যাক্টরই নয়। আরে ভাই, আমি ছোটবেলা থেকেই শাহরুখের ডাই-হার্ড ফ্যান। ওর সঙ্গে যে স্ক্রিন স্পেস শেয়ার করছি, এটাই একটা বড় ব্যাপার। একটা লোক, যার অভিনয় দেখে বড় হয়েছি, তার বিপরীতে কাজ করা ইজ এ বিগ থিং। আর ছবিটার বিষয়বস্তুই তো দুই অসম বয়সের মানুষকে নিয়ে।

 

শাহরুখের সঙ্গে প্রথম দিন শট দেওয়ার আগে নাকি আপনি এত টেনশনে ছিলেন যে স্বয়ং শাহরুখ এসে পরিস্থিতি সামলান…

কিছুটা টেনশন তো থাকবেই। থ্যাংক গড, সব ঠিকঠাক উতরে গিয়েছিল। তবে গত বছর একটি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে একসঙ্গে পারফর্ম করেছিলাম আমরা, এবং তখনও শাহরুখ আমার সঙ্গে ভীষণ সহজ ভাবে মিশে ছিল। সুতরাং, প্রথম দিনের পর, সম্পর্কটা সহজ হয়ে গিয়েছিল। ওর এনার্জি দেখে মনে হতো, আরে, এই লোকটা তো আমাদেরই বয়সি। আর একটা কথা বলি? শাহরুখের সঙ্গে আরও কয়েকটা ছবি করতে চাই। তা হলে অভিনেত্রী হিসেবে আমিও কিছু শিখতে পারব। আমাদের জুটিটা খুব ভাল।

‘ডিয়ার জিন্দেগি’তে আলিয়া ও শাহরুখ

বরুণ ধাওয়ান থেকেও?

(জোরে হেসে) আমার সঙ্গে তো কুণাল কপূরের কেমিস্ট্রিও খুব ভাল। আমার খুব পুরনো বন্ধু ও। হি ইজ ভেরি চার্মিং। তবে, সে দিন ‘কফি উইথ কর্ণ’তেও দেখলাম, শাহরুখ ইজ সাচ আ লাভলি শো-ম্যান। জানেন, ও না মাঝেমাঝে ডায়ালগ ভুলে যেত, তখন আমি ওকে মুখস্থ করাতাম। ভাল কেমিস্ট্রি না থাকলে এটা হয়?

 

ফাওয়াদ খান, বরুণ ধাওয়ান, সিদ্ধার্থ মলহোত্র, শাহিদ কপূর, শাহরুখ খান — আপনি বোধহয় এই মুহূর্তে বলিউডের প্রায় সব ‘হট’ অ্যাক্টরের নায়িকা হয়েছেন…

(থামিয়ে দিয়ে) এর পর জানতে চান কাকে আমার পছন্দ? আমিই দিচ্ছি উত্তরটা—সবাই। সবাই প্রিয় অভিনেতা আমার।

 

একটু বেশি বিনয় হয়ে গেল না?

একদম না। দেখুন ভাই, আমি একজন অভিনেত্রী। আমার কাছে প্রত্যেক অভিনেতাই প্রিয়। আমি কাজের জন্য পয়সা পাই। আর সেট-এ এসে সেটাই করি। তার মধ্যে কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধু আছে, তবে তাদের প্রায় কাউকেই আমি নিজের সুখ-দুঃখের কথা বলি না।

 

তা হলে আলিয়ার দুঃখের খবর কে রাখেন?

আমার দিদি। শাহিন। যেহেতু আমরা প্রায় একসঙ্গে বড় হয়েছি, শাহিন আমাকে খুব ভাল করে চেনে। আমি রেগে গিয়ে চেঁচামেচি করলে, যে প্রথম মাথা ঠান্ডা করতে আসে, সে আমার দিদি। আসলে আমি না ভীষণ ঘ্যানঘ্যানে, এবং মাথা গরম হয়ে গেলে, যাকে যা পারি শুনিয়ে দিই।

মাঝে মাঝে মনে হয়, শাহিন না থাকলে কী করে যে মাথা ঠান্ডা রাখতাম! আসলে, নিজের জীবনে আমি বুঝেছি যে, চাইলেই ভাল থাকা যায় না। তবে আমরা চাইলে সেই খারাপ লাগার মধ্যেও নিজেকে খুঁজে পেতে পারি। আর সেটাই আমাকে আশপাশের লোকজন শিখিয়েছে। আচ্ছা, আপনার  আর কিছু প্রশ্ন আছে? করতে পারেন। তবে, একটাই কিন্তু…

 

সেটে নাকি আপনি শাহরুখকে এমন কিছু কনফেস করেছিলেন, যেটা আগে কারও কাছে করেননি…

(থামিয়ে দিয়ে) কম বয়সে এদিক ওদিকের অশান্তি, সম্পর্কের জটিলতা দেখে মনে হতো, জীবনটা কবে শেষ হবে? এখন মনে হয়, ভাগ্যিস বেঁচে আছি, তাই তো এত কিছু হল। শ্যুট করতে করতে সেটা নিয়েই কয়েক বার কথা হয় শাহরুখের সঙ্গে। তবে, আমার কাছে এখন জিন্দেগিটা খুবই ‘ডিয়ার’, এবং সেটাকে সেলিব্রেট করা উচিত। বাকি সব তার কাছে তুচ্ছ। অ্যাক্টিং, কেরিয়ার, পয়সা, সব… জীবন নিজেই যে একটা এক্সপেরিয়েন্স।