আয়না২৪ প্রতিবেদন
ইসলামী মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির বিকাশের লক্ষে দেশব্যাপী ৫৬০ টি মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সৌদি আরব সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় এসব মসজিদ নির্মাণ করা হবে। সম্প্রতি ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় এসব মসজিদ নির্মাণের লক্ষ্যে আট হাজার ৯৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটিতে অনুমোদনের অপেক্ষা আছে প্রকল্পটি।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতি প্রসারে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ করা সরকারের বিশেষ লক্ষ্য। সরকার চায় মসজিদগুলো ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। মসজিদগুলোতে নারী-পুরুষের আলাদা অজু করা ও নামাজ পড়ার ব্যবস্থা থাকবে। থাকবে গ্রন্থাগার, সম্মেলন কক্ষ ও গবেষণা কেন্দ্র। থাকবে শিশুদের জন্য শিক্ষা সুবিধা। অতিথিশালা ও বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণ সুবিধাও রাখা হচ্ছে। মৃতদেহ গোসল করানো এবং হজযাত্রী ও ইমামদের প্রশিক্ষণের সুবিধাও থাকবে এসব মসজিদে।
সূত্রটি আরো জানায়, প্রতিটি মসজিদ হবে একই মডেলের। পাঁচ বা ছয়তলা বিশিষ্ট এই মডেল মসজিদের জন্য জায়গা লাগবে প্রায় ৪০ শতক। প্রতিটি মসজিদ তৈরিতে প্রাথমিকভাবে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি টাকা । এসব মসজিদ নির্মাণে ইতিমধ্যে ৮০ ভাগ জায়গা নির্বাচন করা হয়েছে। অধিকাংশ উপজেলায় বর্তমানে যেখানে ছোট মসজিদ রয়েছে, কিন্তু জরাজীর্ণ এমন জায়গায় এ মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে বিদ্যমান ওই জরাজীর্ণ ছোট মসজিদ ভেঙে সেখানে নতুন করে এই মডেল মসজিদ তৈরি করা হবে। কোনো কোনো উপজেলায় উপজেলা কমপ্লেক্সের ভেতরের খালি জায়গায় করা হবে এই মসজিদ। আবার কোনো কোনো উপজেলায় নাগরিকরা মসজিদের জন্য জায়গা দান করেছেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে এসব মসজিদ পরিচালিত হবে।
প্রকল্পের ডিপিপির তথ্য অনুযায়ী, এসব মসজিদ নির্মাণে আট হাজার ৯৩ কোটি ৯২ হাজার টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। এরমধ্যে সৌদি আরব সরকার দেবে ছয় হাজার ৮৭৩ কোটি ৯১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। বাকি এক হাজার ২১৯ কোটি ৯ লাখ ২৪ হাজার টাকা দেবে সরকার। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এ মসজিদের নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে। বর্তমানে এ নকশা স্থাপত্য অধিদপ্তরের ভেটিংয়ের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
সূত্র জানায়, গত বছর জুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরব সফর করেন। ওই সফরে প্রধানমন্ত্রী সৌদি বাদশাহর সঙ্গে আলোচনায় দেশব্যাপী মডেল মসজিদ নির্মাণের বিষয়টি তুলে ধরে সহযোগিতার প্রস্তাব করেন। সৌদি আরব সরকার শেখ হাসিনার প্রস্তাব গ্রহণ করেন। সফর শেষে দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী এই মডেল মসজিদের নকশা তৈরিসহ সামগ্রিক বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মাধ্যমে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে পাঠালে সৌদি সরকার তাতে সম্মতি দিয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল এ প্রসঙ্গে বলেন, মসজিদগুলো নির্মাণের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। ইতিমধ্যে জায়গা নির্বাচনসহ বেশ কিছু কাজ এগিয়ে রাখা হয়েছে। এখন জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) অনুমোদন পেলে বাকি কাজ করা হবে।