হজমে কার্যকরী পেঁপে

নভেম্বর ১৮, ২০১৬
Spread the love

আমরা বাঙালিরা যে একটি ভোজনরসিক জাতি তা প্রমানিত। বহুকাল আগে থেকেই এ দেশ হরেক রকমের খাবারের জন্য প্রসিদ্ধ। কিন্তু শুধু খেয়ে গেলেই তো আর চলবে না, তাকে হজমও করতে হবে। না হলেই মহা বিপদ!‌ আমাদের খুব চেনা পরিচিত কিছু জিনিস রয়েছে খাদ্য পরিপাকে যারা নিতে পারে বিশেষ ভূমিকা

বয়সকালে খাবারের পাতে পেঁপে সেদ্ধ খান কিংবা খাওয়ার শেষে একটু জিরিয়ে নিয়ে কয়েক টুকরো পাকা পেঁপে খেয়ে যান নিয়ম করে। কেন এভাবে পাকা পেঁপে খেতে বলা?‌ পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়কে ভাল রাখার জন্যই এই পরামর্শ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের। কারণ বয়সকালে যেটা হয়, শরীরের হজমকারী উৎসেচকের উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়। ফলে খাবার সহজে হজম হতে চায় না। পেঁপে সেই সমস্যা দূর করে। কারণ পেঁপে হজমকারক। পেঁপেতে পাপাইন‌সহ নানা ধরনের ‘‌প্রোটিওলাইটিক এনজাইম’‌ থাকে। এই রাসায়নিকগুলি প্রোটিন হজম করায়। যার জন্য পেঁপে দিলে মাংস নরম হয়ে যায়। পেঁপে মাংসের খাদ্য আঁশকে অংশ ভেঙে নরম করে দেয়। ফলে মাংস খেলেই হজমের সমস্যা হয় যাঁদের, তাঁরা কাঁচা পেঁপে দিয়ে রান্না করা মাংস খান। ‌পাপাইন এনজাইম তথা উৎসেচক মাংসকে সহজপাচ্য করে।

কিছু খেলেই হজম হয় না, যাঁদের এইরকম ভোগান্তি চলে, তাঁদের নিয়মিত কাঁচা পেঁপের ঝোল বা সেদ্ধ এবং পাকা পেঁপে খাওয়া অভ্যাস করতে হবে। মাস দুয়েক এভাবে পেঁপে খাওয়া টানা চালিয়ে যেতে পারলে সব কিছুই খেতে ইচ্ছে করবে। হজমও হবে। ক্যান্সার রোগীদের পেঁপে খেতে বলা হয় খাবার হজম করাতে। পেঁপের রস আর আনারসের রস মিশিয়ে খাওয়ালে ক্যান্সার রোগীদের শুশ্রূষা হয়। আটা, ময়দায় যে হড়হড়ে আঠালো পদার্থ গ্লুটেন থাকে এবং এরকম গ্লুটেন-‌সমৃদ্ধ খাবার‌-দাবার যাঁদের হজম হয় না, তাঁরা পেঁপের তরকারি খান, উপকার পাবেন। কাঁচা পেঁপে খেলে পেট ফাঁপা থেকেও রেহাই পাওয়া যায়।

পেটে গ্যাস?‌ ব্যথা?‌ খিদে মরে গেছে?‌ তার মানে পাকস্থলীতে অম্লরস কমে গেছে। কাঁচা পেঁপের তরকারি খান দু‌’‌বেলা। সহজে খাবার হজম হয় না যাঁদের, গ্যাস অম্বল নিত্যসঙ্গী, তাঁরা সপ্তাহে তিনদিন কাঁচা পেঁপের ভাপে সেদ্ধ তরকারি খান।
নিয়মিত দু’‌চারটা করে তুলসীপাতা চিবোলে হজমের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ মেলে।

অজীর্ণ অর্থাৎ বদহজম তথা অগ্নিমান্দ্যের ধারাবাহিক মোকাবিলায় আলুর রস বানিয়ে সঙ্গে সঙ্গে খান। প্রতিদিন সকালে প্রাতরাশের আধ ঘণ্টা আগে ১০০ মিলিলিটার আলুর রস এবং প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে একই পরিমাণ আলুর রস খেয়ে ঘুমাতে যান। এক সপ্তাহ খেলেই ফল পাবেন। জার্মানি এবং অস্ট্রেলিয়ার ৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ সপ্তাহ বা তারও বেশিদিন ধরে অজীর্ণ রোগে ভোগা ৪০ জনের ওপর আলুর রসে উপসর্গ উপশমের প্রভাব–‌পরীক্ষা চালানো হয়। দেখা গেছে, ২০ শতাংশ অজীর্ণ রোগী পুরোপুরি নিষ্কৃতি পেয়েছেন। প্রায় ৫০ শতাংশ অনেকটাই আরাম পেয়েছেন। দুই–‌তৃতীয়াংশ অল্প হলেও উপকার পেয়েছেন। বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, অ্যালকালয়েড নামে যে যৌগটি আলুতে থাকে, সেটিই অ্যাসিডের মোকাবিলা করে।
পায়খানা পরিষ্কার হয় না?‌ কোষ্ঠবদ্ধতা?‌ পায়খানা করতে গিয়ে প্রদাহ, তলপেটে ব্যথা হয়, খিঁচুনি বা ‌খিল ধরে?‌ পেট ফাঁপে, কখনও কখনও ডায়ারিয়ার ভোগান্তি হয়?‌ ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমের এই সব দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে মেলাটোনিন সাপ্লিমেন্ট। ‘‌মেলাটোনিন’‌ হল এক ধরনের হরমোন। মানুষের মস্তিষ্কে থাকা চোখ আকৃতির গ্রন্থি থেকে এই হরমোন নিঃসৃত হয়। শরীরের শারীরবৃত্তীয় ঘড়িকে নিয়ন্ত্রণ করে এই হরমোন। অন্ত্র–‌প্রাচীরকে সুরক্ষা দেয়, প্রদাহ দমন করে। অন্ত্রেও এই ‘‌‌মেলাটোনিন’‌ হরমোন তৈরি হয়। শরীরে এই হরমোনের খামতি মেটাতে পারলে ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমের ভোগান্তি দূর হয়। জানিয়েছেন আমেরিকার এমোরি ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। বলেছেন, টানা ৮ সপ্তাহ ধরে মেলাটোনিন সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার পর বোঝা যায়, দুর্ভোগ অনেকটাই কমেছে।

যেসব খাবারের সঙ্গে আদা খাওয়া যায়, খান। আদা পেট ফাঁপা, বদহজম, ডায়ারিয়া, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া আটকায়। আদার শুশ্রূষা পেতে দিনে অন্ততপক্ষে দু’‌বার, প্রতিবারে এক চা–‌চামচ করে খোসা ছাড়ানো আদা থেঁতলে চায়ের জলে মিশিয়ে চা খান। খাওয়াদাওয়ার পর এক টুকরো করে আদা চিবোন। প্রতিবারে, প্রতিদিন।

হজম প্রণালীর স্বাস্থ্যরক্ষায় খান গাজর, টমেটো। দুটোই সেদ্ধ করে বা পুড়িয়ে খেলেই বেশি লাভ। হজম প্রণালী চাঙ্গা রাখার সর্বোত্তম দাওয়াই হল রাঙালু। তবে খোসাসহ খেলেই লাভ। বিট এবং বিটের শাকও হজমকারকের কাজ করে।
সজনে পাতা ফ্যাট হজম করায়। সজনে পাতায় ০.‌৫ থেকে ১ শতাংশ ক্যাফিওয়াইলকুইনিক অ্যাসিড থাকে। এই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট খারাপ কোলেস্টেরল কমায়। পিত্তরসের ক্ষরণ বাড়িয়ে খাবারদাবারের মাধ্যমে ঢোকা ফ্যাট আত্মীকরণ করায়। প্রাকৃতিক এই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের সমতুল্য অন্য কোনও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট নেই।

যাঁরা মাঝেমধ্যেই হজমের সমস্যায় ভোগেন, তাঁরা খাওয়া-দাওয়ার পর নিয়ম করে কিছুটা কাঁচা জোয়ান চিবিয়ে খাওয়া অভ্যাস করুন। খেতে পারেন ভাজা জোয়ানও। যদিও কাঁচাতেই বেশি উপকার। কাঁচা জোয়ানের সঙ্গে নুন, মিছরি মিলিয়েও খেতে পারেন।

হজমের সমস্যা মোকাবিলায় গোলমরিচ দারুণ শুশ্রূষাকারী। প্রতিবার খাওয়ার পরে ঘোলের মধ্যে গোলমরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে খান। ঠিক ঠিক হজম হবে। পেট ফাঁপবে না। গ্যাসের অস্বস্তিও উধাও হবে।‌‌‌