আয়না২৪ ডেস্ক
সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার তাঁর ফেসবুকের স্ট্যাটাসে অভিযোগ করেছেন, কোনো তথ্য-প্রমান ছাড়া তাঁকে খুনি বানানো হচ্ছে। গতকাল সোমবার ফেসবুকে ২ হাজার ১৬০ শব্দে লেখা এক স্ট্যাটাসে তিনি বলেছেন, তাঁর শ্বশুর-শাশুড়ি মেয়েকে হারিয়ে ভিত্তিহীন কথা বলছেন। সাংবাদিকেরা সেসব তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ‘সংবাদ-বাণিজ্য’ করছেন।
বাবুল আক্তার বলেন, ‘ভেসে যাওয়ার’ দিনগুলোয় শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁর পাশে ছিলেন বলে তিনি কৃতজ্ঞ। সন্তানদের ভালোর কথা চিন্তা করে স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুর মৃত্যুর পর তিনি শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন। ওই বাড়ির রুচি, সংস্কৃতি ও খাদ্যাভ্যাস সন্তানদের উপযোগী না হওয়ায় তাঁকে শ্বশুরবাড়ি ছাড়তে হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর শ্বশুর-শাশুড়ি তাঁর সঙ্গে এক ‘ষোড়শী’র বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এ অবস্থায় তাঁর অন্যত্র চলে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।
ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বাঁচার জন্য বাবুল আক্তার এসব কথা বলছে। আমার মেয়ের কবরে ঘাস গজায়নি এখনো। বছর ঘোরেনি। হত্যা মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। আমি তাকে বিয়ের জন্য পীড়াপীড়ি করছি?’
মোশাররফ আরও বলেন, তিনি ও তাঁর পরিবারের লোকজনের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাঁরা বরাবর বলে আসছেন, অপরাধী যে-ই হোক, তাঁর শাস্তি হতে হবে। এখনো তাঁরা তা-ই চান। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের প্রভাবশালী ও ভালো মানুষেরা বলেছেন, বাবুল আক্তার চট্টগ্রামে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর স্ত্রী-সন্তানের ক্ষতি করার মতো সাহস চট্টগ্রামে কারও ছিল না। কাজেই বাবুল আক্তারকেই বলতে হবে মিতুর হত্যাকারী কে?’
ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে বাবুল বলেন, তাঁর সন্তানেরা তাদের মায়ের মতোই। মাহমুদা বাবার বাড়িতে এলে চট্টগ্রামে ফিরে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠতেন। সন্তানেরাও অস্থির হয়ে উঠেছিল। তাঁর শ্বশুরবাড়িতে সকাল থেকে ‘স্টার জলসা’ দেখা হতো। ছেলেমেয়েকে শাকসবজি খাওয়ানো হতো না ঠিকমতো। শ্বশুরবাড়িতে আরও অনেকে থাকায় পরিবেশ ঘিঞ্জি ছিল। আশপাশে ‘খারাপ বস্তিবাসীর চেঁচামেচি আর অশ্লীল কথোপকথন’ ছেলেকে খিটখিটে করে তুলছিল। একসময় তাঁকে মা-বাবা অথবা শ্বশুর-শাশুড়িকে বেছে নিতে বলা হয়। তাঁর ছেলেমেয়েদের ষোড়শী এক শ্যালিকাকে ‘ছোট আম্মু’ বলতে শেখানো হয়। বাড়িতে হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনার কারণে তাঁর সন্তানেরা অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আলাদা বাসা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
বাবুল আক্তার তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা পরকীয়া প্রেমের অভিযোগও অস্বীকার করেছেন। পাশাপাশি তাঁর শাশুড়ি শাহেদা মোশাররফ ও শ্যালিকা শায়লা তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুর পর লাশ বাদ দিয়ে আলমারি থেকে কাপড়চোপড়, গয়নাগাঁটি আর জমানো কিছু টাকাপয়সা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আনায় ব্যস্ত ছিলেন বলে তিনি দাবি করেছেন। কিছুদিন পর আবারও বাইরে থেকে মিস্ত্রি ডেকে আলমারি ভেঙে সেখান থেকে সবকিছু তাঁরা নিয়ে গেছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
বাবুল আক্তারের দাবি, তিনি আলাদা বাসা নেওয়ার কথা জানানোর পরই শ্বশুরপক্ষ তাঁকে ‘পচিয়ে ছাড়বেন’ বলে শাসিয়েছিল।
বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন বলেন, বাবুলের উচিত ছিল তাঁকে নিয়ে যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে, তা কাটাতে সংবাদ সম্মেলন করা। অন্যদিকে বাবুল আক্তার বলেছেন, তিনি কৃতজ্ঞ ছিলেন বলে চুপ ছিলেন। তিনি তাঁর মা-হারা সন্তানদের নিয়ে ব্যস্ত।