আয়না ২৪ প্রতিনিধি
রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকার মধ্যে অন্যতম সায়েদাবাদ। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ এ পথে রাজধানীতে প্রবেশ করেন। এছাড়া ডেমরা-মাতুয়াইল এবং দনিয়া-সারুলিয়ার লাখো মানুষ প্রতিদিন এ এলাকা দিয়ে যাতায়াত করেন। সড়ক দখল করে বাস পার্কিং করে রাখায় সায়েদাবাদ প্রধান সড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়। এতে অন্তহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় চলাচলকারীদের।
ঢাকা মহানগরীর ব্যস্ততম সায়েদাবাদ বাস স্ট্যান্ডের রাস্তাগুলোর অধিকাংশই বন্ধ। রাস্তার কিছু অংশে বাস পার্কিং করা। কিছু অংশে স্টপেজের মতো মহাসড়কেই বাস রেখে যাত্রী ওঠানামা করানো হচ্ছে। আবার কোনো কোনো জায়গা সিটি কর্পোরেশনের সড়ক মেরামতের কাজে বন্ধ রাখা হয়েছে। আন্তঃনগর কোনো পরিবহন সায়েদাবাদ হয়ে চলাচল করতে পারে না। যার কারণে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন ওই সড়কে যাতায়াতকারীরা।
ভুক্তভোগীরা জানান, সায়েদাবাদ বাস স্ট্যান্ড থেকে বেরিয়ে বাসগুলো রাস্তা দখল করে দাঁড়িয়ে থাকে। এ কারণে সায়েদাবাদ হয়ে এখন আর আন্তঃনগর পরিবহনগুলো চলাচল করতে পারে না। গুটিকয় পরিবহন চললেও ২ মিনিটের পথে বসে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এছাড়া আন্তঃজেলা বাসগুলো টার্মিনাল থেকে বের হতেই ১ ঘণ্টার বেশি সময় নষ্ট হয়ে যায়। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। ঈদ উপলক্ষে এ সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। কারণ এ পথেই দেশের প্রায় ৩০টি জেলার ঘরমুখো মানুষ বের হচ্ছেন।
সায়েদাবাদ রেল লাইনের কাছাকাছি অংশে মুনলাইন, পদ্মা এক্সক্লুসিভ, হবিগঞ্জ এক্সপ্রেস, অগ্রদূত, এশিয়া লাইন, এশিয়া ট্রান্সপোর্ট, এশিয়া এয়ারকোন, তিশা, প্রিন্স, সুরমা, মিতালী, ডলপিন, আল্লাহ ভরসা, জননী ও জোনাকী পরিবহন রাস্তা দখল করে যাত্রী উঠাচ্ছে। এতে যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান সড়কটি প্রায় বন্ধ হয়ে থাকছে। এ সময় যাত্রাবাড়ী ও গুলিস্তানের দিক থেকে আসা বিভিন্ন বাস সাইড চেয়ে হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই রাস্তা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলোর। তারা যাত্রী খোঁজায় ব্যস্ত।
অপরদিকে সায়েদাবাদ জনপথ অংশে স্টার লাইন, ইকোনো, মামুন, হানিফ, শ্যামলী, হা-মীম, একুশে, ইউনিক, হিমাচল, ড্রিমলাইন ও সামির এন্টারপ্রাইজ রাস্তা দখল করে যাত্রী উঠাচ্ছে। যার কারণে মানিকনগর-খিলগাঁও থেকে যাত্রাবাড়ী সড়কটি একেবারে বন্ধ। এছাড়া ফুটপাতসহ রাস্তার কিছু অংশ হকার ও ব্যবসায়ীদের দখলে। মাঝে মাঝে রয়েছে ময়লার স্তূপ। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সায়েদাবাদ বাস স্ট্যান্ডের সামনের সড়কে জেলার গাড়িগুলো দাঁড়িয়ে থাকায় যানজট তৈরি হয়। একটি গাড়ির পেছনে আরেকটি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। আন্তঃনগর গাড়িগুলো সাইড পায় না। বেশিরভাগ পরিবহনই বিকল্প সড়কে চলে, যার কারণে আশপাশের সড়কগুলোতেও জ্যাম থাকে। তারওপর স্ট্রিট লাইট না থাকায় রাত হলেই সায়েদাবাদে ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। চুরি-ছিনতাই নিত্যদিনের ঘটনা।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল কালাম অনু বলেন, বাস টার্মিনালে যানজট নিরসন কমিটি আছে। তারা নিয়মিত চাঁদা তোলে। এ চাঁদার লাখ লাখ টাকা কোথায় যায়? যানজট নিরসনে কাউকে তো কোনো কাজ করতে দেখি না।
তিনি আরও বলেন, যানজট নিরসনে আমরা মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার করেছি। এখন মনে হচ্ছে এটাই যানজটের মূল কারণ। ফ্লাইওভার কর্তৃপক্ষ নিচের সড়কগুলো চার লেন করেছে। যেগুলো অনেক সরু। একটা গাড়ি দাঁড়ালে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। বিউটিফিকেশনের নামে সড়কের একাংশ দখল করে রাখা হয়েছে। স্ট্রিট লাইট না থাকায় রাতে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
ডিএসসিসির এ কাউন্সিলর আরও বলেন, আমাদের বিউটিফিকেশনের আগে যানজট নিরসন করা দরকার। বিউটিফিকেশনের জায়গা রাখার কারণে বিভিন্ন স্পটে রাস্তা পারাপারে সমস্যা হয়। বিশেষ করে আরকে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, পুলিশ ফাঁড়ি, মালঞ্চ গলি, কলার আড়তসহ নানা স্পটে মানুষজন রাস্তা পার হতে পারেন না।
সায়েদাবাদ আন্তঃনগর বাস টার্মিনাল পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ সমস্যা অনেক দিনের। আন্তরিকতার অভাবে সমাধান করা যাচ্ছে না। আমি সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন সভায় ওই এলাকার সমস্যার সমাধানের কথা তুলে ধরেছি। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসছে না। যানজট নিরসনে আমরা কিছু স্বেচ্ছাসেবক দেই, তাদের কথা শুনে না আন্তঃজেলা বাস চালক-হেলপাররা। পুলিশের কথাও শুনে না তারা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) টার্মিনাল ব্যবস্থাপক (বাস) মারুফ হাসান জানান, নিয়ম হচ্ছে মালিকের নিজস্ব গ্যারেজে বাস থাকবে। ১৫ মিনিট আগে টার্মিনালে আসবে এবং যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাবে। আমাদের এখানে অধিকাংশ মালিকেরই গ্যারেজ নেই। তারা জোর করে টার্মিনালকেই গ্যারেজ হিসেবে ব্যবহার করেন। আর রাস্তায় গাড়ি থাকলে এটা সরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব পুলিশের, কিন্তু তারা তা করছে না। কারণ এখানে তাদেরও স্বার্থ আছে।
তবে রাস্তা দখল করে বাস দাঁড়িয়ে থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন পুলিশের উপ-কমিশানার (ট্রাফিক-পূর্ব) ফরিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, সড়ক দখল বা বন্ধ করে কোনো গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে এমন অভিযোগ সত্য নয়। এরকম অভিযোগ আমি কখনও পাইনি। তবে, মাঝে মাঝে অজ্ঞতার কারণে চালকরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করান। আমরাও রাস্তায় এক পাশে এক লাইনে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামার সুযোগ দিয়ে থাকি। তবে, আসন্ন ঈদে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে কেউ যাত্রী ওঠানামা করতে পারবে না, আমরা ইতিমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছি।