• Home  / 
  • জাতীয়  / 

প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশ্বব্যাংককে মাফ চাইতে হবেঃ আইনমন্ত্রী

ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৭
Spread the love

আয়না ২৪ প্রতিনিধি

পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ আনার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ যাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের কাছে বিশ্বব্যাংককে ক্ষমা চাইতে হবে।
সংসদে কানাডার আদালতে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র সংক্রান্ত মামলা খারিজ হওয়ার বিষয়ে পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি এবং বিরোধী দলের সদস্যরা এ দাবি জানান। জাতীয় পার্টির সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বিষয়টি উত্থাপন করেন।  
পরে বিষয়ের ওপর বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, সরকারি দলের সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ডা. দীপু মনি, আবদুল মান্নান, জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন বাবলু ও জাসদের মইন উদ্দিন খান বাদল আলোচনায় অংশ নেন।

 
সংসদ সদস্যরা বলেন, রাষ্ট্রের মর্যাদা পুনরুদ্ধারের জন্য এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে রাষ্ট্রের উচিত মামলা করা এবং কাল্পনিক অভিযোগের কারণে পদ্মাসেতু নির্মাণ কাজ শুরু করতে যে সময় ও অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে, বিশ্বব্যাংকের কাছে তার ক্ষতিপূরণ দাবি করতে হবে।  
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। কানাডার আদালত দুর্নীতির কোন তথ্য প্রমাণ পায়নি। এটা দুর্নীতির ষড়যন্ত্র ছিল না, এটা ছিল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।  
তিনি বলেন, যারা পদ্মাসেতুর ধোঁয়া তুলে সেদিন প্রধানমন্ত্রীকে হেয় করতে চেয়েছিল তারা দেশ-জাতির শত্রু। তারা দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুন্ন করেছে। তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।  
তিনি বলেন, পদ্মাসেতুর ঋণ প্রত্যাহারের পর নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেন। প্রধানমন্ত্রী তখন বলেছিলেন বিশ্বব্যাংককে প্রমাণ করতে হবে এতে দুর্নীতি আছে কি-না।  
প্রধানমন্ত্রী বিজয়ী হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি তাঁকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু হচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কারো কাছে মাথানত করতেন না। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাও বলেছিলেন, ‘আমি কারো কাছে মাথানত করবো না, বিশ্ব ব্যাংকের কাছেও মাথানত করবোনা। ’ 
তোফায়েল আহমেদ বলেন, যমুনা সেতু জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল। ১৯৭৩ সালের অক্টোবর মাসে জাপান সফরকালে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মি. তানাকা বঙ্গবন্ধুকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বপ্নের কথা বলেছিলেন। এর সুত্র ধরেই বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।  
তিনি বলেন, পদ্মাসেতু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার স্বপ্ন ছিল। ২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মাসেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। বিএনপি সরকার পরবর্তীতে এই কাজ বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে পদ্মাসেতুর জন্য সরকার ডিজাইনার নিয়োগ করে। ২০১১ সালে সরকার বিশ্বব্যাংকের সাথে ঋণচুক্তিতে আবদ্ধ হয়। ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ১২০ কোটি টাকা ঋণ প্রত্যাহার করে নেয়। পাশাপাশি জাইকাসহ অন্যান্য দাতা সংস্থাগুলোও সরে দাঁড়ায়। দুর্নীতির অভিযোগ এনে অন্যায়ভাবে সেদিন তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বলা হয়, পাশাপাশি যোগাযোগ সচিবসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করতে বলা হয়।  
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সেদিন অন্যায়ের কাছে মাথানত করেননি। তিনি সেদিন সৈয়দ আবুল হোসেনকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, আবুল হোসেন একজন দেশপ্রেমিক। প্রধানমন্ত্রীর কথায় সেইদিন অনেকে সমালোচনা করলেও এটা প্রমানিত হয়েছে-সত্যিকার অর্থেই আবুল হোসেন একজন দেশপ্রেমিক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

 
তিনি বলেন, এডিবি’র রিপোর্টে বলা হয়েছে- পদ্মাসেতু হলে আমাদের জিডিপিতে ১ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি যোগ হবে এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ৩ কোটি মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন হবে।  
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, সারা জাতির উপকারে ও দেশের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রী পদ্মাসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন।  
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক এতোটা শক্তিশালী না, যে শক্তিকে পুঁজি করে তারা ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে উপহাস করতে পারে, সেই স্বাধীন দেশের মানুষকে অপমান করতে পারে, সেই শক্তি বিশ্বব্যাংকের নেই।  
মতিয়া চৌধুরী বলেন, এর পেছনে কলকাঠি নেড়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনুস। জানা গেছে তিনি নাকি ৫ বছরের বাড়ি ভাড়া বকেয়া রেখে চলে গেছেন।  
তিনি বলেন, অন্যায় ও অসত্যভাবে এই প্রশ্নে যেসব লোককে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। তাদের জীবন এতোদিন কিভাবে কেটেছে। এতো গ্লানি, অপমান সহ্য করে একটা মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। এদের কেউ আত্মহত্যা করতে পারতো। তাহলেও আমি আশ্চর্যান্বিত হতাম না। কিন্তু পর্বতসম দৃঢ়তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের পাশে ছিলেন। নৈতিক মনোবল তাদেরও মজবুত থাকায় তারা এসব অতিক্রম করতে পেরেছেন।

 
তিনি বলেন, কানাডার আদালতের রায় প্রমাণ করেছে, পদ্মা সেতুতে কোন দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়নি। বরং আমরা বলতে পারি বিশ্ব ব্যাংক নিজেরাই আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত।তিনি সকলকে সবকিছু পাথরের চোখ দিয়ে না দেখে মানবীয় দৃষ্টি দিয়ে দেখার আহবান জানান।  
সরকারি দলের সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, যারা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না, যারা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি চায় না তারাই পদ্মাসেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছে। বাংলাদেশকে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্ব দরবারে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যই বিশ্বব্যাংক এই দুর্নীতির কাল্পনিক অভিযোগ করেছে।  
তিনি বলেন, কানাডার আদালত এ সংক্রান্ত মামলা খারিজ করে দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের জন্য এটি একটি গর্বের দিন।  
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেদিন পদ্মাসেতুতে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়েছিলেন। প্রমাণিত হয়েছে এটি ছিল মিথ্যা অভিযোগ। অতএব এখন বেগম খালেদা জিয়াকে তার পদ থেকে পদত্যাগ করা উচিত।
তিনি বলেন, একজন অকৃতজ্ঞ মানুষ ড. মুহাম্মদ ইউনুস প্রধানমন্ত্রীকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এর পেছনে কলকাঠি নাড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাকে টেলিফোন কোম্পানির লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল।  
তিনি বিশ্বব্যাংকের মিথ্যা ও ভুল কথা বলার জন্য সংসদে নিন্দা প্রস্তাব আনার দাবি জানান। ইউনুসসহ যারা এর পেছনে ষড়যন্ত্র করেছে তাদেরকে সংসদীয় কমিটিতে ডেকে আনতে হবে। এদের কাছে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে, কেন ও কোন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তারা এমন মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন।

 
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, কানাডার আদালতে মামলা খারিজ হয়ে যাওয়ায় আজকে বাংলাদেশের আত্মমর্যাদা পুনরুদ্ধার হয়েছে।  
তিনি বলেন, মিথ্যা অভিযোগ তোলার কারণে বিশ্বব্যাংককে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে তাদের কাছে মাফ চাইতে হবে।  
এই অভিযোগের ফলে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের তিনি আইনী প্রতিকার চাওয়ার পরামর্শ দেন।  
এ বিষয়ে নির্ধারিত বিধিতে একটি প্রস্তাব এনে তা গ্রহণ করার আহবান জানিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, সংসদের উচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি অভিনন্দন বার্তা পৌঁছে দেয়া এবং রাষ্ট্রের মর্যাদা পুনরুদ্ধারের জন্য রাষ্ট্রকেই বাদী হয়ে বিশ্ব ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করা।