বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের ‘ব্যবহারিক শিল্পকলা’ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইসমাত জাহান বলেন, “বাড়ির সৌন্দর্য্য বাড়াতে গাছের ব্যবহার বরাবরই ছিল, তবে বর্তমানে জায়গার স্বল্পতার জন্য শহরের মানুষের মধ্যে ইন্ডোর প্ল্যান্ট ডেকোরেশনের প্রতি আগ্রহ বেশি দেখা যায়।”
ঘর সাজাতে শহরাঞ্চলে ‘ইনডোরপ্ল্যান্ট’য়ের ব্যবহারের মধ্যে মানিপ্ল্যান্ট, লতাবাহার, অর্কিড ইত্যাদি বেশ পরিচিত। এই ধরনের লতানো গাছ ছাড়াও অনেকে পাথর-কুচি, ক্যাক্টাস, বাটারফ্লাই, পাতাবাহার ইত্যাদি গাছ দিয়েও ঘর সাজিয়ে থাকেন।
জায়গার স্বল্পতা থাকায় চাইলেও অনেকে বাগান করতে পারেন না। সেক্ষেত্রে বারান্দা বা বসার ঘরের যেখানে আলো আসে এমন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ যেমন- গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, কসমস, টগর, এস্টার ইত্যাদি রাখা যায়।
ইসমাত জাহানের মতে, “ঘরের ভেতরে সাধারণত ফুল হয় না এমন ধরনের গাছ লাগানো হয়। তাই এখানে নকশা করা টব অথবা রঙিন টব রাখলে দেখতে ভালো লাগে।”
তিনি আরও বলেন, “গাছ যে ধরনেরই হোক তা যদি সুন্দর টবে লাগান হয় তবে দেখতে বেশ ভালো লাগে। নিজের পছন্দ মতো গাছ সঙ্গে মানানসই টব বেছে নিতে পারেন।”
তবে লতানো গাছ ঝুলন্ত টবে লাগালে দেখতে ভালো লাগে। সেক্ষেত্রে ভিন্ন আকৃতির যেমন-পাতাকৃতি, ত্রিকোণাকার, গোলাকার ইত্যাদি ছোট-বড় টব বেছে নিতে পারেন। ফুলের গাছ লাগানোর জন্য মাঝারি বা একটু বড় আকারের টব বেশ উপযোগী। এই ধরনের টবেও রয়েছে ভিন্নতা- নানান রং, নানান আকৃতি। মটকাকৃতি, গোলাকৃতি অথবা চৌকোণাকার টব ব্যবহার করেও সাজের ভিন্নতা আনা যায়।
এছাড়াও বর্তমানে তিনটি বা দুইটির ঝুলন্ত টবের সেট পাওয়া যায় যা ঘর বা বারান্দার একপাশে ঝোলাতে পারেন। এটি ঘরের সৌন্দর্য অনেকখানি বাড়িয়ে দেয় বলে জানান ইসমাত জাহান।
দোয়েল চত্বরের টব বিক্রেতা শরীফ জানান, লতানো গাছ লাগাতে ছোটবড় ঝুলানো টব এবং কাপ, বাটি অথবা মালসা আকারের ছোট টবে পাথরকুচি, ক্যাকটাস বা এই ধরনের যেকোনো ছোট গাছটেবিলে রাখা যায়।
শরীফ বলেন, “লতানো গাছ লাগানোর জন্য ছোট-বড় ঝুলন্ত টব ও দেওয়াল টব, ফুলের চারাগাছ লাগানোর জন্য মাঝারি ও বড় আকারের টব এবং টেবিলে বা জানালার গ্রিলে গাছ লাগানোর জন্য কাপের মতো টব তৈরি করা হয়।”
কোন ধরনের টবের চাহিদা বেশি জানতে চাইলে দোয়েল চত্ত্বরের আরেক টব বিক্রেতা মো. হাফিজ বলেন, “মাঝারি আকারের ঝুলন্ত টব ও ছোট কাপের মতো টব বেশি বেঁচাকেনা হয়। আর বড় বড় টব কিনতে গাড়ি নিয়ে আসেন এমন লোকজনেরা, কিন্ত সেই সংখ্যা তুলনামূলক কম।”
দোয়েল চত্বরে টব কিনতে আসা গৃহিনী সাবেরা বলেন, “বাগান করা আমার সখ। সারা বছর নানান ধরনের গাছ লাগাই ঠিকই তবে বছরের এই সময়টা আমি ঘরের সাজগোজের দিকে বিশেষ মনোযোগ দেই। এখানে নতুন নতুন মডেলের টব, ফুলদানি পাওয়া যায়, মূলত এইসব দেখতেই এখানে আসি; পছন্দ হলে নিয়ে যাই।”
টবের দরদাম: ঢাকা কলেজের সামনে, গাউসিয়া মার্কেট ও দোয়েল চত্বরে মাটির তৈরি টবের দাম যাচাই করে দেখা যায় যে, টবের আকার ও নকশার ভিন্নতানুযায়ী দামের পার্থক্য রয়েছে।
সাধারণ আকার ও মাপের ঝুলন্ত টব ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। ছোট ঝুলন্ত টব ৫০ থেকে ৮০ টাকা। নকশা করা তিনটার সেট টবের দাম ৫৫০ থেকে ৭৫০ টাকা।
ছোট টব ৪০ থেকে ৮০ টাকা। মাঝারি আকারের টব ৬০ থেকে ১০০ টাকা। বড় টব ১৫০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
কাপ ও মালসাকৃতি টবের দাম ৩০ টাকা থেকে শুরু। উপকরণের ভিন্নতার জন্য এর দামের পার্থক্য ঘটে যেমন- চীনামাটি, পাথর, মোটা প্লাস্টিক, মাটি ইত্যাদি ভেদে দাম কমবেশি হয়ে থাকে।
যেকোনো মাপের ভিন্ন আকৃতির টবের আকারে নতুনত্ব ও আধুনিকতার ছাপ থাকায় ভিন্ন আকৃতির দাম খানিকটা বেশি। তবে দরদাম করলে বেশ সাশ্রয়ে টব কেনা যায় এই সকল জায়গা থেকে।
গাছের দরদাম: প্রজাতি ভেদে ফুলের চারাগাছের দাম ২০ থেকে ১০০ টাকা। পাতা বাহারের চারা ৫০ থেকে ১৫০ টাকা। লতাজাতীয় গাছের দাম ২০ থেকে ৫০ টাকা। কলম করা ফল গাছ ৫০০ টাকা থেকে শুরু।
চারুকলার সামনে, কার্জন হল সংলগ্ন ফুটপাথ ও বকশীবাজারের নার্সারী ঘুরে দেখা যায় যে গাছের দামে রয়েছে ভিন্নতা। তাই দামাদামি করে গাছ কিনলে লাভবান হবেন।
গাছ ও টব যেখানে পাওয়া যায়: আগারগাঁও, ধানমণ্ডি, কলাবাগান মাঠের পাশে, আবাহনী মাঠের উল্টা পাশে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার উল্টাপাশে, সায়েন্স ল্যাব, কার্জন হল সংলগ্ন ফুটপাথ, বকশীবাজার ইত্যাদি।