আয়না ২৪ ডেস্ক
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস ইরানকে অভিযুক্ত করে বলেছেন, সন্ত্রাসে বিশ্বে সবচেয়ে বড় মদদদাতা দেশ ইরান। তিনি বলেন, ইরানই বিশ্বের একমাত্র রাষ্ট্র, যারা রাষ্ট্রীয়ভাবে সন্ত্রাসে মদদ দিচ্ছে। সম্প্রতি একটি মাঝারিপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানোর পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ট্রাম্পের ওই নিষেধাজ্ঞা জারির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরান সম্পর্কে এমন মন্তব্য করলেন ‘পাগলা কুকুর’ (ম্যাড ডগ) নামে খ্যাত সাবেক নৌবাহিনী কর্মকর্তা ও বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী ম্যাটিস। এদিকে ইরানও নিষেধাজ্ঞার পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছে।
গত শুক্রবার দক্ষিণ কোরিয়ায় দুই দিনের সফর শেষে জাপানে যান ম্যাটিস। এদিন জাপানের রাজধানী টোকিওতে এক সংবাদ সম্মেলনে ম্যাটিস বলেন, ‘যদি ইরানের ব্যাপারে বলতে হয়, তাহলে আমি বলব, তারা হচ্ছে রাষ্ট্রীয়ভাবে সন্ত্রাসে মদদ দেয়া একমাত্র রাষ্ট্র।’ তবে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের সেনা উপস্থিতি বাড়ানো কোনো প্রয়োজন দেখেন না ম্যাটিস। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের সেনা উপস্থিতি বাড়ানোর কোনো প্রয়োজনীয়তা দেখছি না। যদিও মধ্যপ্রাচ্যে যে কোনো মুহূর্তে সেনা বাড়ানোর সক্ষমতা আমাদের রয়েছে।’
গত রোববার ইরান মাঝারি আকারের একটি মাঝারিপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে অভিযোগ তুলে বলা হয়েছিল, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের তত্ত্বাবধানে ২০১৫ সালের জুলাই মাসে দেশটির সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স এবং জার্মানিকে নিয়ে গঠিত ছয় জাতিগোষ্ঠীর পরমাণু চুক্তি লঙ্ঘন হয়েছে। ইরানের পক্ষ থেকে ওই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষার কথা স্বীকার করা হলেও চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগের ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ম্যাটিস বলেন, ‘ইরাকের কার্যক্রম এড়িয়ে যাওয়াটা মোটেও কাজে আসবে না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুরু থেকেই এই ব্যাপারে সতর্ক রয়েছেন।’ প্রসঙ্গত, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বেশ কয়েকবারই ইরানের কার্যক্রম অগ্রাহ্য করার জন্য সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সমালোচনা করেন। ম্যাটিন বলেন, ‘এটা অগ্রাহ্য করে কোনো কাজে আসবে না। এটার ব্যাপারে মুখ বন্ধ রাখলেও কোনো কাজে আসবে না।’
ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, তার পূর্বসূরির মতো ইরানের প্রতি এতটা ‘দয়াবান’ হবেন না তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘ইরান আগুন নিয়ে খেলা করছে। তারা বুঝতে পারছে না, ওবামা তাদের প্রতি কতটা দয়ালু ছিলেন। কিন্তু আমি তেমনটা নই।’
এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগের এক বার্তায় জানানো হয়, ইরানের ১৩ জন নাগরিক এবং ১২টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। নিষেধাজ্ঞা তালিকায় নতুন সংযোজিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে লেবানন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চীনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আর ১৩ নাগরিকের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন ইরানি ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আসগারজাদেহ। মার্কিন রাজস্ব বিভাগের অভিযোগ, আসগারজাদেহ-এর সঙ্গে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার গভীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ইরানের চালানো রোববারের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জবাব হিসেবেই এসব নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
যদিও মার্কিন রাজস্ব বিভাগ জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে অনেক ধরেই চিন্তা-ভাবনা করছিল তারা। রাজস্ব বিভাগ ভারপ্রাপ্ত নিষেধাজ্ঞাপ্রধান (স্যাংশন) জন স্মিথ এক বিবৃতিতে জানান, ‘ইরান সন্ত্রাসবাদে সমর্থন এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বিকাশ অব্যাহত রেখেছে, যা এই আঞ্চলের এবং বিশ্বব্যাপী থাকা আমাদের অংশীদার ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি হুমকি চাপিয়ে দিয়েছে।’
উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব গ্রহণের পর গত রোববারই প্রথমবারের মতো ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায় ইরান। মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করেন, তেহরান থেকে ১৪০ কিলোমিটার পূর্বে সেমনান এলাকার কাছের একটি অঞ্চলে ‘খোররামশাহ’ নামের ওই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানো হয়। বিস্ফোরণের আগে ওই ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রায় ৬০০ মাইল দূরত্ব অতিক্রম করেছিল।
এদিকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গিদের সহায়তা দেয়া কয়েকজন মার্কিন নাগরিক ও কিছু প্রতিষ্ঠানের ওপর শিগগিরই আইনি নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুশিয়ারি দিয়েছে ইরান। দেশটি জানিয়েছে, নতুন এই নিষেধাজ্ঞা পরমাণু কর্মসূচি কমানো নিয়ে জাতিসংঘ সমর্থিত চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দিকে ইঙ্গিত করে ইরান বলে, ‘একজন অনভিজ্ঞ ব্যক্তির অপ্রয়োজনীয় হুমকির কাছে তারা কোনোভাবেই নতি স্বীকার করবে না।’ এ সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন উদ্যোগকে ‘বেআইনি’ বলেও উল্লেখ করা হয়।
এর আগে, ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেন, ‘ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি কোনো দেশের জন্য হুমকি নয়।’ নিজেদের রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার তেহরানের রয়েছে। তিনি বলেন, ‘ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে তেহরান কোনো আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেনি। তাই যুক্তরাষ্ট্রের হুমকিতে দমে যাবে না ইরান। নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর আমাদের ভরসা আছে।’