আয়না ২৪ ডেস্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যুক্তরাজ্যে দেখতে চান না দেশটির বিপুল সংখ্যক মানুষ। এরইমধ্যে ট্রাম্পের ব্রিটেন সফর ঠেকাতে একটি অনলাইন পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ। এর আগে ২১ জানুয়ারী লন্ডনে ট্রাম্পবিরোধী উইমেন্স মার্চ-এ অংশ নেন লাখো মানুষ।যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী কোনো আবেদনে যদি এক লাখের বেশি মানুষের স্বাক্ষর থাকে তাহলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আলোচনার জন্য গৃহীত হয়।
২০১৬ সালের নভেম্বরে ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এ পিটিশনটি খোলা হয়। কিন্তু সম্প্রতি ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র সফরে নিষেধাজ্ঞা জারির পর পিটিশনটি জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এই নিষেধাজ্ঞা জারির পরই কয়েক লাখ মানুষ পিটিশনটিতে স্বাক্ষর করেন।
ওই পিটিশনে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সরকারপ্রধান হিসেবে ট্রাম্প ব্রিটেনে প্রবেশ করতে পারেন। তবে তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আমন্ত্রণ জানানো উচিত নয়। কারণ এটা মহামান্য রানিকে বিব্রত করবে। উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে ট্রাম্পকে ব্রিটিশ রানির পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্য সফরের আমন্ত্রণ জানান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। ট্রাম্প এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন।ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং থেরেসা মে
২৯ জানুয়ারি নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে ওই পিটিশনটি শেয়ার করেন ব্রিটিশ লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন। মূলত এরপরই পিটিশনটি স্বাক্ষরে হুমড়ি খেয়ে পড়েন ব্রিটিশ নাগরিকরা। জেরেমি করবিন বলেছেন, মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাজ্যে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত।
শুক্রবার নির্বাহী আদেশে সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিক ও শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার বিশ্বজুড়ে সমালোচনার প্রেক্ষিতে এ দাবি জানালেন করবিন। লেবার নেতা করবিন বলেন, মৌলিক অধিকার, স্বাধীনতা ও আইন নিশ্চিত না হওয়ার আগ পর্যন্ত ট্রাম্পকে সমর্থন করা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর উচিত হবে না।
ব্রিটেনের আইটিভিওয়ান-এর এক অনুষ্ঠানে করবিন বলেন, এতো দ্রুত এবং বিশেষত শেষ যে আদেশ দিয়েছেন এরপর তাকে (ট্রাম্প) আমন্ত্রণ জানানোটা একটু বিব্রতকর। আমার ধারণা, এই সফর দীর্ঘস্থায়ী কিছু একটার সূচনার করবে।
করবিন আরো বলেন, আমার মনে আমাদের উচিত যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যটা স্পষ্ট হওয়া উচিত। কিভাবে তারা মৌলিক অধিকার, স্বাধীনতা ও আইন রক্ষা করে তা দেখা।
করবিনের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, লেবার নেতা মনে করেন, সিরীয় শরণার্থীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকা অবস্থায় ট্রাম্পের যুক্তরাজ্য সফর ঠিক হবে না।
টেলিভিশনের অনুষ্ঠান শেষে করবিন বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যুক্তরাজ্যে স্বাগত জানানো ঠিক হবে না। যেখানে তিনি মুসলিমদের নিষেধাজ্ঞা, শরণার্থীদের আক্রমণ ও নারী অধিকার নিয়ে লজ্জাজনক ও অবজ্ঞামূলক মন্তব্য করছেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে করবিন বলেন, ট্রাম্পের যুক্তরাজ্য সফর যদি থেরেসা মে বাতিল না করেন এবং নিন্দা না জানান তাহলে তিনি ব্রিটিশ জনগণকে ব্যর্থ করবেন।
এদিকে প্রথমে নিন্দা ও সমালোচনা না করলেও প্রবল সমালোচনার মুখে ট্রাম্পের মুসলিম নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে ট্রাম্প নির্বাহী আদেশ স্বাক্ষর করার পর থেরেসা মে এই আদেশের নিন্দা জানাননি।
যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর তুরস্ক সফরে থেরেসা মে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি এ নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করেন কিনা। জবাবে তিনি জানিয়েছিলেন, সহিংস ইসলামপন্থীদের হাত থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষা করা উচিত ট্রাম্পের। অভিবাসন নিয়ে এটা যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব নীতি।
তবে শনিবার শেষ বেলায় লন্ডন ফেরার পর দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনার ঝড় ওঠে। নিজ দলের এমপিদের তোপের মুখেও পড়েন তিনি। এরপর থেরেসা মে’র একজন মুখপাত্র জানান, ব্রিটেন ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করে না।
মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতি দেশটির একান্তই নিজস্ব। কিন্তু এ ধরনের (নিষেধাজ্ঞা) পদক্ষেপ আমরা সমর্থন করি না। আমরা নতুন এই নির্বাহী আদেশ পর্যবেক্ষণ করছি।