আয়না২৪ প্রতিবেদন
নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও যোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে নাম প্রস্তাব করতে সার্চ কমিটিকে পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত কমিটির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন ১২ জন বিশিষ্ট নাগরিক। তারা নির্বাচন কমিশন গঠনে নাম প্রস্তাবের বিষয়ে নিজেদের পরামর্শ তুলে ধরেন। যদিও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে কারও নাম প্রস্তাব করা হয়নি।
আরো পরামর্শ নিতে ৫ জন বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সার্চ কমিটি। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে নাম জমা দেওয়ার সময় চার ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। আজ বিকাল তিনটা পর্যন্ত দলগুলো নামের তালিকা জমা দিতে পারবে। আগে এ সময় সকাল ১১টা পর্যন্ত নির্ধারিত ছিল।
সার্চ কমিটিতে নাম জমা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। গতকাল ২০ দলীয় জোটের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে রাতে দলের স্থায়ী কমিটির মুলতবি বৈঠকে নাম চূড়ান্ত করা হয়। সার্চ কমিটিতে নাম দেওয়া না দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে রাতে জরুরি যৌথসভা করে আওয়ামী লীগ। দলের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরা এ বৈঠকে অংশ নেন। এতে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পূর্ব নির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে ১২ বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত সার্চ কমিটির সদস্যরা। পৌনে দুই ঘণ্টার বৈঠকে বিশিষ্ট নাগরিকরা ইসি গঠনে তাদের মতামত তুলে ধরেন। বৈঠক শেষে কয়েকজন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন।
বৈঠক থেকে বের হয়ে এসে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা বলেন, আমরা সার্চ কমিটিকে পরামর্শ দিয়েছি যাতে দলনিরপেক্ষ এবং যোগ্য ব্যক্তির নাম তারা প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, দলনিরপেক্ষ বলতে অতীতে কোনো রাজনৈতিক দল বা ছাত্র সংগঠন এমনকি কোনো পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন- এমন কাউকে কমিশনে নেয়া ঠিক হবে না। এছাড়া এমন লোককে নিয়োগ দিতে হবে, যিনি কমিশনের জন্য যোগ্য। এমনভাবে কমিশন গঠন করতে হবে যাতে প্রথমদিক থেকেই তা বিশ্বাসযোগ্য হয়। জনগণ আস্থা রাখতে পারে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অভিজ্ঞ ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে ইসি গঠনের কথা আমরা বলেছি। একই সঙ্গে গ্রহণযোগ্য ইসি গঠনে আইন করার প্রস্তাব আমরা করেছি। আর ইসি গঠনে আইন করা দরকার। এ বিষয়ে আজ (গতকাল) হাইকোর্ট একটি রুলও জারি করেছেন। আর আইনের মাধ্যমে ইসি গঠন করলে বিতর্কটা অন্তত এড়ানো যেত।
সার্চ কমিটির সঙ্গে বৈঠকে আপনারা আশ্বস্ত হতে পেরেছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আশ্বস্ত হতে পেরেছি কিনা এটি বলা দুরূহ। বৈঠকে বদিউল একটি লিখিত প্রস্তাবনাও সার্চ কমিটিকে দিয়েছেন। নিরপেক্ষ ব্যক্তি সন্ধান করতে প্রয়োজনে আরো সময় নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমাদের ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনা আমরা ব্যক্ত করেছি। কী পদ্ধতিতে একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ইসি গঠন হতে পারে সেটিও উল্লেখ করেছি। ওনারা (সার্চ কমিটি) আরো বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে এ বিষয়ে মতবিনিময়ের জন্য বসবেন। এখন বাকিটা তাদের (সার্চ কমিটি) বিষয়।
সার্চ কমিটির সঙ্গে ‘ভালো’ আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বল এখন ওনাদের (সার্চ কমিটি) কোর্টে। তিনি বলেন, মূলকথা হলো আমরা আমাদের বক্তব্য পেশ করেছি। এখন ওনারা একটি গ্রহণযোগ্য ইসি গঠন করুক, যাদের ওপর মানুষের আস্থা থাকবে। তবে, আমরা কোনো নাম প্রস্তাব করিনি।
অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, ইসি নিয়ে অনেক সমস্যা রয়েছে। এটি আমরা আলোচনায় উল্লেখ করেছি। এজন্য আইনের মাধ্যমে ইসি গঠনের কথা বলেছি। তিনি বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের মাধ্যমে ইসি গঠন সম্ভব কিনা সে বিষয়ে সার্চ কমিটি প্রশ্ন তুলেছে। তবে, আমরা বলেছি তা সম্ভব হবে। সময় কোনো বাধা নয়। অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, ইসিতে নিরপেক্ষ ব্যক্তি মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো তা মানবে কিনা সেটি বলা যায় না। মানবাধিকার নেত্রী সুলতানা কামাল বলেন, ইসিতে কারা থাকবেন কারা থাকবেন না এটি সার্চ কমিটির বিষয়। তাদের খুঁজে বের করার দায়িত্বও ওই কমিটির। আমরা আমাদের মতামত ব্যক্ত করেছি। ইসিতে এমন ব্যক্তিদের দেখতে চাই, যারা একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারে। এটি একটি বিরাট দায়িত্ব।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন বলেন, এমন ইসি গঠনের কথা বলেছি, যাতে প্রথম দৃষ্টিতে মানুষের আস্থা তৈরি হয়। এমন ইসি গঠন করতে হবে যে, শক্তভাবে আইনের প্রয়োগ করতে পারে।
ইসি গঠনে আরো ৫ বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে মতবিনিময় করবে সার্চ কমিটি। গতকাল ১২ বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে একথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম। সাংবাদিকদের তিনি জানান, সমকাল সম্পাদক সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার, দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ, সাবেক নির্বাচন কমিশনার আবু হেনা ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রোকনউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে আগামীকাল সুপ্রিমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জে মতবিনিময় করবে সার্চ কমিটি। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোকে আজ বেলা ১১টার মধ্যে পাঁচটি করে নাম দিতে সার্চ কমিটি যে আহ্বান জানিয়েছিল তার সময় বাড়িয়ে বিকাল ৩টা করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
কোনো নাম জমা পড়েনি: এদিকে গতকাল পর্যন্ত সার্চ কমিটির ডাকে সাড়া দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনে গতকাল পর্যন্ত কোনো দল নাম জমা দেয়নি। সন্ধ্যা পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য জানা গেছে। তবে আজ সব রাজনৈতিক দল তাদের নামের তালিকা জমা দেবে। এরই মধ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি, রব) এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সার্চ কমিটির কাছে কোনো নাম জমা দেবে না বলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিয়েছে। এর আগে গত শনিবার সংলাপে অংশ নেয়া নিবন্ধিত ৩১ রাজনৈতিক দলের কাছে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য নাম চেয়ে চিঠি দেয় সার্চ কমিটি। সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্তের পরপরই এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ওই চিঠিতে নিবন্ধিত প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কাছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার মনোনয়নের লক্ষ্যে সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্তসহ অনধিক পাঁচটি নাম ৩১শে জানুয়ারির এর মধ্যে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়।
নাম দেবে আওয়ামীলীগঃ নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সার্চ কমিটিতে নাম দেবে আওয়ামী লীগ। সোমবার রাতে গণভবনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে পাঁচ জনের নামের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। মঙ্গলবার এ পাঁচ জনের নাম জমা দেয়া হবে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে দলের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন যেভাবে হয়েছে, আগামী দিনের নির্বাচনগুলোও সেভাবে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, আমরা চাই জনগণ ভোট দেবে। তারা নিজেদের প্রতিনিধি নিজেরাই ঠিক করবে। এটা তাদের এখতিয়ার। আমাদের লক্ষ্য অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করি। মানুষ শান্তি চায়, না অশান্তি বেগমের অশান্তি চায়, সে সিদ্ধান্ত জনগণই নেবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না।
বিএনপি ও শরিকদের তালিকায় থাকবে কিছু অভিন্ন নাম: সার্চ কমিটির আহ্বানে সাড়া দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনে নাম প্রস্তাবের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দল। বিরোধী জোটের শরিকদলগুলোর মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন ইস্যুতে সাতটি দল আমন্ত্রণ পেয়েছিল প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সংলাপে।
দলগুলো হচ্ছে- এলডিপি, বিজেপি, খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ ন্যাপ, মুসলিম লীগ ও জমিয়তে উলামা-ই-ইসলাম। আমন্ত্রণ পাওয়া সাতটি দলের প্রতিটিই কিছু নাম অভিন্ন রেখে আলাদাভাবে সার্চ কমিটির কাছে জমা দেবে তাদের প্রস্তাবিত নামের তালিকা। সার্চ কমিটির কাছে জমা দেয়ার আগেই শরিকদলগুলো গতরাতে তাদের প্রস্তাবিত নামের তালিকার একটি কপি বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে দিয়েছেন। শরিকদলের নামগুলো পর্যালোচনা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে নিজেদের তালিকা তৈরি করবে বিএনপি। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সার্চ কমিটির পক্ষে দেওয়া চিঠিতে সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্তসহ অনূর্ধ্ব ৫ জনের নাম প্রস্তাব করার নির্দেশনা দেওয়া হলেও কৌশলগত কারণে বিরোধী জোটের দলগুলোর পক্ষ থেকে অতিরিক্ত নাম প্রস্তাব করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রথম ৫ জনকে অগ্রাধিকার দিয়ে আরো কয়েকজনের নাম তালিকায় সংযুক্ত করা হতে পারে।
আজ সার্চ কমিটির কাছে প্রস্তাবিত নামের তালিকা হস্তান্তর করা হবে। বিএনপি ও জোটের শরিকদলের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা এসব তথ্য জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের প্রস্তাবনায় যেসব ব্যক্তির নাম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে তারা হলেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক ক্যাবিনেট সচিব আলী ইমাম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস সিরাজুল ইসলাম, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এস এম ফায়েজ, ব্যারিস্টার শাহদিন মালিক, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সৈয়দ মারগুব মোর্শেদ, ব্যারিস্টার রফিক উল হক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী, নির্বাচন কমিশনের সাবেক কর্মকর্তা জেসমিন টুলি প্রমুখ। এ ছাড়া তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও সশস্ত্র বাহিনীর কয়েকজন সাবেক সিনিয়র কর্মকর্তার নাম থাকবে।
নির্বাচন কমিশন গঠনে গঠিত সার্চ কমিটির ব্যাপারে প্রকাশ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের শরিকদলগুলো। কিন্তু ইসি গঠনে সার্চ কমিটির তরফে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নাম চাওয়ার পর সার্বিক বিষয়টি নতুন করে বিবেচনা করে বিএনপি। সার্চ কমিটির এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে রোববার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। সেখানে সার্চ কমিটির কাছে নাম প্রস্তাবের ব্যাপারে বেশির ভাগ নেতা ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করার পর বৈঠকটি মুলতবি করা হয়। তারই প্রেক্ষিতে গতকাল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় জোটের মহাসচিবদের বৈঠক। সে বৈঠকেও সার্চ কমিটির কাছে নাম প্রস্তাবের ব্যাপারে শরিক দলের মহাসচিবরা ঐকম্যত হন। সূত্র জানায়, মহাসচিবদের বৈঠকে সার্চ কমিটির কাছে নাম দেয়ার ব্যাপারে কয়েকটি দলের তরফে নেতিবাচক মনোভাবও প্রকাশ করা হয়। তারা যুক্তি দেখিয়ে বলেন, নাম দিলেও ২০ দলীয় জোটের পছন্দের কেউই নির্বাচন কমিশনার হিসেবে থাকার সম্ভাবনা অনিশ্চিত। ফলে নাম প্রস্তাবের যৌক্তিকতা নেই। এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নাম প্রস্তাবের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন কমিশন সংস্কার নিয়ে কথা বলেছেন এবং একটি প্রস্তাবনাও দিয়েছেন। সুতরাং নামের মূল্যায়ন না থাকলেও দিতে হবে। সেক্ষেত্রে বিএনপির অভিযোগের একটি জায়গা থাকবে, যা নাম না দিলে থাকবে না। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি প্রকাশ করেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ। তিনি বলেন, সার্চ কমিটির কাছে নাম পাঠানোর ব্যাপারে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি। আমরা নাম পাঠাচ্ছি। কার কী নাম কখন কীভাবে যাবে, তার সিদ্ধান্ত হবে আজকে (সোমবার) রাতে। জোটের শরিক বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, বিএনপি জোট ইতিবাচক রাজনীতিতে থাকতে চায়। জোটের মহাসচিবদের বৈঠকে অনুসন্ধান কমিটিকে নাম দেয়ার বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন। এর আগে জোটের মহাসচিবদের বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, জামায়াতে ইসলামীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, খেলাফত মজলিসের আহমেদ আবদুল কাদের, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, লেবার পার্টির হামদুল্লাহ আল মেহেদি, বিজেপির সালাহউদ্দিন মতিন সউদ, ইসলামী ঐক্যজোটের আবদুল করীম খান, কল্যাণ পার্টির এম এম আমিনুর রহমান, এনপিপির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, জমিয়তে উলামা-ই-ইসলামের মাওলানা মহিউদ্দিন একরাম, জাগপার খন্দকার আসাদুর রহমান খান, ইসলামিক পার্টির আবুল কাশেম, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, এনডিপির মঞ্জুর হোসেন ঈসা উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রোববার রাতে বিএনপি স্থায়ী কমিটির বৈঠক মুলতবি করে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সংলাপে আমন্ত্রণ পাওয়া জোটের অন্য ৬টি শরিকদলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। সেখানেই দলগুলোকে সার্চ কমিটিতে নাম দেওয়ার বিষয়ে বিএনপির ইতিবাচক সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে তাদের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলা হয়।
গতকাল মহাসচিবদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় শরিকদলগুলো দ্রুত তালিকা প্রণয়ন করে সন্ধ্যা নাগাদ তা বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে জমা দেবেন। সে অনুযায়ী গতরাতেই শরিকদলগুলো তাদের প্রস্তাবিত নামের তালিকাটি বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে জমা দিয়েছে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, রোববার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাঁদের বলেছেন, কেউ নাম প্রস্তাব করতে চাইলে তা যেন আলাদাভাবে খালেদা জিয়ার কাছে দেয়া হয়। পরে সেখান থেকে নাম চূড়ান্ত করবেন তিনি। সে অনুযায়ী স্থায়ী কমিটির সদস্যরা চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে পৃথকভাবে তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের নাম দেন। এদিকে দলের নীতিনির্ধারক ও সংলাপে আমন্ত্রণ পাওয়া ছয়টি শরিকদলের নেতাদের সঙ্গে গতরাতে নিজের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করেছেন খালেদা জিয়া। বৈঠকে এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম, বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি, বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, মুসলিম লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান খান, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমেদ আবদুল কাদের ও জমিয়ত-ই-ইসলামের মুফতি ওয়াক্কাস অংশ নেন। পরে জোটের ও দলের নীতিনির্ধারক ফোরামের সদস্যদের প্রস্তাবিত নামের তালিকা পর্যালোচনা করে স্থায়ী কমিটির মুলতবি বৈঠকে নিজেদের তালিকাটি চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। তবে সে তালিকায় কাদের নাম রয়েছে তা কোনো পক্ষ থেকেই প্রকাশ করা হয়নি।