আয়না২৪ প্রতিনিধি
মৃত মানুষকে জীবিত করা যায় এমন বিশ্বাসে বঙ্গোপসাগরে দুই জেলেকে পানিতে চুবিয়ে হত্যার অপরাধে দায়ের করা মামলায় বরগুনায় দুই ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই মামলায় অপর ১২ জনকে যাবজ্জীবন এবং একজনকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার দুপুরে বরগুনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. আবু তাহের এ আদেশ দেন। বরগুনার অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি আক্তারুজ্জামান বাহাদুর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন বরগুনা সদর উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের ডেমা-গুলিশাখালী গ্রামের মো. বাবুল মাঝি (৪৫) ও একই গ্রামের মো. রুস্তুম আলী হাওলাদার (৫০)।
এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ জন হলেন একই গ্রামের ফজলু হাওলাদার, আবদুল খালেক, মনিরুল ইসলাম, আবদুর রহিম, বাবুল, কুটি মিয়া, বাদল, আবু হানিফ, আবুল বাশার, রিয়াজ গাজী, খোকন ও সেন্টু মিয়া। আর সাত বছরের দন্ডপ্রাপ্ত আসামী হলেন, বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার ভন্ড পীর হাবিবুর রহমান জমাদ্দার। রায় শোনার পর আদালত প্রাঙ্গনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন দন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের স্বজনরা। রায় ঘোষনার সময় আসামিরা সবাই আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ানি বরগুনা সদর উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের গুলিশাখালী গ্রাম থেকে একটি ট্রলারে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যান ১৬ জেলে। এরপর ট্রলারে অবস্থানরত কথিত পীর হাবিবুর রহমান জমাদ্দারের মাধ্যমে মৃত মানুষকে জীবিত করা যায় এ বিশ্বাসে অন্য আসামিদের সহযোগিতায় আয়নাল (২৪) ও ফারুক (৪০) নামের দুই জেলেকে প্রথমে মারধর করে পরে পানিতে চুবিয়ে হত্যা করে বাবুল মাঝি ও রুস্তুম আলী হাওলাদার। এরপর দুই জেলের লাশ নিয়ে সাতদিন বঙ্গোপসাগরে অবস্থানের পর তাঁরা বরগুনায় এসে দুই জেলে জলদস্যুদের হামরায় নিহত হয়েছে এই অভিযোগ এনে বরগুনা থানায় একটি ডাকাতি মামলা করে। কিন্তু নিহত দুই জেলের পরিবারের সদস্যদের এতে সন্দেহ হলে নিহত আয়নালের বড় ভাই জয়নাল বাদী হয়ে ২০১০ সালের ৬ মার্চ বরগুনা সদর থানায় ১৫ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ বাবুল মাঝি ও রুস্তুমকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা স্বীকার করে।
এ বিষয়ে মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও আক্তারুজ্জামান বাহাদুর বলেন, সাক্ষি-প্রমানের মাধ্যমে এ মামলার রায় প্রদান করা হয়েছে। উচ্চ আদালতেও এ রায় বহাল থাকবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী জিয়া উদ্দিন বলেন, আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। কারণ এই মামলায় প্রত্যক্ষদর্শী কোনো সাক্ষি ছিল না। অনুমানের ভিত্তিতে এই দণ্ড দেওয়া হয়েছে। আমরা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবো।