আয়না ২৪ ডেস্ক
নিষিদ্ধ নির্যাতন কৌশল ওয়াটারবোর্ডিং ফিরিয়ে আনার যে কথা আগেই বলেছিলেন তার পক্ষেই ফের সাফাই গেয়ে সন্ত্রাস দমনে কঠোর অবস্থান জানান দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি বলেন, তথ্য আদায়ের জন্য বন্দিদের জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে ওয়াটারবোর্ডিং (কাপড় দিয়ে মুখ বেঁধে পানি ঢেলে নির্যাতন) ব্যবস্থা কার্যকর একটি প্রক্রিয়া বলেই তিনি বিশ্বাস করেন। ‘আগুনের সঙ্গে আগুন দিয়েই লড়তে হবে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, যখন মধ্যপ্রাচ্যের চরমপন্থি দলগুলো লোকজনের শিরশ্ছেদ করছে তখন ন্যায্য-অন্যায্য নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ কম। “আমরা সমান সুযোগের মাঠে খেলছি না।”
প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেসম মাটিস এবং সিআইএ পরিচালক মাইক পম্পিও’র সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন জানিয়ে তিনি বলেন, “যদি তারা সেগুলো করতে না চান, তবে ঠিক আছে।”
সন্দেহভাজন হিসেবে আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওয়াটারবোর্ডিং পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী এক ধরনের নির্যাতন হিসেবেই বিবেচিত হয়। এ পদ্ধতিতে বন্দিকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় পানিতে ডুবে মৃত্যুভয় দেখানো হয়।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাটিস এবং সিআইএ পরিচালক পম্পিও দুজনই নির্যাতনের এ পদ্ধতি পুনরায় ফিরিয়ে আনতে রাজি না থাকারই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সাবেক সিআইএ পরিচালক লিও পানেত্তাও বিবিসি’কে বলেছেন, “নির্যাতনে ওয়াটারবোর্ডিং পদ্ধতি ফিরিয়ে আনা মারাত্মক ভুল হবে।”
ট্রাম্প বলেন , তিনি দেশকে নিরাপদে রাখতে চান।
প্রশ্ন করে তিনি বলেন, “যখন তারা গুলি চালাচ্ছে, যখন তারা আমাদের এবং অন্যান্য দেশের নাগরিকদের মাথা ধড় থেকে আলাদা করে ফেলছে, যখন তারা মধ্যপ্রাচ্যের অনেক বাসিন্দার শিরশ্ছেদ করছে শুধুমাত্র তারা খ্রিস্টান বলে। আইএসআইএস (আইএস) যা করছে, মধ্যযুগের পর এমন ধরনের নির্যাতনের কথা কেউ শোনেনি পর্যন্ত। তাহলে ওয়াটারবোর্ডিংয়ের মত পদ্ধতি থাকুক এমন কি আমার বোধ হবে না?”
“আমি গোয়েন্দা বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করেছি ‘এটা কি কাজে আসবে? নির্যাতন কি কার্যকর হয়?’ এবং তাদের উত্তর ছিল ‘হ্যাঁ, নিশ্চয়ই’।
নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, নির্বাচিত হলে তিনি হয়ত মার্কিন সেনাদের ওয়াটারবোর্ডিং পদ্ধতি আবারও ব্যবহার করার আদেশ দেবেন এবং সন্ত্রাস দমনে এর চেয়েও কঠোর পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।
২০০১ সালে নাইন-ইলেভেন হামলার পর সিআইএ জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওয়াটারবোর্ডিং এর ব্যবহার শুরু করে।
একটি সিনেট কমিটি পরে জিজ্ঞাসাবাদের এই পদ্ধতি ফলপ্রসু না বলে রায় দেয়। তারপরও সাবেক কয়েকজন সিআইএ গোয়েন্দা কর্মকর্তা এ পদ্ধতি কার্যকর বলে মত দেন।
কিন্তু পদ্ধতিটি অবৈধ হওয়ায় ২০০৯ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসন জিজ্ঞাসাবাদে ওয়াটারবোর্ডিং ব্যবহার নিষিদ্ধ করে।
আর গত বছর শেষদিকে নির্যাতন বিরোধী আইনের সংশোধনীতে এ নিষেধাজ্ঞা আইনে পরিণত হয়।
আর্মি ফিল্ড ম্যানুয়ালেও বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদের সময় কোনও ধরনের ‘নিষ্ঠুর, অমানবিক এবং অমর্যাদাকর’ পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে না।
যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওই ম্যানুয়াল সংশোধন করার ক্ষমতা রাখেন।
তবে নির্যাতন বিরোধী ওই আইনের পূর্বশর্ত অনুযায়ী, নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এ আইন ‘অকার্যকর করা বা বল প্রয়োগের হুমকি’ দেওয়া যাবে না।