সুনামগঞ্জ শহরে সুরমা নদীর তীর ঘেঁষে হাসন রাজার বাড়ি। এই বাড়িতেই হাসন রাজা জন্মেছেন ১৮৫৪ সালে। এই বাড়িতেই রচিত হয়েছে অসামান্য সব গান। বাড়িটার কাছে পৌঁছাতে মনে হয়, এই বুঝি দেখা মিলবে সাধক সেই গীতিকার, গায়কের। তা তো আর হয় না। কিন্তু হাসন রাজার স্মৃতি জেগে থাকে তাঁর নামে নামাঙ্কিত জাদুঘরে। জাদুঘরের প্রবেশপথে প্রথমেই লালনের একটি ছবি। তারপর হাসন রাজার ছবি। জাদুঘরে হাসন রাজার একটি মাত্র আলোকচিত্র। কলকাতার একটি স্টুডিও থেকে সংগ্রহ করা ১৯৬২ সালে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শিল্পীর আঁকা আট-নয়টি ছবি আছে। তবে ছবি নয়, জাদুঘরটিকে জীবন্ত করে রেখেছে হাসন রাজার স্মৃতিবিজড়িত নানা জিনিসপত্র।
১৯৬২ সালের ডিসেম্বরে এই বাড়িতে ‘হাসন ফকিরের মেলা’ বলে একটি মেলা আয়োজন করা হয়েছিল। তখন থেকেই হাসন রাজার বাড়ি ও তাঁর ব্যবহূত সামগ্রী দেখতে মানুষ ভিড় করত। এরপর ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু ‘হাসন একাডেমি’র জন্য ২৫ হাজার টাকা অনুদান দেন। আর এই সবকিছুর ধারাবাহিকতায়ই আজকের জাদুঘর।
কি আছে জাদুঘরেঃ
টেবিল-চেয়ার – এই চেয়ারে বসে হাসন রাজা গান রচনা করতেন বলে শোনা যায়।
রঙিন আলখাল্লা – এমনিতে হাসন সাদাসিধে পোশাকই পরতেন। লোকে বলে, তিনি সব সময় সাদা ধুতি লুঙ্গির মতো করে পরতেন। সঙ্গে সাদা গেঞ্জির ওপর চাদরের মতো করে আরেকটি ধুতি গায়ে জড়িয়ে রাখতেন। তবে অন্য কোনো রাজা বা ইংরেজ সাহেবদের সঙ্গে দেখা করার সময় বিশেষ পোশাক হিসেবে এই আলখাল্লাটি পরতেন।
পানি পরিশোধন পাত্র – ছোট জগের মতো দেখতে এই ফিল্টারটি হাসন পেয়েছিলেন তাঁর এক নায়েবের কাছ থেকে। উইলিয়াম লিটল নামে এই ইংরেজ নায়েব ১৯০২ সালে অস্ট্রিয়া থেকে এটি এনে উপহার দিয়েছিলেন।
তলোয়ার – হাসন রাজার পারিবারিক তলোয়ার ছিল এটি। পুরুষানুক্রমে তাঁর হাতে এসেছিল তলোয়ারটি।
মাটির হাঁড়ি – জনশ্রুতি আছে, এই হাঁড়িতে পয়সা ভরে হাসন রাজা শিশুদের মধ্যে তা ছিটিয়ে দিতেন। এই জনশ্রুতির পক্ষেই কথা বললেন নব্বই-ঊর্ধ্ব মকবুল হোসেন, যিনি শিশুকালে হাসন রাজাকে দেখেছেন। এমনকি হাসন রাজার ছিটানো পয়সাও কুড়িয়েছেন।
উপরের জিনিসগুলো ছাড়াও জাদুঘরে দেখতে পাবেন হাসন রাজার চায়ের টেবিল, দুধ খাওয়ার পাত্র, বাটি, দুধ দোহনের পাত্র, পানদানি, হাসন রাজার ব্যবহূত কাঠের খড়ম, শেষ বয়সে ব্যবহূত লাঠি, মোমদানি, পিতলের পানির কলস, নিজের হাতে লেখা গানের কপি। আছে কিছু বাদ্যযন্ত্রও—ঢোল, করতাল, মন্দিরা ইত্যাদি। জমিদারির কাজে ব্যবহূত ক্যাশবাক্সটিও রয়েছে।
কিভাবে যাওয়া যায়ঃ
প্রথমে আপনাকে যেতে হবে সুনামগঞ্জ জেলা শহরে। ঢাকা থেকে সড়ক পথে সুনামগঞ্জ যাওয়া যায়। সায়দাবাদ থেকে শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, এনা পরিবহন, মামুন পরিবহনের নন এসি বাস যায় সুনামগঞ্জ। ভাড়া এসি ৫শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকা। সুনামগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে সাহেববাজার ঘাট পর্যন্ত রিকশায়। সাহেব বাড়ির ঘাটের পাশেই হাসন রাজার জাদুঘর দেখতে পাবেন।
কোথায় থাকবেনঃ
সুনামগঞ্জে ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০ টাকার মধ্যে থাকার জন্যে হোটেল (Hotel) ভাড়া পাবেন।
হোটেল নূর-পূর্ববাজার স্টেশন রোড সুনামগঞ্জ
হোটেল সারপিনিয়া-জগন্নাথবাড়ী রোড, সুনামগঞ্জ।
হোটেল নূরানী, পুরাতন বাস স্ট্যান্ড , সুনামগঞ্জ।
হোটেল মিজান, পূর্ব বাজার-সুনামগঞ্জ।
হোটেল প্যালেস, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, স্টেশন রোড
সুরমা ভ্যালী আবাসিক রিসোর্ট