প্রেসিডেন্ট বিরোধী মিছিল ওয়াশিংটনে জনসমুদ্র

জানুয়ারি ২৩, ২০১৭
Spread the love

হোয়াইট হাউসের নতুন প্রেসসচিব শন স্পাইসার পোডিয়াম ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই একটা তুমুল শোরগোল উঠল। হল্লাটা তুললেন সাংবাদিকেরা। যাঁদের সামনে শনিবারই প্রথম বার বিবৃতি দিতে এলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখপাত্র। এবং সটান তাঁদের একাংশকে ‘মিথ্যেবাদী’ বলে গেলেন। তার পর ওই হইচইয়ের মধ্যে শোনা গেল এক মহিলা সাংবাদিকের গলা, ‘‘শন, আমরা কিন্তু মিছিল করব!’’

শন তবুও কিছুটা রেখেঢেকে লিখিত বিবৃতি পড়েছেন। খানিক আগে তাঁর ‘বস্’ সে সবের ধার ধারেননি। শনিবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে অফিসে তাঁর প্রথম দিনেই গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র সদর দফতরে গিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘‘পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি মিথ্যে কথা বলেন সাংবাদিকরা।’’ নয়া মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিযোগ, ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছে সংবাদমাধ্যম।

তারা বলে বেড়াচ্ছে, দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে তাঁর চাপান-উতোর চলছে। সব চেয়ে বড় কথা, তাঁর শপথ অনুষ্ঠানে অন্যান্য বারের চেয়ে অনেক কম ভিড় হয়েছে বলে প্রচার করছে সংবাদমাধ্যম। ফাঁকা মাঠের ছবি সহযোগে তা প্রমাণের চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে তারা। অথচ এর আগে কোনও প্রেসিডেন্টের শপথে এত ভিড় (ট্রাম্পের মতে, ১৫ লাখ) হয়নি বলে হোয়াইট হাউসের দাবি।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম এখন ট্রাম্পের তির ট্রাম্পকেই ফিরিয়ে প্রমাণ করতে চাইছে, মিথ্যেটা আসলে বলছেন প্রেসিডেন্ট। একটি সংবাদপত্র লিখেছে, ‘শনিবার আমেরিকার রাস্তায় রাস্তায় যে মিছিলগুলো বেরিয়েছে, তার ভিড়ের কাছে ট্রাম্পের শপথের ভিড় নস্যি!’ ওয়াশিংটন থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস, শিকাগো থেকে নিউ ইয়র্ক, ডেনভার থেকে আটলান্টা— শনিবার শহরের পর শহর ভেসে গিয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়ে।

খাতায়-কলমে ‘মহিলাদের মিছিল’ হলেও যে জনস্রোতকে ট্রাম্প-বিরোধীদের ‘পাল্টা-শপথ উৎসব’ বলছে সংবাদমাধ্যম। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে গিয়েছে এই বিক্ষোভ। লন্ডন, প্যারিস, স্টকহলম-সহ ইউরোপের নানা দেশে, আফ্রিকায়, লাতিন আমেরিকায় মিছিল বেরিয়েছে। আন্টার্কটিকায় জাহাজের বুকেও দেখা গিয়েছে ট্রাম্প-বিরোধী প্ল্যাকার্ড।

শুরুর দিন থেকে প্রতিবাদের এমন বেনজির ঝড়ের মুখে পড়ে রবিবার কিঞ্চিৎ নরম হওয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন ট্রাম্প। টুইট করে বলেছেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ আমাদের গণতন্ত্রের প্রতীক। একমত যদি না-ও হই, আমি বিশ্বাস করি, মানুষের মতামত জানানোর অধিকার

আছে।’’

আমজনতায় এমন আড়াআড়ি বিভাজনের আশঙ্কা অবশ্য অনেকেই করেছিলেন। কিন্তু কূটনীতিকদের আরও বেশি ভাবাচ্ছে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে ট্রাম্পের চাপান-উতোর। নয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট অফিসে ঢোকার দিনেই তিনি সংবাদমাধ্যমকে এবং সংবাদমাধ্যম তাঁকে ‘মিথ্যুক’ বলছে— এমন নজির স্মরণকালে নেই। সাংবাদিকরা অবশ্য ট্রাম্পকে খোলা চিঠিতে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তাঁরা কী লিখবেন সেটা হোয়াইট হাউস ঠিক করে দেবে না। কিন্তু তার পরেও মিটমাটের পথে যাননি ট্রাম্প।

উল্টে হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ রেইন্স প্রিবাস একটি চ্যানেলকে বলেছেন, ‘‘প্রেসিডেন্টকে টেনে নামানোর এই চেষ্টাটা আমরা বসে বসে দেখব না! প্রত্যেক দিন জবাব দেব।’’ মিডিয়াকে হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্পের প্রেসসচিবও। বলেছেন, ‘‘আপনারা প্রেসিডেন্টকে কাঠগড়ায় তুললে আমরাও আপনাদের কাঠগড়ায় তুলব।’’ এলইডি স্ক্রিনে একাধিক ছবি দেখিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি দাবি করেন, এই প্রথম বার প্রেসিডেন্টের শপথে ঘাসের ওপর সাদা চাদর ঢাকা দেওয়া হয়েছিল। তাই ফাঁকা জায়গাগুলো বেশি বলে মনে হয়েছে। নিরাপত্তার কড়াকড়িতেও অনেকের ঢুকতে সমস্যা হয়েছে। ২০১৩-য় ওবামার শপথের চেয়ে বেশি লোক ট্রাম্পের শপথের দিনে মেট্রোয় চড়েছেন বলে তাঁর দাবি।

হোয়াইট হাউস সূত্রের খবর, একটি খবরের কাগজ পাশাপাশি দু’টি ছবি টুইট করে দাবি করেছিল, ট্রাম্পের শপথের চেয়ে বেশি ভিড় হয়েছিল বারাক ওবামার শপথে। তা নিয়ে এমনিতেই খাপ্পা ছিলেন নতুন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প শনিবার সকালেই তাঁর উপদেষ্টাদের জানিয়ে দেন, তিনি সংবাদমাধ্যমের ‘অসততা’র জবাব দেবেন। উপদেষ্টারা বলেন, প্রথম দিনটায় বরং নিজের কাজগুলো মন দিয়ে করুন তিনি। পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে স্পষ্ট, সে উপদেশ শোনেননি ট্রাম্প।

মহিলাদের অধিকার খর্ব করার চেষ্টা, কুরুচিকর মন্তব্য ও অশালীন আচরণের জেরে নিন্দা কুড়োচ্ছিলেনই ট্রাম্প। শনিবার মহিলাদের মিছিলের ডাক দেওয়া হলেও সঙ্গে সংখ্যালঘুদের অধিকার-সহ কিছু বিষয়ও জুড়ে দিয়েছিলেন আয়োজকরা। রাস্তা ছেয়ে গিয়েছিল প্রতীকী গোলাপি টুপিতে। মিছিলের সমর্থনে টুইট করেছেন পরাজিত প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন। ম্যাডোনা-সহ বেশ কিছু সেলিব্রিটি মুখ দেখা গিয়েছে বিক্ষোভে। টুইটারে সমর্থন জানিয়েছেন অধুনা ‘কোয়ান্টিকো’ খ্যাত প্রিয়ঙ্কা চোপড়াও।

তবে একটা খটকা আছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের। টুইটারে তিনি জানতে চেয়েছেন, ‘‘বিক্ষোভ তো দেখছি। এই তো সবে একটা নির্বাচন হল। এঁরা ভোট দিলেন না কেন?’’ ট্রাম্প কি তবে মেনেই নিচ্ছেন, এঁরা সবাই ভোট দিলে হেরে যেতেন তিনি?